সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ছেলে ‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন। নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করে উঠতে না পেরে চরম হতাশা থেকে বেছে নিয়েছিলেন মৃত্যুর পথ। অবশেষে দশ বছর পরে ‘ভারতীয়’ হলেন অশীতিপর মা। অসমের (Assam) আকলরানি নমশূদ্রকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিল শিলচরের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল।
২০০০ সাল থেকে শুরু হয়েছিল আকলরানির লড়াই। ১৯৬৫ সাল থেকেই অসমের ভোটার তালিকায় ছিল তাঁর নাম। তবু নতুন সহস্রাব্দের শুরুতেই তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী নির্ধারণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। সেই থেকেই লাগাতার তিনি চেষ্টা করে গিয়েছেন। আজ তাঁর বয়স ৮৩। শেষে এই বয়সে এসে স্বস্তি মিললেও অনতিক্রম্য শোক হয়ে থেকে গিয়েছে ছেলের আত্মহত্যা। যে মৃত্যুর কথা উঠে এসেছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণেও।
[আরও পড়ুন: তিরিশ টুকরো করা হয়েছিল জামাইবাবুকে, বদলা নিতে তিরিশটি গুলিতে দুষ্কৃতীর দাদাকে খুন]
২০০৫ সালে বাতিল হয়ে যায় আইনটি। কিন্তু প্রয়োজনীয় নথি না থাকায় অকোলরানির পক্ষে অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব হয়নি। নিজেদের ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ ছিল তাঁর ছেলেমেয়ের উপরেও। ২০১৩ সালে মেয়ে অঞ্জলি নিজেকে ভারতীয় হিসেবে প্রমাণ করতে পারলেও অর্জুন পারেননি। যদিও দাবি, তিনি সমস্ত নথিই জমা করেছিলেন। কিন্তু এরপরই ২০১২ সালে তাঁকে ‘বিদেশি’ তকমা দেয় ট্রাইব্যুনাল। এই ধাক্কায় শেষ পর্যন্ত গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন ওই যুবক। যদিও পরে তাঁকেও ভারতীয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ততদিনে তিনি সেসবের অনেক ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছেন।
এই মৃত্যুর উল্লেখ শোনা গিয়েছিল নরেন্দ্র মোদির মুখেও। সেই সময় লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এসেছিলেন তিনি। এনআরসির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলার সময় উদাহরণ হিসেবে টেনে এনেছিলেন অর্জুনের হতভাগ্য পরিণতির কথা। এরপর কেন্দ্রে সরকার বদলেছে। ২০১৯ সালে ফের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করেছেন মোদি। কিন্তু অলোকরানির আর নিজেকে ‘ভারতীয়’ প্রমাণের সুযোগ মেলেনি। যা মেলে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। শিলচর এফটি-৪-এর পক্ষ থেকে নোটিস পাঠানো হয় অলোকরানিকে। এর তিন মাসের মধ্যেই ১১ মে তাঁকে ভারতীয় হিসেবে ঘোষণা করল ফরেন ট্রাইব্যুনাল।