স্টাফ রিপোর্টার: দিলীপ ঘোষকেই ফের বঙ্গ বিজেপির সভাপতি হিসাবে চাইছে আরএসএস। ‘ঘরের ছেলে’ দিলীপের নামই দিল্লির নেতাদের কাছে প্রথম পছন্দ হিসাবে সুপারিশ করেছে সংঘ। বিজেপি সূত্রে এমনই খবর। আর এই নতুন সমীকরণের ইঙ্গিতই কি মিলছে বঙ্গের গেরুয়া শিবিরে। কারণ, বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই দিলীপকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপি পরিষদীয় দল। এই বিধানসভায় মাসকয়েক আগে গিয়েও কাউকে পাননি দিলীপ। ছিলেন না বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
দেখা যায়নি বিজেপি বিধায়কদেরও। সেই ছবিই আমূল বদলে গেল বৃহস্পতিবার। জন্মদিনে বিধানসভায় পা রাখতেই উৎসবের সংবর্ধনা দিলীপ ঘোষকে। দিলীপ বিধানসভার বাইরে পৌঁছেছেন খবর পেয়েই বিরোধী দলনেতা নিজে গাড়ি বারান্দায় গিয়ে তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানান সব বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে। ঘরে নিয়ে গিয়ে মিষ্টিমুখ করান, গায়ে চড়িয়ে দেন উত্তরীয়। প্রায় গলাগলি ছবি তোলা থেকে হাসিমুখে গল্প, শেষে দীর্ঘক্ষণ একান্তে দুজনে বসে নানা আলোচনা। আবার বিকেলে সল্টলেকে বিজেপি দপ্তরে দিলীপকে মিষ্টিমুখ করিয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতারা। ফলে এই ছবি জন্ম দিয়েছে রাজ্য বিজেপিতে নতুন সমীকরণের।
তবে কি দিলীপ সত্যিই বড় কোনও পদ অলংকৃত করতে চলেছেন? আর তার ইঙ্গিত পেয়েই কি দিলীপের সঙ্গে সমস্ত খারাপ সম্পর্কে ইতি টানলেন শুভেন্দু? গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, আরএসএসের তরফে দিলীপ ঘোষের নামই পরবর্তী রাজ্য সভাপতি হিসাবে প্রথম পছন্দ হিসাবে গিয়েছে দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। অঘটন না ঘটলে পরবর্তী সভাপতির তালিকায় ১ নম্বরে রয়েছেন মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদই। দুনম্বর নাম রাজ্যসভার সাংসদ তথা দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। এই নতুন সমীকরণের জল্পনার মধ্যেই শুক্রবার বিধানসভায় বিজেপির পরিষদীয় দলের ঘরে দেখা গেল রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী।
[আরও পড়ুন: বিয়ে নিয়ে পড়াশোনা! বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি দেবে চিন, তুঙ্গে বিতর্ক]
দলের বিধায়কদের সঙ্গে কোনও বৈঠক থাকলে সাধারণত সেটা অন্য কোথাও হয়। কিন্তু বিরোধী দলনেতা, বিধায়কদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে নিজেই বিধানসভায় এসেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন), এমন উদাহরণ সাধারণত নেই। পরিষদীয় দল সূত্রে খবর, রাজ্যে পার্টি ও পরিষদীয় দল বা দলের বিধায়কদের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব যথেষ্ট রয়েছে। শুভেন্দুর নেতৃত্বে পরিষদীয় দল তার নিজের মতো চলে, অন্যদিকে বিজেপি পার্টি তার মতো চলে। সমন্বয়ের অভাব নিয়ে অভিযোগ পালটা অভিযোগ বারে বারে উঠে এসেছে। তা কাটাতেই অমিতাভ বিধানসভায় এসে আলাদা করে শুভেন্দু ও অন্যান্য বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলেন বলে খবর।
যদিও অন্য একটি অংশ আবার প্রথমদিন দিলীপ ও পরদিন অমিতাভ চক্রবর্তীর আসার মধ্যেও একটা যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছে। এক, দিল্লির নির্দেশে, দলের মধ্যে একতার একটা ছবি তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে। কারণ, যেভাবে একাধিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বঙ্গ বিজেপি, তাতে যথেষ্ট বিরক্ত দিল্লি। দুই, দিলীপ বঙ্গ বিজেপির বড় পদে আসতে পারেন। সেই মতো ইঙ্গিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এসেছে শুভেন্দুর কাছেও। ফলে পুরনো ছবি বদলানোর চেষ্টা চলছে। তিন, লোকসভা ভোটের খারাপ ফলাফল নিয়ে দিল্লির নেতৃত্বের কাছে চাপে শুভেন্দু। তাঁকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, সকলকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। তাই দলে তাঁর বিরোধী শিবিরের লোক বলে পরিচিত দিলীপ, অমিতাভদের সঙ্গে সম্পর্ক শুভেন্দুর ভালো সেটাই দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে।
এদিকে, শুভেন্দু বিজেপিতে আসার পর থেকেই নানা বিষয়ে দ্বিমত হয়েছে দিলীপের সঙ্গে। শেষে গত লোকসভা ভোটে দিলীপকে মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে দুর্গাপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেন শুভেন্দুই। ফলে তিক্ত সম্পর্ক তৈরি হয় দুজনের। একটি সূত্রে দাবি, মেদিনীপুর আসন থেকে উপনির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিলীপকে ফের জিতিয়ে বিধানসভায় আনতে পারে বিজেপি। দিলীপকে সফলতম রাজ্য সভাপতি বলা যায়। অন্যদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ‘ম্যানেজ’করে রাজ্য সভাপতির পদ পাওয়ার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন বলে খবর।