সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: লণ্ঠনের আলোয় কতবার যে একসঙ্গে বৈঠক করেছেন। একই ডেরায় ঘুটঘুটে অন্ধকারে রাত কাটিয়েছেন বহুবার। দেখা হোক বা না হোক চিঠিতে যোগাযোগ রেখেছেন বরাবর। আজ, ১২ বছর পর জঙ্গলমহলে তাঁরই অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। তাই শহিদ কমরেড কিষাণজির স্মরণে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ নামে ৫ কবিতা লিখেছেন ধৃত মাওবাদী নেতা (Maoist Leader) সব্যসাচী গোস্বামী। কাঞ্চন কুমার সম্পাদিত ‘যুদ্ধে ছিলে স্বপ্নে আছো’ তাঁর কবিতা (Poem)সংকলন এখন তদন্তকারীদের হাতে। যা দেখে দুঁদে পুলিশ কর্তারাও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন! সংবেদনশীল গেরিলা যোদ্ধার মননে এমন কবি-প্রাবন্ধিকের চেহারায় হতবাক পুলিশ।
“হাত অবশ,পা অবশ/অবরুদ্ধ মন/ ঝড়ের আগে থমকে থাকা/ অশান্ত শালবন।বুড়িশোলের জঙ্গলের/রক্তে ভেজা ঘাস/তোমায় ছুঁয়ে লিখতে চাইছে/নতুন ইতিহাস…।” ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’র প্রথম কবিতা নাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ কর্তাদের। কবিতার পংক্তিতেই কি আগামীর রণকৌশল? শুক্রবার সন্ধের পর থেকে টানা জেরায় সব্যসাচী গোস্বামীর কাছে এই প্রশ্নের জবাবই চাইছে পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মাওবাদী পুস্তিকা, চিঠিপত্র রীতিমতো হাতে নিয়ে জেরায় বসেছে পুলিশ (Police)।
[আরও পড়ুন: সন্দেশখালিতে শুরু ধরপাকড়, ইডির উপর হামলার ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ২]
মাওবাদী নেতার তৃতীয় কবিতায় যে লেখা, “মিটিংয়ে বা স্টাডি ক্লাসে অমনযোগী হলে/ ধরে ফেলত তোমার সতর্ক চোখ/ রাতপাহারায় গেরিলার চোখের ক্লান্তি/উপলব্ধি করত তোমার সতর্ক চোখ।রাতঘুমের, শীতে চাদরের গরম ওম্ সারা গায়ে জড়িয়ে দিত তোমার সতর্ক চোখ। দারুণ মন খারাপে, পিঠে মাথায় হাত/বুলিয়ে দিত তোমার সতর্ক চোখ। আগামীকালটা কেমন যাবে/ দেখতে পারত তোমার সতর্ক চোখ।রাজনৈতিক প্রবন্ধের অসতর্ক ভুল/ধরিয়ে দিত তোমার সতর্ক চোখ।বিপ্লবী শিবিরের ভিতর মাথা তোলা দক্ষিণপন্থী ঝোঁকের/বিরুদ্ধে জাগ্রত তোমার সতর্ক চোখ।প্রতি মুহুর্তের পদস্খলনে, সাহায্যের হাত/বাড়িয়ে দিত তোমার সতর্ক চোখ।তোমার সতর্ক চোখ, সদা জাগ্রত/কোন বুলেটের সাধ্য নেই তাকে বুজে দেওয়ার…কোনও দিন…।”
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সামলে এবার পাহাড়ে ভাগ্যপরীক্ষা, দার্জিলিংয়ের পদ্মপ্রার্থী শ্রিংলা?]
শেষ নয় এখানেই। পঞ্চম তথা শেষ কবিতায় শেষের দিকে লাইন, “শহিদ তোমার নিথর শরীর ছুঁয়ে/সক্রিয় হোক্ মেহনতি জনতার/ প্রতিরোধের নতুন অভিঘাত।” নতুন অভিঘাত কি? তবে তদন্তকারীদের প্রশ্নে কিছুতেই ভাঙতে চাইছেন না মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেঙ্গল ইনচার্জ সব্যসাচী ওরফে কিশোর। তাই সাফল্য মিললেও উদ্বেগ পিছু ছাড়ছে না পুলিশ কর্তাদের। যেভাবে এনআইএ-র নজর এড়াতেই ভাঙাচোরা সংগঠনেই জঙ্গলমহলে সশস্ত্র স্কোয়াড গড়ার নীল নকশা সাজান। তাই গেরিলা নেতার কবি মন বোঝাই এখন চ্যালেঞ্জ পুলিশ থেকে তদন্তকারী সংস্থার।