পাকিস্তান: ২৫২-৭ (রিজওয়ান ৮৬*, শফিক ৫২, ইফতিকার ৪৭, মথিশা পাথিরানা ৩-৬৫)
শ্রীলঙ্কা: ২৫২ -৮ (কুশল মেন্ডিস ৯১, চারিথা আশালঙ্কা ৪৯*, সমরব্রিক্রমা ৪৮)
শ্রীলঙ্কা ২ উইকেটে জয়ী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহম্মদ রিজওয়ান (Mohammad Rizwan) ও ইফতিকার আহমেদের (Iftikar Ahmed) লড়াই দেখার পর মনে হচ্ছিল, তাহলে শেষ পর্যন্ত চলতি এশিয়া কাপে (Asia Cup 2023) ফের একবার ভারত -পাকিস্তান (IND vs PAK) মহারণ হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। গ্রুপ পর্ব, সুপার ফোরের পর এবার মেগা ফাইনালেও তাহলে ‘মাদার অফ অল ব্যাটল’! কিন্তু রিজওয়ানের লড়াকু ব্যাটিংয়ে জল ঢেলে দিলেন কুশল মেন্ডিস (Kushal Mendis) ও সাদিরা সমরব্রিক্রমা (Sadeera Samarawickrama)। বাইশ গজে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রান চেজ করতে গিয়ে শাহিন শাহ আফ্রিদি (Shaheen Shah Afridi)-শাদাব খানদের (Shadab Khan) বুঝে নিলেন দুই লঙ্কান ব্যাটার। ফলে বাবর আজমকে (Babar Azam) দলকে …উইকেটে হারিয়ে, ফাইনালের টিকিট পেয়ে গেল শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka)। ইফতিকার বল হাতে পাক দলকে ম্যাচে ফেরালেও, শেষ হাসি হাসলেন চারিথা আশালঙ্কা ও তাঁর দল। ফলে ওভারে ৫ উইকেটে …রান তুলে ফাইনালে চলে গেল গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।
ফলে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর মেগা ফাইনালে রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) টিম ইন্ডিয়ার (Team India) প্রতিপক্ষ দাসুন শনাকার (Dasun Shanaka) দল। গত বছর এশিয়া কাপ জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। এবারও কি ঘরের মাঠে কাপ জিতবে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা? নাকি সর্বোচ্চ অষ্ঠমবার এশিয়া কাপ (Asia Cup 2023) জিতে নতুন নজির গড়বে ‘মেন ইন ব্লু’ ব্রিগেড? সেটা দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেট দুনিয়া।
২৫৩ রান চেজ করতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার শুরুটা একেবারেই ভাল হয়নি। শাদাবের দাপটে দুই ওপেনার আউট হয়ে যান। ৭৭ রানে ২ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। এরপর ক্রিজে নেমেই আগ্রাসী মেজাজে রান তুলতে থাকেন কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সমরব্রিক্রমা। মারমুখী মেজাজে তৃতীয় উইকেটে ১০০ রান যোগ করেন দু’জন। আর সেখানেই ম্যাচ ঘুরে যায়। শ্রীলঙ্কার রান যখন ১৭৭, তখন ইফতিকার ফর্মে থাকা সমরব্রিক্রমাকে আউট করেন। বলের লাইন মিস করতেই রিজওয়ান তাঁকে স্টাম্প আউট করে দেন। ফলে ৫১ বলে ৪৮ রানে আউট হন তিনি।
সমরব্রিক্রমা ফিরলেও, মেন্ডিস আগ্রাসী মেজাজেই রান চেজ করতে থাকেন। তবে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পারলেন না। কারণ এবারও বাবর আজমের মুখে হাসি ফোটান সেই ইফতিকার। শ্রীলঙ্কার রান তখন ২১০, ঠিক সেই সময় আবার ধাক্কা দিলেন ইফতিকার। তাঁর স্পিন বুঝতে না পেরে মহম্মদ হ্যারিসের হাতে লোপ্পা ক্যাচ তুলে দেন মেন্ডিস। ফলে তাঁকে ৮৭ বলে ৯১ রানে তাঁকে থামতে হয়। আউট হওয়ার আগে মারলেন ৮টি চার ও ১টি ছক্কা।
২১০ রানে ৪ উইকেট চলে যাওয়ার পর মনে হচ্ছিল পাকিস্তান কামব্যাক করবে না তো! তবে এবার আর নতুন কোনও চমক ঘটল না। টেনশন বাড়িয়ে এবার এবার ইফতিকারের শিকার দাসুন শনাকা। ফলে ২২২ রানে ৫ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে পাক দলকে খেলায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন শাহিন। তাঁর ওভারে জোড়া সাফল্য পাওয়ার পর জয়ের স্বপ্ন দেখছিল পাকিস্তান। তবে মাথানত করেননি চারিথা আশালঙ্কা। বরং প্রবল চাপে মাথা ঠান্ডা রেখে দলকে ফাইনালে তুলে দিলেন।
শ্রীলঙ্কার বোলারদের দাপটে একটা সময় মনে হচ্ছিল পাকিস্তান ২০০ রানও করতে পারবে না। তবে বৃষ্টি থামার পর ফের খেলা শুরু হতেই সব হিসেব বদলে দিলেন মহম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিকার আহমেদ। ফলে কার্যত সেমিফাইনালে ৭ উইকেটে ২৫২ রান করল পাকিস্তান। বৃষ্টির জন্য টস দেরি করে শুরু হওয়ার জন্য খেলা কমে ৪৫ ওভারের হয়েছিল। কিন্তু পাক ব্যাটিং চলার সময় ফের বৃষ্টি বাধ সাধে। ফলে ম্যাচ কমে ৪২ ওভারের হয়ে যায়।
ওপেনার ফখর জমানের রানের খরা চলছেই। ৪ রানে প্রমোদ মদুশনের বলে আউট হন তিনি। ইমাম উল হকের বদলে এই ম্যাচে সুযোগ পাওয়া আবদুল্লা শফিক ভাল খেলছিলেন। তাঁকে সঙ্গে দেন বাবর। তবে ব্যক্তিগত ২৯ রানে ভারতের বিরুদ্ধে দুরন্ত বোলিং করা দুনিথ ওয়েলালাগের ঘূর্ণি না পেরে স্টাম্প আউট হন পাক অধিনায়ক।
শফিক ভাল খেলছিলেন। এক দিনের ক্রিকেটে নিজের প্রথম অর্ধশতরান করেন তিনি। কিন্তু তার পরেই মাথিশা পাথিরানার বলে আউট হন। মহম্মদ হ্যারিস ও মহম্মদ নওয়াজও রান পাননি। ফলে মাত্র ১৩০ রানে ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান।
তবে চাপের মুখে চুপসে না গিয়ে পালটা আক্রমণ শুরু করেন রিজওয়ান ও ইফতিখার। জুটি গড়ার কাজ শুরু করেন তাঁরা। প্রথম দিকে ঝুঁকি নিচ্ছিলেন না। এক বার হাত জমে যাওয়ার পরে বড় শট খেলতে শুরু করেন।
দায়িত্ব নিয়ে খেলেন রিজওয়ান। অর্ধশতরান করেন তিনি। পাক ব্যাটারদের পরিকল্পনা ছিল, প্রতি ওভারে একটি বা দু’টি বড় শট খেলার। বাকি বলগুলিতে দৌড়ে রান নিচ্ছিলেন তাঁরা। ফলে প্রতি ওভারেই ১০-১২ করে রান উঠছিল। শেষ দিকে ফিল্ডিংয়ে কিছু ভুল করে শ্রীলঙ্কা। তার ফায়দা তোলেন দুই ব্যাটার। ৪৭ রান করে আউট হন ইফতিখার। কিন্তু তত ক্ষণে লড়াই করার মতো রান হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের। শেষ পর্যন্ত ৪২ ওভারে ৭ উইকেটে ২৫২ রান করে পাকিস্তান। রিজওয়ান ৮৬ রান করে অপরাজিত থাকেন। মথিশা পাথিরানা ৬৫ রানে ৩ উইকেট নিলেন। এবং শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা তাদের লড়াকু ব্যাটিংয়ের সৌজন্যে ফাইনালে চলে গেল। মাথানত করে মাঠ ছাড়ল বাবর আজমের পাকিস্তান।