সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। কিলিয়ান এমবাপের ক্ষেত্রে এ হেন বাংলা প্রবাদ বড়ই প্রযোজ্য। কেন? মাস ছ’য়েক আগের কথা। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা-সহ লাতিন আমেরিকার দলগুলি সম্পর্কে বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন ফরাসি তারকা। বলেন, “আমরা ইউরোপীয়রা সবসময় কঠিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলে অভ্যস্ত। এখানের ফুটবল অনেক উন্নত। তাই বিশ্বকাপে আসার সময় আমরা তৈরিই থাকি। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা সেভাবে প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকে না, তাই ওরা আমাদের থেকে পিছিয়েই থাকে।” মে মাসে করা এমবাপের (kylian mbappé) এই মন্তব্যই ফাইনালের আগে তাতিয়ে দিয়েছে আর্জেন্টিনা ও তাদের সমর্থকদের। মেসি (Messi), লটারো থেকে শুরু করে মেনোত্তি। বর্তমান হোন বা প্রাক্তন প্রত্যেক আর্জেন্টাইন ফুটবলারই ফোঁস করে উঠেছেন এমবাপের বিরুদ্ধে। বাদ যাননি সমর্থকরাও। তৈরি হয়েছে এমবাপে বিরোধী বিশেষ গানও।
সেদিন ঠিক কী বলেছিলেন এমবাপে? পিএসজির সঙ্গে চুক্তি বাড়ানোর পর সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “ইতিহাস দেখুন। গত কুড়ি বছর বিশ্বকাপে (FIFA World Cup) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শুধু ইউরোপ। কারণ ক্লাবের হয়ে তো বটেই, আন্তর্জাতিক স্তরেও আমরা সারা বছর কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলি। সেই কারণেই আমরা এগিয়ে থাকি। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সেই লড়াইটা লড়ে কোথায়?” বিতর্কিত মন্তব্য যেহেতু তাঁর ক্লাবের সতীর্থের, তাই কিছুটা ব্যালান্স করার চেষ্টা করেছেন মেসি (Leo Messi)। বলেছেন, “ও কী বলেছে, কেন বলেছে, কোন প্রেক্ষিতে বলেছে, তা জানি না।” যদিও বললেন, “আমার স্প্যানিশ বন্ধুদের সঙ্গে যখন ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার ফুটবল নিয়ে আলোচনা হত, তখন বলত যে, ওদের যদি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে খেলতে হত, তবে বিশ্বকাপের ছাড়পত্র পেতে বেশ বেগ পেতে হত।” অধিনায়কের মতো তাঁর ‘পিএসজি (PSG) কানেকশন’ না থাকায় অবশ্য এমবাপেকে একহাত নিতে ছাড়েননি লটারো। বলেন, “ও যা বলেছে, তার কোনও সারবত্তা নেই।” ১৯৭৮-এর বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য সিজার লুই মেনোত্তি চাঁচাছোলা আক্রমণ করেছেন ফরাসি মহাতারকাকে। বলেন, “মনে রাখা উচিত, ইউরোপকে আমরা যেমন সমৃদ্ধ করেছি, আবার বড় মঞ্চে উড়িয়েও দিয়েছি।’’
[আরও পড়ুন: মাত্র ১৫ রানে অলআউট সিডনি থান্ডার! হঠাৎই নেটদুনিয়ায় ট্রেন্ডিং কোহলির আরসিবি]
এমবাপে বিতর্কের মধ্যেই ফ্রান্স শিবিরে নতুন বিতর্ক করিম বেঞ্জেমাকে নিয়ে। দেশের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ (Emmanuel Macron) চাইছেন ফাইনালে মাঠে নামুন করিম বেঞ্জেমা (Karim Benzema)। কিন্তু তীব্র আপত্তি কোচ দেশঁর। বেঞ্জেমাকে নাকি তিনি দোহার ধারেকাছে দেখতে চান না। আর কোচের এই আচরণে ক্ষেপে লাল মহাতারকা। ঠিকই করে ফেলেছেন, ফাইনাল খেলতে বললেও তিনি যাবেন না। আজ বাদে কাল লিওনেল মেসিদের বিরুদ্ধে হাই-ভোল্টেজ বিশ্বকাপ ফাইনাল। তার আগে চলতি বছরের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকাকে নিয়ে প্রবল জলঘোলা শুরু ফরাসি শিবিরে। যা শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবার বারবেলা থেকে। কয়েক ঘণ্টা আগে ক্লাব দল রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে লেগানসের বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচে খেলতে দেখা গিয়েছে বেঞ্জেমাকে। মাঠে ছিলেন ৩০ মিনিট। সম্পূর্ণ ফিট দেখিয়েছে ফরাসি তারকাকে। এরপরই মেসিদের বিরুদ্ধে রবিবারে মহারণে তাঁর মাঠে নামা নিয়ে জল্পনা ছড়ায়। বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে যা নিয়ে প্রশ্নও করা হয়েছিল ফরাসি কোচ দেশঁকে। প্রশ্নটা এড়িয়ে দেশঁ বলেছিলেন, “পরের প্রশ্নটা করুন।” ধোঁয়াশা বাড়িয়ে ফরাসি কোচ বেঞ্জেমা প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেও চর্চার আগুনে ঘি ঢেলেছেন খোদ দেশের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ। জাতীয় দলের সেমিফাইনাল ম্যাচের আগেই যিনি এমবাপেদের সমর্থন জানাতে চলে গিয়েছেন কাতারে (Qatar World Cup)। তিনি চাইছেন ফাইনালে সুস্থ হয়ে ওঠা বেঞ্জেমাকে মাঠে নামানো হোক। শুধু বেঞ্জেমা নন, ম্যাক্রোঁর ইচ্ছা, রবিবার স্টেডিয়ামে থাকুন পোগবা-কন্তেদের মতো চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়া অন্য ফুটবলাররাও। রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রোঁ যে ব্যক্তিগতভাবে বেঞ্জেমাকে ফাইনাল ম্যাচে দেশের জার্সিতে মাঠে দেখতে চাইছেন, সে কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন ফ্রান্সের ক্রীড়ামন্ত্রী অ্যামেলিউ দেয়া ক্যাস্তেরা। তিনি বলেছেন, “আমি জানি যে উনি মনেপ্রাণে এমনটাই চাইছেন। বিষয়টা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেখা যাক, এটা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয় কিনা!”
[আরও পড়ুন: বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে বড় ধাক্কা ফরাসি শিবিরে, ‘ক্যামেল ভাইরাসে’ আক্রান্ত কোচ-ফুটবলাররা!]
আইনত অবশ্য রবিবার ফাইনালে বেঞ্জেমার মাঠে নামতে কোনও অসুবিধা নেই। কারণ, চোট সারাতে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেও পরিবর্তে অন্য কোনও ফুটবলারকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি টিমে। সেক্ষেত্রে বেঞ্জেমা এখনও ২৬ জন ফরাসি স্কোয়াডের একজন সদস্য। তাই ফ্রান্স (France) ফাইনাল জিতলে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের স্বর্ণপদক ঝুলবে তাঁরও গলায়। কিন্তু বেঞ্জেমার সমস্যাটা কোচ দেশঁর সঙ্গে। কাতারে প্রথম ম্যাচের আগে ১৯ নভেম্বর অনুশীলনে চোট পাওয়ার পর তাঁকে সোজা শিবির থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন দেশঁ। এবং সেটা রিয়াল মাদ্রিদ (Real Madrid) তারকার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই। জানা যাচ্ছে, বেঞ্জেমার চোটের প্রকৃতি দেখে সেই রাতেই দেশঁ তাঁকে নির্বিকার মুখে বলে দেন, “করিম, বলতে খুব খারাপ লাগছে ঠিকই, কিন্তু তোমাকে বাড়ি চলে যেতেই হবে।” কোচের এভাবে জোর করে শিবির থেকে তাড়িয়ে দেওয়ায় রীতিমতো ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন বেঞ্জেমা। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি নাকি বলেছেন, কোচ ভালভাবেই জানতেন যে চোটটা আহামরি নয়। সপ্তাহখানেকেই সেরে যাবে। তারপরও এটা ইচ্ছে করে করলেন। এরপরই তাঁর কাতার না যাওয়া নিয়ে মনস্থির করে ফেলেছেন চলতি মরশুমে ইউরোপের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হওয়া বেঞ্জেমা।
ফাইনালের আগে এই অশান্তির খবর শুনেই স্বাভাবিকভাবেই চিন্তায় ‘লে ব্লু’ সমর্থকরা। তাঁদের ভয়, কোন্দলের জেরে তীরে এসে তরী না ডোবে আবার! তাঁদের ভরসা, ফুটবলপ্রেমী প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর হাতযশ। ক’দিন আগে পিএসজি ছেড়ে রিয়ালে সই করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলেছিলেন এমবাপে। কিন্তু শেষ মূহুর্তে মাঠে নেমে এমবাপের রিয়াল-যাত্রা দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। ফরাসি জনতা বলছে, এমবাপে যদি ম্যানেজ হয়, বেঞ্জেমাকে ফেরানোও তবে সম্ভব!