shono
Advertisement
Santiniketan

শতবর্ষ পেরিয়ে প্রয়াত বৌদ্ধ পণ্ডিত সুনীতিকুমার পাঠক, শোকস্তব্ধ শান্তিনিকেতন

বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত, তিব্বতী, চিনা, মঙ্গোলিয়া - নটি ভাষাতেই তিনি সমান সাবলীল ছিলেন।
Published By: Sucheta SenguptaPosted: 07:25 PM Dec 05, 2024Updated: 07:28 PM Dec 05, 2024

দেব গোস্বামী, বোলপুর: শতবর্ষ পেরিয়ে প্রয়াত হলেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত বৌদ্ধ পণ্ডিত সুনীতিকুমার পাঠক। তিনি বিশ্বভারতীর প্রবীণ আশ্রমিক ছিলেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ১০১ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন আজীবন বৌদ্ধ শাস্ত্রে মগ্ন থাকা সুনীতিকুমার পাঠক। কিন্তু তাতে থেমে ছিল না চর্চা। বুধবার রাতে শান্তিনিকেতনের অবনপল্লির বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বৌদ্ধ পণ্ডিতের প্রয়াণে শোকের ছায়া শান্তিনিকেতনের সংস্কৃতি মহলে।

Advertisement

১৯২৪ সালের ১ মে পশ্চিম মেদিনীপুর মলিঘাট গ্রামে তাঁর জন্ম। মাত্র দুবছর বয়সে মাকে হারান সুনীতি। এর পর মামার বাড়িতে বড় হয়ে ওঠা। প্রথমে সংস্কৃত কলেজ ও পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন সুনীতিকুমার। ছাত্রবৃত্তি পেয়ে তিব্বতি ভাষাশিক্ষায় মনোনিবেশ করেছিলেন। জীবন শুরু মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলের অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে। এর পর ১৯৫৪ সালে ২০৫ টাকা বেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পুঁথি বিভাগে যোগদান করেন সুনীতিকুমার পাঠক। তাঁর বৌদ্ধ দার্শনিক হিসেবে খ্যাতি জগৎজোড়া। মৃত্যুর দিন পর্যন্তও তাঁর বাসভবনে তিব্বতের সাহিত্য, ভাষা, ধর্ম, ও সংস্কৃতি নিয়ে নিরলস গবেষণা করেছেন অধ্যাপক। দেশে এবং বিদেশে বৌদ্ধবিদ্যা চর্চায় পরিচিত এবং শ্রদ্ধেয় একটি নাম।

শুধু বৌদ্ধবিদ্যাচর্চায় নয়, প্রাচীন ভারতের বহু সাধনালব্ধ বহু শতাব্দীর যে অতীত জ্ঞান, তা তাঁর করতলে আমলকীবৎ। ভারতের রাষ্ট্রপতি পুরস্কার-সহ বহু সম্মানে তিনি ভূষিত হয়েছেন। মহাবোধি সোসাইটি তাঁকে ভাণক এবং মঞ্জুশ্রী সম্মানে সম্মানিত করেছে। এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে তিনি পেয়েছেন এস. সি. চক্রবর্তী স্বর্ণ পদক। ২০১৮ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন দেশিকোত্তম। দুশোর বেশি প্রবন্ধ ছাড়াও বহু গভীর দৃষ্টিসম্পন্ন নিবন্ধের রচয়িতা তিনি। বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত, তিব্বতী, চিনা, মঙ্গোলিয়া - নয় ভাষাতেই তিনি সমান সাবলীল ছিলেন। তাঁর প্রয়াণে ভাষাচর্চা ক্ষেত্রে শূন্যতা সৃষ্টি হল।

মৃত্যু সংবাদ পাওয়া মাত্রই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শান্তিনিকেতনের বাসভবনে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিনয় কুমার সোরেন, জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ, আশ্রমিক কল্পিকা মুখোপাধ্যায়, কিশোর ভট্টাচার্য, ভ্রমর ভাণ্ডারী, নুরুল হক-সহ অগণিত পড়ুয়া ও অন্যান্যরা। বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিনয় কুমার সোরেন জানান, "গবেষণার সুবাদে তাঁর সংগ্রহে ছিল প্রাচীন তালপাতার পুঁথির ভাণ্ডার। যা ভাষাচর্চার জগতে অমূল্য সম্পদ। তাঁর চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি শুধু শান্তিনিকেতনে নয় সারা বিশ্বের কাছে।"

সভাধিপতি কাজল শেখের বক্তব্য, "হিমালয়ের দুর্গম এলাকা-সহ দেশ, বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় পায়ে হেঁটে ঘুরে তিনি সংগ্রহ করেছিলেন একাধিক মূল্যবান পুঁথি৷ তাঁর মত ব্যক্তিত্ব বিরল। আগামী দিনে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গবেষণার মধ্যে দিয়েই তাকে স্মরণ করবেন।" তাঁর কথা শুনে শুনে যিনি লিখে যেতেন রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম। তিনি বলেন, "দীর্ঘ দশ বছর ধরে নিজে আর লিখতে পারতেন না। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত উনি বলে যেতেন, আমি লিখতাম৷ ওঁর মতো পণ্ডিত ব্যক্তি আমি আর দেখিনি। আমরা সকলেই ভারাক্রান্ত।" এদিন সন্ধ্যায় কংকালীতলা শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ১০১ বছরে প্রয়াত বৌদ্ধ পণ্ডিত সুনীতিকুমার পাঠক, শোকস্তব্ধ শান্তিনিকেতন।
  • বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত, তিব্বতী, চিনা, মঙ্গোলিয়া - নটি ভাষাতেই তিনি সমান সাবলীল ছিলেন।
Advertisement