সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ছোট করে কাটা চুল, যাকে বলে ‘বব কাট’। অর্ধশতক আগে যা ছিল ব্যতিক্রমী। সঙ্গে শাড়ি আর মুক্তোর ছিমছাম গয়নায় অন্যন্য ব্যক্তিত্ব আর রুচির ছাপ। সদ্য প্রয়াত গীতাঞ্জলি আইয়ারকে (Gitanjali Aiyar) আজকের চমকদার প্রচার সর্বস্ব সাংবাদিকতার জগতে কিছুতেই মানাত না। ফলে সময়ের দাবি মেনে আড়ালে চলে গিয়েছিলেন বহুকাল আগে। এবার তাঁর প্রয়াণে ভারতীয় টেলিভিশন জগতের একটি যুগের অবসান হল।
পৃথিবী তখনও মুঠোবন্দি নয়। এমনকী স্যাটেলাইট আর কেবেলের হাতে যায়নি বাঙালির ড্রয়িং রুম। বরং টিভি এক চমকে দেওয়া ‘বোকাবাক্স’। গোটা ভারতের ছাদে মহাজাগতিক অ্যান্টেনা! নীল স্ক্রিনে সাদাকালো ঝিঝিপোকা এলে ছাদ বেয়ে ডাইনে-বাঁয়ে ঘোরাতে হত সেই অ্যান্টেনা। ওমনি ভেসে উঠত চলমান সাদাকালো, পরে রঙিন ‘দূরদর্শন’। একে একে ঘষা পর্দায় হাজির হতেন তাঁরাও। ভারতীয় টেলিভিশন জগতের প্রথম আলো—মিনু, গীতাঞ্জলি, ঊষা আলবুকার্ক, রবীন্দ্রন, সুনীত ট্যান্ডন। প্রত্যেকেই আপন ব্যক্তিত্বে ছিলেন উজ্জ্বল। অথচ সাহায্য পেতেন না বিএফএক্স, এআই-এর। আজকের নিউজ চ্যানেলের পাশে সেকালের সংবাদপাঠের মাঝের ভিডিওগুলিকে মনে হতে পারে অ্যামেচার এডিটরের কাজ। তারপরেও মুগ্ধ দর্শক। কোন কারণে মুগ্ধ?
[আরও পড়ুন: দিল্লি অর্ডিন্যান্স নিয়ে এবার কেজরিওয়ালের পাশে অখিলেশ, একত্রিত হচ্ছে বিরোধী শিবির]
একজন সংবাদপাঠক বা পাঠিকার আত্মগরিমায়। সেই সময় ইংরেজি ভাষায় হাতে গোনা যে ক’জন সংবাদপাঠ করতেন, তাঁদের মধ্যে গীতাঞ্জলি আইয়ার ছিলেন অন্যতম। তাঁর কণ্ঠ ও সঞ্চালনা তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। যদিও আদব কায়দার চেয়ে বড় ছিল খাঁটি সংবাদ পরিবেশনের তাগিদ। আজকের মিডিয়া কর্মীরা হয়তো ভাবতে পারবেন না, সেকালে দূরদর্শনের জনৈক সংবাদপাঠিকা হয়ে উঠেছিলেন গোটা দেশের তরুণ প্রজন্মের রোল মডেল। শিক্ষিত, সুসভ্য আভিজাত্যে গত শতাব্দির আট এবং নয়ের দশকের রোল মডেল হয়ে উঠেছিলেন গীতাঞ্জলি আইয়ার।
[আরও পড়ুন: করমণ্ডলের রেশ কাটার আগেই ওড়িশায় রেলে বিপত্তি, মালগাড়িতে কাটা পড়লেন ৪ শ্রমিক]
পড়াশোনা সূত্রে বঙ্গীয় যোগ ছিল গীতাঞ্জলির। কলকাতার লরেটো কলেজ থেকে স্নাতক হন। পরে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা থেকে ডিপ্লোমা করেন। ১৯৫৯ সালে জন্ম দিল্লি দূরদর্শনের। ১৯৭১-এ দূরদর্শনে যোগ দিয়েছিলেন গীতাঞ্জলি। এরপর ৩০ বছরের দাপুটে কর্মজীবন। ১৯৮৯ সালে ইন্দিরা গান্ধী প্রিয়দর্শিনী অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত। সে বছর সবচেয়ে জনপ্রিয় নারী হিসেবে তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। আটের দশকে একাধিক বিজ্ঞাপনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন প্রয়াত সংবাদপাঠিকা। বিপুল জনপ্রিয়তার সুবাদেই অভিনয়ের অফার পেয়েছিলেন। দূরদর্শনে সম্প্রচারিত টিভি সিরিজ ‘খানদান’-এ অভিনয় করেছিলেন। নিজের সঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রজন্মের বেড়ে ওঠা সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন গীতাঞ্জলি।