বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত এবং অভিষেক চৌধুরী: বঙ্গের ভোট চতুর্থীতে নজিরবিহীন হিংসার জন্য একযোগে রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসকদলের ভূমিকাকে দায়ী করল সংযুক্ত মোর্চা নেতৃত্ব। মেরুকরণের রাজনীতি উসকে দেওয়ার ফলেই ঘটেছে শীতলকুচির ঘটনা। দু’দলের শীর্ষনেতৃত্বের প্ররোচনাতেই এই ঘটনা বলে অভিযোগ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর। অন্যদিকে, প্রদেশ কংগ্রেস (Congress) সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর মতে, দু’টি শক্তি যে সংঘাতের রাজনীতি করছে, তাঁর পরিণামই প্রতি দফার ভোটে খুন এবং হিংসা। এর পাশাপাশি বাকি চার দফার ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হওয়া নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
অশান্তি ও হিংসায় গত তিন দফাকে ছাপিয়ে গেল চতুর্থ দফার নির্বাচন (WB Elections 2021)। প্রার্থী হেনস্তা, গাড়ি ভাঙচুর, অভিযোগ, পালটা অভিযোগর পাশাপাশি আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছে শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনীর গুলিতে চার-চারজনের প্রাণহানির ঘটনা। আধা সামরিক বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে দোষারোপ, পালটা দোষারোপে সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। তবে ঘটনার জন্য বাহিনী বা কমিশন নয়, তৃণমূল ও বিজেপির দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে মোর্চা নেতৃত্ব। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর বক্তব্য, চতুর্থ দফার নির্বাচনে কোচবিহারের শীতলকুচিতে কোন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তাই এই ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান তিনি। তাঁর অভিযোগ, কিছুদিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারের নামে হিংসায় প্ররোচনা দিচ্ছেন। তেমনভাবেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করার জন্য দলের কর্মীদের প্ররোচনা দিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: শীতলকুচি কাণ্ডে কোচবিহারে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের, যেতে পারবেন না মমতাও]
রাজ্যে মেরুকরণের রাজনীতিকে উসকে দিতে এই পথ নিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দল। তারা পরিস্থিতিকে কলুষিত করছে। তারই পরিণতিতে রাজ্যে হিংসার ও বিভাজনের বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ বামেদের। আধা সামরিক বাহিনীর গুলিতে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জেলায় জেলায় প্রতিবাদী কর্মসূচি হবে বলে জানান বিমান বসু। এছাড়াও প্রত্যেক দফার নির্বাচনের দিন প্রধানমন্ত্রী ভোট প্রচারে সভা করছেন। ভোটগ্রহণ চলাকালীন তাঁর ভাষণ টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে। এই কাজ নির্বাচনী আচরণবিধি ও নৈতিকতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় মনে করেন তিনি। তাঁদের দাবি, ভোটপর্ব চলাকালীন প্রধানমন্ত্রীর সভার সম্প্রচার বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিক কমিশন।
এদিকে শীতলকুচির মৃত্যুর ঘটনায় নির্ভয়ে ভোটদান ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এখনও বাংলার মাটির পরিস্থিতি বুঝতে পারছে বলে আমার মনে হয় না। তারা যতটা ফোর্স দিচ্ছে সেই ফোর্স বাংলায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার জন্য পর্যাপ্ত ও যথেষ্ট নয়। অতএব নির্বাচন কমিশন অবশ্যই ব্যর্থ।’ তারপরেই তিনি তৃণমূল ও বিজেপিকে দানব বলে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলায় সংকীর্ণ, হিংসাশ্রয়ী, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্য দায়ী তৃণমূল ও বিজেপি। এই দুই দানবের কারণে আজ বাংলায় রক্ত ঝড়ছে।’ তাই এই নির্বাচনকে তিনি সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেন। এছাড়াও রাজ্যে আট দফায় নির্বাচনের কারণে আইনশৃঙ্খলা নেই বলেও তিনি জানান।