এটিকে মোহনবাগান–৩ (নাসিরি-হ্যাটট্রিক)
এসসি ইস্টবেঙ্গল–১ (সিডোয়েল)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রথম লেগে এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan) ৩-০ গোলে মাটি ধরিয়েছিল এসসি ইস্টবঙ্গলকে (SC East Bengal)। তার পরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। শনিবার মাণ্ডবী তীরে ছিল আইএসএলের সেরা বক্স অফিস। সেই ম্যাচে নতুন এক তারকার উদয় হল। বহু যুদ্ধের সৈনিক জামশেদ নাসিরির ছেলে কিয়ান নাসিরি (Kiyan Nasiri) হ্যাটট্রিক করে ম্যাচ নিয়ে চলে গেলেন এটিকে মোহনবাগান শিবিরে। অতীতে ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করেছেন অমিয় দেব। ভাইচুং ভুটিয়া, এডে চিডিরও হ্যাটট্রিক আছে চিরআবেগের ইস্ট-মোহন ম্যাচে। কিন্তু এদিন পরিবর্ত হিসেবে নেমে হ্যাটট্রিক করে নজর কাড়লেন জামশেদ পুত্র। কিয়ান নাসিরি নেমে সমতা ফেরান। তার পর আরও দুটো গোল করে এটিকে মোহনবাগানকে এনে দেন তিন-তিনটি পয়েন্ট। দিনান্তে স্কোরলাইন বলছে, এটিকে মোহনবাগান ৩, এসসি ইস্টবেঙ্গল ১।
ক্রমাগত হারতে হারতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া এসসি ইস্টবেঙ্গল প্রথমার্ধে এটিকে মোহনবাগানের শক্তিশালী আক্রমণভাগের সামনে মানবপ্রাচীর তুলে দিচ্ছিল। সেটাই ছিল স্ট্র্যাটেজি। লাল-হলুদের সেই পায়ের জঙ্গলে বারংবার হারিয়ে যাচ্ছিল এটিকে মোহনবাগানের আক্রমণ। নিজেদের পেনাল্টি বক্সের সামনে প্রায় ন’ জন ফুটবলার নামিয়ে এনেছিল এসসি ইস্টবেঙ্গল। আপফ্রন্টে মাত্র দু’ জন-পেরোসেভিচ ও মার্সেলা রিবেইরো। নবাগত ব্রাজিলীয় রিবেইরো গোড়ায় নজর কাড়েন। প্রথমার্ধে গোল করে এগিয়ে দিতে পারতেন এসসি ইস্টবেঙ্গলকে। তিরির ভুলে এটিকে মোহনবাগানের পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন রিবেইরো। তাঁর শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
[আরও পড়ুন: ‘আপনি চিরকাল হৃদয়ে থাকবেন’, ডার্বির আগে সুভাষ ভৌমিককে শ্রদ্ধা নিবেদন দুই প্রধানের]
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এটিকে মোহনবাগান প্রায় গোল করে ফেলেছিল। বাঁ দিক থেকে কাট করে ঢুকে লিস্টন কোলাসোর শট এসসি ইস্টবেঙ্গলের পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। তার কয়েক মিনিট পরেই শুভাশিসের হেড অল্পের জন্য বাইরে চলে যায়। রয় কৃষ্ণ না থাকায় আপফ্রন্টে কামড় ছিল না এটিকে মোহনবাগানের। তার উপরে একা হয়ে পড়ছিলেন ডেভিড উইলিয়ামস। এসসি ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে যায় ৫৬ মিনিটে। পেরোসেভিচের কর্নার থেকে গোল করেন সিডোয়েল।তার ঠিক আগের মুহূর্তে পেরোসেভিচের জোরালো শট অমরিন্দরের শরীরে লেগে মাঠের বাইরে বেরিয়ে গেলে কর্নার পায় লাল-হলুদ। সেই কর্নার থেকেই সিডোয়েল এটিকে মোহনবাগানের জালে বল জড়ান।
রয় কৃষ্ণর চোট ছিল। তাঁকে নামিয়ে ঝুঁকি নিতে চাননি এটিকে মোহনবাগান কোচ ফেরান্দো। রয় কৃষ্ণ ডাগ আউটে বসে দেখলেন ২১ বছরের কিয়ান নাসিরির উত্থান। এটিকে মোহনবাগান ম্যাচে ফিরে আসে তাঁর গোলেই। দীপক টাঙরির পরিবর্তে স্পেনীয় কোচ মাঠে পাঠান জামশেদ নাসিরির পুত্রকে। অতীতে জামশেদ নাসিরিও ডার্বি মাতিয়েছেন। তাঁর ছেলে এদিন হ্যাটট্রিক করে নায়ক হয়ে গেলেন। এদেশ থেকে অনেক দূরে থাকা মোহনবাগানের প্রাক্তন কোচ কিবু ভিকুনা নিশ্চয় কিয়ানের সাফল্য দেখে হাসছেন। যে ডিফেন্সের জোরে এসসি ইস্টবেঙ্গল এতক্ষণ আটকে রেখেছিল এটিকে মোহনবাগানকে, সেই রক্ষণ ৬৪ মিনিটে ভেঙে দিলেন কিয়ান। ভুল করে বসল লাল-হলুদের রক্ষণভাগ। বল বিপন্মুক্ত করতে পারলেন না আদিল খানরা।সেই সুযোগে সদ্য মাঠে নামা কিয়ান নাসিরি সমতা ফেরান।
সমতা ফেরানোর পরের মুহূর্তেই পেনাল্টি পায় এটিকে মোহনবাগান। এসসি ইস্টবেঙ্গলের পেনাল্টি বক্সে লিস্টনকে ফেলে দিলে পেনাল্টি পায় সবুজ-মেরুন। পেনাল্টি স্পট থেকে গোললাইন রহস্যময় সরণী। সেই সরণীতে অনেকেই পথ হারিয়েছেন। এদিন ডেভিড উইলিয়ামস উড়িয়ে দিলেন সেই পেনাল্টি। এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হেলায় হারাল এটিকে মোহনবাগান শিবির। লাল-হলুদকেও এগিয়ে দিতে পারতেন লালরিনলিয়ানা। সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করেন তিনি। অমরিন্দর শরীর ছুঁড়ে সেই যাত্রায় বাঁচান এটিকে মোহনবাগানকে। শেষ লগ্নে লিস্টন কোলাসোর শট হীরা মণ্ডল গোললাইন থেকে বাঁচান।কিন্তু তাতেও দমে যায়নি এটিকে মোহনবাগান। থামানো যায়নি কিয়ান নাসিরিকে। ৯৩ ও ৯৪ মিনিটে আরও দুটো গোল করে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে একাই হারিয়ে দিলেন তিনি। আজকের এই জয়ের ফলে লিগ টেবিলে চারে উঠে এল এটিকে মোহনবাগান।