shono
Advertisement

প্রিয় গন্ধে ফিরে আসতে পারে পেশির হারানো ক্ষমতা

অবিশ্বাস্য লাগছে! পড়ে দেখুন প্রতিবেদনটি...
Posted: 09:25 AM Feb 12, 2017Updated: 04:06 AM Feb 12, 2017

অভিরূপ দাস: গন্ধ খুঁজে দেয় অপরাধী৷ গন্ধেই কাটতে পারে শরীরের জড়তা৷ তেমন গন্ধে পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষও হয়ে উঠতে পারে স্বাভাবিক৷ ২০১৩ সালে সেরিব্রাল স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন যোধপুর পার্কের বাসিন্দা অশীতিপর কমলা রায়চৌধুরি৷ পরের দিনগুলো আর পাঁচটা রোগীর মতোই৷ চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে স্থবির হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। স্ট্রোকে প্রাণে বেঁচে গেলেও চিকিৎসা পরবর্তী শুশ্রূষা নিয়ে চিকিৎসকরা ছকবাঁধা নিদান দিয়েছিলেন। সেরিব্রাল স্ট্রোকের ধাক্কায় ততদিনে তিনি হাঁটাচলার ক্ষমতা হারিয়েছেন৷ মুখ খুলতে পারেন না৷ কথা বলা তো দূর, শত চেষ্টা করে সামান্য কিছু খেতে দিলে তাও মুখের মধ্যে ঢোকানো যায় না৷ নলের মাধ্যমেই চলত খাওয়ানো৷

Advertisement

ছেলে উৎপল রায়চৌধুরি জানিয়েছেন, কতটা কঠিন ছিল সে দিনগুলো৷ “মা মুখ খুলতে পারত না৷ নাকে-মুখে নল ঢোকানো থাকত৷ কোনও ফিজিওথেরাপিতেই সাড়া দিচ্ছিল না৷” এদিকে ডাক্তাররা বলে দিয়েছিলেন শরীরে প্রোটিনের অভাব রয়েছে৷ যা পূরণ করতে নিয়মিত দুধ খেতে হবে। নলের মাধ্যমে দুধ খাওয়াতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হত৷ উৎপলবাবুর কথায়, “ওই চারমাসে বাইশবার নল বদলাতে হয়েছিল মায়ের৷ অনেকসময় নলের খোঁচায় রক্ত বেরিয়ে আসত৷”

কমলাদেবীর ছেলে উৎপল রায়চৌধুরি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড বায়োকেমিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক৷ সে সময় ইতালিতে অ্যারোমা থেরাপি নিয়ে একটি সম্মেলনের আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন তিনি৷ তাঁর কথায়, “কাজের চাপে ওই সম্মেলনে যোগ দিতে পারিনি৷ কিন্তু ই-মেল এ পাঠানো ওদের আলোচনার পেপারগুলোই মুশকিল আসান হয়ে দেখা দিল৷”

‘গন্ধ-চিকিৎসা’৷উৎপলবাবুর দাবি, “অ্যারোমা নিয়ে ভারতের চিকিৎসাবিজ্ঞানে তেমন কাজ হচ্ছে না৷ পড়াশোনা করে দেখলাম বিদেশে তা বেশ গ্রহণযোগ্য৷” শরীরের যে সমস্ত পেশি ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, প্রিয় গন্ধের সাহায্যে তা ফিরে পেতে পারে পুরনো ক্ষমতা৷ ভাললাগার গন্ধে পেরিফেরাল নিউরোনগুলি ফের একটু একটু করে চাঙ্গা হতে শুরু করে৷  বিষয় যতটা সহজ শুনতে কাজে করাটা অত সহজ ছিল না। উৎপলবাবুর কথায়, “ আমের গন্ধ পছন্দ করত মা৷ চামচে করে ‘ম্যাঙ্গো পাল্প’ নিয়ে দীর্ঘদিন মায়ের মুখের সামনে বসে থাকতে শুরু করলাম৷”

রেল অবরোধে বিপর্যস্ত শিয়ালদহ মেন শাখার ট্রেন চলাচল

ম্যাঙ্গো পাল্প কমলাদেবীর মুখের সামনে আনতেই সামান্য বদল দেখা গেল৷ আস্তে আস্তে সামান্য মুখ নড়তে শুরু করল৷ ব্রেনের মোটর কর্টেক্সে ভাল লাগার গন্ধের বার্তা যাচ্ছিল  ধীরে ধীরে৷ মুখ সামান্য নড়তেই শুরু হল নিয়মিত চোয়ালের দু’পাশে মাসাজ করা৷ লড়াইটা কঠিন ছিল কিন্তু অসম্ভব নয়৷ শরীরে সমস্ত পেশি স্থবির হয়ে পড়েছিল৷ নিজের হাতে করে জল গড়িয়ে খাওয়ারও যাঁর সামর্থ্য ছিল না৷ আজ তিনিই ছানার কেক খান তারিয়ে তারিয়ে৷ আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশনের কাছে চিঠি লিখতে চান উৎপলবাবু৷ সাতাশির কমলাদেবীর চাঙ্গা হওয়ার গল্প সকলকে জানাতে চান তিনি৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement