ইন্দ্রনীল শুক্লা: কিছুদিন আগেই ইন্ডাস্ট্রিতে ১৭ বছর পূর্ণ করেছেন দেব (Actor Dev)। সে কথা নিজেই ঘোষণা করে তিনি টুইট করেন, ‘ইন্ডাস্ট্রিতে ১৭ বছর পূর্ণ করলাম। অভিনেতা হয়ে নিজের আগামী ছবির ঘোষণা করছি ‘ব্যোমকেশ দুর্গ রহস্য’, আপনাদের সকলের আশীর্বাদ কাম্য।’ লক্ষণীয়, ব্যোমকেশ বক্সী সংক্রান্ত দেবের এই ঘোষণা ঘিরেই কিছুদিন ধরে তুমুল আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে বাংলা ছবির দর্শকদের মধ্যে। আলোচনায় মানুষ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছেন বললেও ভুল বলা হয় না।
একাংশ মনে করছে, দিব্যি তো ‘পাগলু’, ‘চ্যালেঞ্জ’ ধারার ছবি চলছিল। ফর্মুলা ছবি হিটের মুখ দেখছিল পর পর। খামোখা অন্য ধারায় দেবের ঢোকার দরকারটা কী ছিল! দর্শকদের অন্য একটা অংশ কিন্তু ‘গোলন্দাজ’, ‘প্রজাপতি’-র মতো ভিন্ন অবতারের দেবের হয়ে সওয়াল করছেন। তাঁদের মতে, অন্য রকম স্ক্রিপ্ট আর গল্পে চমৎকার লাগছে দেবকে। তাছাড়া দক্ষিণের কিংবা মুম্বইয়ের সুপারস্টাররাও এখন রিয়্যালিস্টিক ছবির দিকে সরে এসেছেন এবং সাফল্যও পেয়েছেন। সুতরাং দেব সঠিক রাস্তাতেই আছেন।
অতএব, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সৃষ্ট বাঙালির প্রিয় গোয়েন্দা চরিত্রকে নিয়ে যে দেব বড় পর্দায় আসছেন, তা আলোচনার খোরাক জোগাচ্ছে যথেষ্ট। কেবলমাত্র অভিনেতা হিসাবেই তো নয়, এই ছবির প্রযোজনার দায়িত্বেও থাকবেন দেব। দেবের প্রোডাকশন হাউস দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চার্স এবং শ্যাডো ফিল্মসের যৌথ উদ্যোগে বীরসা দাশগুপ্তের পরিচালনায় তৈরি হতে চলেছে ‘ব্যোমকেশ দুর্গ রহস্য’। বছর কয়েক হল প্রযোজক হিসাবে অভিষেক হয়েছে দেবের। ‘চ্যাম্প’ ‘কবীর’, ‘কিশমিশ’, ‘টনিক’, ‘প্রজাপতি’-র মতো ছবি দিয়েছেন দর্শকদের। চলছে ‘বাঘাযতীন’-এর শুটিং। তারই মধ্যে ‘ব্যোমকেশ’ নতুন উন্মাদনা তৈরি করেছে দেব অনুরাগীদের মধ্যে।
এদিকে দেব ব্যোমকেশ হওয়ায় বিতর্ক-ও তৈরি হচ্ছে। দেবকে কটাক্ষ করে কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, “খুশবন্ত সিং-এর জোক: দুই পাঞ্জাবি দাবা খেলছে। আর বাঙালির জোক : দেব ব্যোমকেশ।” আর এই নিয়ে সমাজ মাধ্যমে শোরগোল শুরু হয়। রাহুলের এই পোস্টের পর প্রযোজক রানা সরকার নাম না নিয়েই রাহুলকে তীব্র কটাক্ষ করেন। তাছাড়া সিনেমা, সিরিয়াল, OTT-তে ব্যোমকেশের ছড়াছড়ি।
[আরও পড়ুন: এবার ডনের ভূমিকায় সৌরভ, দাদার মুখে ‘মোনা ডার্লিং’ শুনে শোরগোল নেটদুনিয়ায়]
ব্যোমকেশ হিসাবে বাঙালি দর্শক সেই উত্তমকুমার থেকে শুরু করে আবির চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, সুজয় ঘোষ, অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে দেখেছে। হিন্দিতে সুশান্ত সিং রাজপুত ‘ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ’ হয়েছেন। হিন্দি ধারাবাহিকে পাওয়া গিয়েছে রজিত কাপুরকে। তালিকায় এবার যুক্ত হল দীপক অধিকারীর নাম। ব্যোমকেশ কাহিনি সিনেমায় পরিচালনার ক্ষেত্রেও পাওয়া গিয়েছে সত্যজিৎ রায় থেকে শুরু করে অঞ্জন দত্ত, অরিন্দম শীল, দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখকে।
ব্যোমকেশ হওয়া কি সব স্টারেরই লক্ষ্য? জানতে চাওয়ায় তিনটি ব্যোমকেশ-ছবির পরিচালক অরিন্দম শীল বলছেন, “একজন পরিচালকের যেমন স্বপ্ন থাকে ফেলুদা করব, ব্যোমকেশ করব, শার্লক করব, তেমনই প্রত্যেক অভিনেতারও একই স্বপ্ন থাকে। স্বপ্ন দেখায় তো বাধা নেই। করতে পারাটাই আসল। তবে আমার মতে, বাংলা ভাষায় তৈরি ছবিতে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ব্যোমকেশ আবির চট্টোপাধ্যায়।”
ফর্মুলা ছবির জনপ্রিয় মুখকে ব্যোমকেশের সঙ্গে কেমন করে মেলানোর ভাবনা এল সে প্রসঙ্গে ছবির পরিচালক বীরসা দাশগুপ্ত বলছেন, “দেবের স্ক্রিন প্রেজেন্স এবং পপুলারিটি ব্যোমকেশে কাজ করবে বলে আমার মনে হয়। ও যখন পর্দায় এসে দাঁড়ায়, সেই প্রেজেন্সটা সাংঘাতিক ভাল, আমার মনে হয়েছে সেই প্রেজেন্সটা ব্যবহার করা যেতে পারে।” দেবের ইমেজ ব্যোমকেশের সঙ্গে খাপ খায় কি না সে প্রসঙ্গে অরিন্দমের বক্তব্য, “দেবের তো একটা লার্জার দ্যান লাইফ ইমেজ আছে। আর দুর্গ রহস্য কিন্তু ব্যোমকেশের সব থেকে লার্জার দ্যান লাইফ গল্প। তবে এটা আমি দেবকেও বলেছি যে দেবকে ব্যোমকেশ হতে হবে। সেটাই হল চ্যালেঞ্জ। আর দেব যদি ব্যোমকেশ হতে পারে তবে তা হবে এক বিরাট সাফল্য ওর এবং ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে।”
বীরসার ব্যাখ্যা, “ব্যোমকেশ তো অনেকেই করেছেন। রজিত কাপুরও দুর্গ রহস্য করেছেন। এমন তো কোথাও লেখা নেই যে কোনও একজন বা দু’জনই কেবলমাত্র এই চরিত্র করতে পারবে। শরদিন্দু কোনও স্কেচও করে যাননি যে ব্যোমকেশকে কেমন দেখতে ছিল! দেব যদি ‘চাঁদের পাহাড়’ কিংবা ‘গোলন্দাজ’-এর চরিত্রটি হতে পারে, তাহলে ব্যোমকেশই বা নয় কেন! দেব কেমন করে রোলটা পোর্ট্রে করে তার উপর সব নির্ভর করবে।” অরিন্দম বলছেন, “দেবের দর্শক তো প্রজাপতি-কে গ্রহণ করেছে। এবার দেব ব্যোমকেশ করুক এবং দেবের দর্শক সেটা গ্রহণ করে দেখাক তারা দেবকে কতটা ভালবাসে।” মোটের উপর দেব যে চ্যালেঞ্জের মুখে তাতে কোনও সন্দেহ নেই!