অর্ণব আইচ: শিক্ষামূলক ভ্রমণে গিয়ে প্রকৃতির ছবি ভাল করে তুলতে চেয়েছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞানের দুই ছাত্র। পাহাড়ি ঝরনার ছবি ভাল করে তোলার জন্য তাড়াতাড়ি পাথর টপকাচ্ছিলেন স্নাতকোত্তর দুই ছাত্র। কিন্তু তাতেই ঘটল বিপদ। ওড়িশার কেওনঝড়ের পাহাড়ি ঝরনায় পা পিছলে পড়ে গিয়ে এক ছাত্র কোনওমতে পাথরে আটকে গেলেও গভীর জলে নিখোঁজ হন বাইশের তরুণ তারাশংকর সরকার।
বৃহস্পতিবার সকাল দশটা নাগাদ ঘটেছে এই দুর্ঘটনাটি। গত মঙ্গলবার দক্ষিণ কলকাতার আশুতোষ কলেজের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের জনা কুড়ি পড়ুয়া শিক্ষামূলক ভ্রমণে ওড়িশার কেওনঝড়ে যান। সঙ্গে ছিলেন বিভাগের কয়েকজন অধ্যাপক। দু’দিন ভ্রমণের পর এদিন তাঁদের ফেরার কথা। দুপুর দেড়টায় বারবিল স্টেশন থেকে ট্রেন ধরার কথা ছিল তাঁদের। পরিবারের সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষামূলক ভ্রমণের প্রজেক্টের অংশ হিসাবেই পুন্ডুল ঝরনার ছবি তুলে, তার বিবরণ নিতে সকাল দশটার মধ্যে বারবিল থেকে বের হন ওই বিভাগের পড়ুয়ারা। তাঁরা একটি ছোট বাসে ছিলেন। পিছনের গাড়িতে ছিলেন অধ্যাপকরা।
পুন্ডুলে কাজ সারার এক ঘণ্টার মধ্যে হোটেলে ফিরে মধ্যাহ্নভোজন সেরে তাঁদের স্টেশনে পৌঁছনোর কথা ছিল। হুগলির আরামবাগের বাসিন্দা তারাশঙ্কর সরকারের মামা মিঠুন নিয়োগী জানান, ঘটনার পর সহপাঠী ও অধ্যাপকরাই ফোন করে তারাশঙ্করের বাবা কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার দেবাশিস সরকারকে ঘটনাটি জানান। এর পরই ওই ছাত্রের দাদা অভিষেক তাঁর কয়েকজন বন্ধু ও আত্মীয়কে নিয়ে বারবিলের দিকে রওনা হন। ঘটনার পর সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে পরিবারের লোকেরা জানতে পারেন যে, বন্ধু নীলাব্জ তথা রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমেই এগিয়ে যান তারাশঙ্কর। তাঁরা পাহাড় বেয়ে ভাল করে ঝরনার ছবি তোলার জন্য এগিয়ে যান। তখনই তারাশংকরের ওই বন্ধু পা পিছলে ঝরনার জলে পড়ে যান। বন্ধুরা আঁতকে উঠে কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করে দেখেন, জলের মধ্যেই পাথরের খাঁজে আটকে যান ওই ছাত্রটি। কিন্তু মাথায় আঘাত লাগার ফলে অনবরত রক্ত বের হতে থাকে।
[আরও পড়ুন: বচসার জেরে রাস্তার উপরই কুপিয়ে খুন যুবক, উত্তপ্ত চিৎপুর এলাকা]
মিঠুন জানান, সহপাঠীরা ফোনে তাঁদের জানিয়েছেন যে, বন্ধুর মাথা থেকে অনবরত রক্ত বের হতে দেখে মাথা ঘুরে যায় তারাশংকরের। তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই অচেতন হয়ে যান। কিন্তু পাহাড়ের দিক থেকে এসে তাঁকে ধরার আগেই ওই ছাত্র পড়ে যান ঝরনার জলে। যে জায়গায় তিনি পড়ে যান, সেই জায়গার গভীরতা ৩০ থেকে ৪০ ফুট। জলে পড়ার পর তাঁকে দেখা যায়নি। ততক্ষণে অধ্যাপকরাও এসে পড়েন সেখানে। তাঁদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে প্রথমে কাছের একটি গ্রামের বাসিন্দারা দৌড়ে আসেন। তাঁরা মাছ ধরার জাল ফেলে ও সাঁতরেও ওই তরুণের হদিশ পাওয়ার চেষ্টা করেন। খবর যায় বারবিল থানায়। অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ আসে। নিয়ে আসা হয় ডুবুরিদের। শুরু হয় উদ্ধারকাজ।
কিন্তু নিরাপত্তার কারণে মাওবাদী এলাকায় বিকেল পাঁচটার পর পুলিশ উদ্ধারকাজ চালাতে চায়নি। তাই শুক্রবার সকাল থেকেই ফের উদ্ধারকাজ শুরু হবে। যদিও কয়েকজন সহপাঠী পড়ুয়ার মত, পিছল পাথরের উপর দাঁড়িয়ে দুই বন্ধু ছবি তোলার সময় জলে পিছলে পড়ে যান, এমনও সম্ভব। বারবিল থানার পুলিশ উদ্ধারকাজের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে এই ঘটনাটি ঘটল, তার তদন্ত করছে। এদিকে, এই ঘটনার পর শোকের ছায়া নেমে এসেছে আরামবাগের গৌরহাটি মোড়ের কাছে ব্যানার্জিপাড়ায়। ছেলে নিখোঁজের খবর পেয়ে বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন মা। পরিবারের লোকেরা ঘণ্টায় ঘণ্টায় যোগাযোগ রাখছেন বড় ছেলে অভিষেক ও তারাশংকরের সহপাঠীদের সঙ্গে।