মণিশংকর চৌধুরি, গোলাঘাট: কথায় বলে যা নেই মহাভারতে, তা নেই ভারতে। আর মহাভারতে থাকলে বাস্তবেও তা থাকতে বাধ্য। মহাভারতে ধৃতরাষ্ট্রের একশো পুত্রের উল্লেখ ছিল। আন্দাজ করা যেতেই পারে সে পরিবারের বিস্তৃতি। ভাবতে পারেন, ওসব গল্প-কাহিনিতে সম্ভব। বাস্তবে নয়। কিন্তু ওই যে, এ তো যে সে কাহিনি নয়, মহাকাব্য। অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে খবরের সন্ধানে বেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম গোলাঘাট জেলার অসম-নাগাল্যান্ড সীমান্তবর্তী পঞ্চমুখী গাঁওয়ে। আর সেখানেই জীবন্ত হয়ে উঠল মহাভারত। একটা গোটা গ্রামে বাস একটাই পরিবারের। সদস্য সংখ্যা? ওই ধরুন শ’দুয়েক হবে।
[প্রয়াত করুণানিধি, ৯৪ বছরে থামল দক্ষিণী রাজনীতির ‘তালাইভা’র জীবন]
আঁতকে ওঠার মতোই তথ্য। বর্তমান বিশ্বে যে এমন কোনও জায়গা রয়েছে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হয়নি। আমার মতোই এমন তথ্য পেয়ে হতবাক হয়েছিলেন এনআরসি পর্যবেক্ষক শৈলেশ বরামুও। এনআরসি ইস্যুতে ওই গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে তাঁরও চক্ষু চড়কগাছ। গ্রামের শ’খানেক বাড়িতে একই পরিবারের সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন। অর্থাৎ পঞ্চমুখী গ্রামের জমি জায়গা-পুকুর, ঘর-বাড়ি, প্রায় সবকিছুরই যে মালিক ওই একটি পরিবারই, তা বলাই বাহুল্য। গ্রামবাসীদের মুখের কথা প্রথমে বিশ্বাস না হওয়ায় নথিপত্রও ঘেঁটে দেখেন পর্যবেক্ষক। না, সেখানেও কোনও গরমিল নেই। একেবারে ষোলো আনা খাঁটি কথা। কিন্তু মজার বিষয় হল, জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে সকলের নাম নেই। সেসব পরের কথা। কিন্তু প্রশ্ন হল কীভাবে একটি গোটা গ্রামে সংসার বিস্তার করল একটি পরিবার?
[কাগজের টুকরোতেই মিলল পরিচয়, অবৈধ সন্তানকে বৈধতা দিল নাগরিকপঞ্জি]
তা জানতে টাইম মেশিনে বসে কয়েক প্রজন্ম আগে পাড়ি দিলাম। জানতে পারলাম পাঁচ ভাইয়ের কথা। জালালউদ্দিন, হালালউদ্দিন, হোসেন শেখ, আবদুল করিম, নবি হোসেন। এই পাঁচ ভাই ছিলেন এই গ্রামের বাসিন্দা। এরপর তাঁরা একাধিক বিয়ে করেন। ফুলে ফেঁপে ওঠে সংসার। আর এভাবেই গোটা গ্রামজুড়ে শুধু সেই পরিবারেরই বাস। পর্যবেক্ষক শৈলেশ বরামু তো বলেই দিলেন, অসম-নাগাল্যান্ড সীমান্তবর্তী জমি দখলের উদ্দেশ্যেই এভাবে সংসার বৃদ্ধি করেছিলেন তাঁরা। এমন জনবিস্ফোরণ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে এনআরসি আধিকারিকদেরও। ভারত কেন সোয়া একশো কোটির গণ্ডিও টপকে গিয়েছে, তার আদর্শ উদাহরণ এই পঞ্চমুখী গ্রাম।
The post গোটা গ্রামজুড়ে বাস একটি পরিবারেরই, হতবাক এনআরসি পর্যবেক্ষকও appeared first on Sangbad Pratidin.