shono
Advertisement

ATM জালিয়াতি কাণ্ড: ব্ল্যাক বক্সের সাহায্যে উধাও হত টাকা, পুলিশের জালে আরও ৩

জাল পরিচয়পত্র-সহ একাধিক মোবাইল, সিমকার্ড উদ্ধার।
Posted: 10:13 PM Jun 07, 2021Updated: 10:14 PM Jun 07, 2021

অর্ণব আইচ ও কলহার মুখোপাধ্যায়: এটিএম জালিয়াতির (ATM Fraud Case) ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও ৩। এবার বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেপ্তার হল এটিএম জালিয়াতি চক্রের তিন মাথা অমিত গুপ্তা ওরফে অমৃত, মহম্মদ ওয়াকিল ও সন্দীপ সিং ওরফে সোনু। রবিবারই দিল্লির এই জালিয়াতি চক্রের আরও দুই পাণ্ডা মনোজ গুপ্তা ও নবীন গুপ্তা গ্রেপ্তার হয়েছিল সুরাত থেকে। এ ছাড়াও কলকাতায় তাদের দুই সঙ্গীকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

Advertisement

সূত্রের খবর অনুযায়ী, ওয়াকিল ও অমিত গুপ্তা দিল্লির বাসিন্দা। সন্দীপ সিংয়ের বাড়ি পাঞ্জাবে। কলকাতার দশটি এটিএমে ব্ল্যাক বক্স বা ডিভাইস বসিয়ে প্রায় আড়াই কোটি তুলে নেয় তারা। এ ছাড়াও উত্তর শহরতলির নারায়ণপুর এলাকার ডিরোজিও কলেজের কাছে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টারে হানা দেয় জালিয়াতরা। ওই এটিএম থেকে একই পদ্ধতিতে ২১ লাখ টাকা তারা তুলে নেয়। এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে নারায়ণপুর থানা ও বিধাননগরের গোয়েন্দা পুলিশ।

[আরও পড়ুন: ফোন করলেই বাড়িতে পৌঁছে যাবে টিকা! নয়া উদ্যোগ কলকাতা পুরসভার]

একদিকে যখন দিল্লি ও কলকাতা থেকে চারজনকে কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করছে, তখন বিধাননগর পুলিশও জালিয়াতদের সন্ধান চালায়। এটিএমের সিসিটিভির ফুটেজে প্রথমে মহম্মদ ওয়াকিলকে গোয়েন্দারা শনাক্ত করেন। এর পর মোবাইলের টাওয়ার ডাম্প করে ও ৪০টি ‘টেকনিক্যাল সার্ভিল্যান্স’এর সাহায্য নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। শেষ সাতদিনে কিছু বেশি টাকা লেনদেনের হদিশ করা হয়। পুলিশের একটি টিম দিল্লিও যায়। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, শেষ পর্যন্ত সোমবার কৈখালি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত তিনজনকে। তাদের কাছ থেকে নগদ ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭১০ টাকা ও চারশো ডলার উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়াও তাদের কাছ থেকে জাল আধার কার্ড, জাল প্যান কার্ড, ৬টি মোবাইল, ৬টি এটিএম কার্ড, একটি ল্যাপটপ, কিছু নথি ও দু’টি পাসপোর্ট। জানা গিয়েছে, জালিয়াতরা কলকাতায় এসে একাধিক জায়গায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। তার জন্য আগাম টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট মালিকের সঙ্গে নিয়মমতো চুক্তিও করে। জাল আধার ও প্যান কার্ডের ফটোকপিও জমা দেয়। নিজেদের পরিচয় দিয়েছিল ব্যবসায়ী বলে। পুলিশের চোখ এড়াতে প্রত্যেকদিন সিম পালটাত তারা। মঙ্গলবার তাদের আদালতে তোলা হচ্ছে।

এদিকে, এটিএমে হানা দেওয়ার আগে সারা শহরজুড়ে রেইকি করেছিল দিল্লির এটিএম জালিয়াতরা। যে বিশেষ ধরনের এটিএমে জালিয়াতি করা সম্ভব, সেগুলি চিহ্নিত করার কাজে দিল্লির জালিয়াতদের সাহায্য করেছিল কলকাতার শাগরেদ সইফুল। জালিয়াতরা সইফুলকে জানিয়ে দিয়েছিল, একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের পুরনো মডেলের কোন এটিএম তাদের টার্গেট। তাকে দেখানো হয়েছিল সেই বিশেষ মডেলের এটিএমের ছবিও। সেইমতো আব্দুল সইফুল মণ্ডল নামে ওই যুবক ঘুরে এটিএম চিহ্নিত করে জালিয়াতদের জানায়। সেইমতো জালিয়াতরাও এটিএমে হানা দেয়। যে গাড়িটি তারা ব্যবহার করেছিল, তার নম্বরপ্লেট এই রাজ্যের। তবে গাড়িটি আসলে কলকাতার, না কি তারা জাল নম্বরপ্লেট ব্যবহার করেছিল, তা নিয়ে চলছে তদন্ত। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, দিল্লির এটিএম জালিয়াতদের অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিয়েছিল কলকাতা ও বিধাননগরের আরও অন্তত দশজন।

[আরও পড়ুন: খাস কলকাতায় ৩ বছরের শিশুকে যৌননিগ্রহ! হাসপাতালে শুয়ে অভিযুক্তকে চিনিয়ে দিল খুদেই]

এবার তাদের নামের তালিকা তৈরি করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা পুলিশের মতে, কলকাতায় ছেয়ে গিয়েছে ‘মিউল অ্যাকাউন্ট’। জালিয়াতির পর এটিএম বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা টাকা রাখার জন্যই অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিতে শুরু করেছে জালিয়াতরা। মোটা কমিশনের লোভে পড়ে অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিচ্ছেন কিছু শহরবাসী। এবার তাঁদের সতর্ক করছে লালবাজার। লালবাজারের এক কর্তা জানান, জালিয়াতদের সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে কথা বলা হবে না ভাড়া বা ‘মিউল অ্যাকাউন্ট’এর মালিকদেরও। তাদেরও গ্রেপ্তার হতে হবে। সম্প্রতি কলকাতায় পরপর এটিএম জলিয়াতির ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে এক ‘মিউল অ্যাকাউন্ট’এর মালিক বিশ্বদীপ রাউথ। যে ব্ল্যাক বক্স বা ডিভাইসগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল, সেগুলি বিহার থেকে কেনা হয়েছিল বলেই ধারণা পুলিশের। এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে সুরাত ও কৈখালি থেকে ধৃত পাঁচ জালিয়াতকে জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement