shono
Advertisement

দারিদ্রের মধ্যে ত্রিকোণ প্রেম, ‘অটো’-য় ফুটে উঠল বাস্তবের ছবি

প্রশংসা প্রাপ্য নির্দেশক কৌশিক করের। The post দারিদ্রের মধ্যে ত্রিকোণ প্রেম, ‘অটো’-য় ফুটে উঠল বাস্তবের ছবি appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 04:48 PM Oct 05, 2018Updated: 04:48 PM Oct 05, 2018

নির্মল ধর: কলকাতার রাস্তায় অটো চালকদের কোন শ্রেণিতে ফেলা যায়? শহুরে প্রান্তিক শ্রেণি? সাধারণ যাত্রীর চোখে তাঁরা শুধুই অটো ড্রাইভার। তাচ্ছিল্য, অবহেলাই তাদের প্রাপ্য (আজকাল অবশ্য তাঁরা পালটা মারও দিচ্ছেন)। কৌশিক করের কলমে এবং নির্দেশনায় তেমনই এক অন্ত্যজ শ্রেণির অটো চালক চন্দনের ঘেঁটে যাওয়া জীবনের কথা উঠে এসেছে। এমন নগ্ন বাস্তবের চেহারায় অটোওয়ালাদের বস্তি জীবনকে অতি সম্প্রতি দেখেছি বলে তো মনে পড়ছে না। ‘কোলকাতা রঙ্গিলা’-র প্রযোজনায় এই নাটক তাই মহানগরের এক অন্ধকারময় আন্ডারবেলির কথা বলে এবং দেখায়। জীবনে প্রতিনিয়ত মার খাওয়া মানুষগুলো যখন সঠিক জায়গায় প্রত্যাঘাত করতে পারে না, তখন সে প্রতিশোধ নেয় আপনজনেরই ওপর। এটাই নিয়ম।

Advertisement

‘অটো’ নাটকের প্রধান চরিত্র চন্দন। তার বুকে স্ত্রী মালার জন্য ভালবাসা আছে। আছে দৈনন্দিন জীবনের দারিদ্রজনিত যন্ত্রণা। আবার এই মানুষটাই অনে্যর বিপদে সাহায্য করতে এগিয়ে যায়। কিন্তু সমাজের কাছে ধিকৃত-উপেক্ষিত জীবন চন্দনকে অস্থির করে তোলে। বাঁচার লড়াই তো বটেই, বন্ধুও সহচালক ভিকির সঙ্গে স্ত্রী মালার ঘনিষ্ঠতা তার মনে এক বিকারের জন্ম দেয়। স্ত্রীর কাছে নিজের ‘পুরুষত্ব’ প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে একসময় সত্যিই চন্দন ঘুরে দাঁড়াতে চায়। দাঁড়ায়ও। কিন্তু একটা জীবনের বিনিময়ে। ব্যক্তির সমস্যা তখনই যেন এক সামাজিক সমস্যার আকার নেয়। কৌশিকের এই ত্রিস্তরীয় নাটকের মঞ্চায়নও এক জটিল কর্ম।

ইসলামপুরের ঘটনায় ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি উসকে বিতর্কে তসলিমা ]

তিনি নিজেই পরিচালক এবং প্রধান চরিত্রের অভিনেতাও। সুতরাং চন্দন-মালা-ভিকি’র ত্রিকোণ সম্পর্কের জটিলতা প্রকাশে কৌশিক জোর দিয়েছেন অভিনয়ের ওপর। স্বামী-স্ত্রীর রোমান্স এবং ঝগড়াও প্রয়োজনীয় জায়গা নিয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার এই শহরের অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষদের জীবন যাত্রাকে আজকের রাজনীতির প্রেক্ষাপটেই উপস্থিত করেছেন তিনি। অটোওয়ালাদের পেশাগত সমস্যাকেও তিনি এড়িয়ে যাননি। ওখানে যে দলীয় চক্র স্বার্থের খাতিরে সক্রিয় থাকে সেটাও প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিয়েছেন। গা বাঁচিয়ে ‘নিরাপদ’ খেলার কোনও চেষ্টা নেই কৌশিকের মধ্যে। প্রকরণের দিক থেকেও ‘অটো’ এই সময়ের বাংলা প্রযোজনায় দারিদ্রকে শরীরে নিয়েও যথেষ্ট অনুভবী এবং মানসিকভাবে ঋদ্ধ। হলের পর্দা সরলে প্রথমেই চোখ আটকে যায় একটা প্রায় জ্যান্ত ‘অটো’র উপস্থিতি। ওটির হেডলাইট জ্বালিয়ে স্টার্ট নেওয়ার বিকট শব্দই মন কেড়ে নেওয়ার এক প্রিলু্যড তৈরি করে দেয়। বাঁ দিকে খাট বিছানা মশারিতে সাজানো নিম্নবিত্তের শোওয়ার ঘর। আর ডানদিকের খোলা জায়গাটা নানা ধরনের স্পেস হিসেবে ব্যবহৃত। মদন হালদারের (এবং কৌশিকেরও) এমন মঞ্চ নির্মাণ যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি মুহূর্তের মুড তৈরিতে গম্ভীরা ভট্টাচার্যের আলোর ব্যবহারও ভাল। অভিনয়ে প্রথম নাম অবশ্যই কৌশিক করের। তাঁর বডি ল্যাঙ্গোয়েজই জীবন্ত চন্দন হয়ে ওঠার বড় হাতিয়ার। শহরের অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষিত অটোওয়ালাদের ভাষাও সুন্দর রপ্ত করেছেন তিনি। প্রেম এবং প্রতিহিংসার প্রকাশেও কৌশিক প্রয়োজনে রোমান্টিক এবং রিভেঞ্জফুল। মালার চরিত্রে তন্নিষ্ঠা বিশ্বাসও খুবই মনযোগী। তাঁর শারীরিক অভিনয়েও বাস্তবতার স্পর্শ। ভিকির ভূমিকায় গম্ভীরা ভট্টাচার্য মন্দ নন। তাঁর আরও অনুশীলন প্রয়োজন। ‘কোলকাতা রঙ্গিলা’র এই প্রযোজনার মঞ্চায়নে ‘স্বাভাবিক’ কারণেই হল বা মঞ্চ প্রাপ্তি একটা বড় সমস্যা, তবুও কৌশিকের অদম্য প্রচেষ্টাকে শাবাশি দিতেই হবে।

চিনা বাদ্যযন্ত্রে হিন্দি গানের সুর, বেজিং অলিম্পিকের শিল্পীরা মাতালেন শহর ]

The post দারিদ্রের মধ্যে ত্রিকোণ প্রেম, ‘অটো’-য় ফুটে উঠল বাস্তবের ছবি appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement