shono
Advertisement

আয়লার বাঁধই ঠেকিয়েছে আমফানের তাণ্ডব, তবুও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ঢিলেমি প্রশাসনের

কেন্দ্রীয় সরকার টাকা না দেওয়ায় কাজ বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ। The post আয়লার বাঁধই ঠেকিয়েছে আমফানের তাণ্ডব, তবুও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ঢিলেমি প্রশাসনের appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 05:30 PM May 30, 2020Updated: 05:30 PM May 30, 2020

দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: আয়লার তাণ্ডবের পর নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল সুন্দরবনের কয়েক হাজার কিলোমিটার নদী বাঁধ। নিশ্চিহ্ন নদীবাঁধ মেরামতির জন্য সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল পুরো সুন্দরবনজুড়ে। কিন্তু আপাতত বন্ধ সেই প্রকল্পের কাজ। অথচ যে এলাকায় আয়লার বাঁধ হয়েছে সেই এলাকায় রুখে দেওয়া গেছে আমফানের তাণ্ডবকে। ফলে সুপার সাইক্লোন বিধ্বস্ত এলাকাবাসীর একটাই দাবি সুন্দরবনের প্রতিটি দ্বীপে দ্বীপে তৈরি হোক আয়লার মতো শক্তিশালী নদী বাঁধ। আর এর ফলে একদিকে যেমন সুন্দরবনের নদীর নোনাজল দ্বীপে ঢোকা বন্ধ হবে, অন্যদিকে মানুষের সম্পত্তি ও জীবন হানি থেকে রক্ষা করা যাবে।

Advertisement

২০০৯ সালের ২৫ মে ভয়ঙ্কর আয়লা আঘাত হেনেছিল সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায়। প্রবল জলোচ্ছাসে আর নদীর ঢেউয়ে ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছিল সুন্দরবনের সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার নদীবাঁধের অধিকাংশই। তারপর প্রায় মাস দুয়েক ধরে নোনা জলে বন্দি হয়েছিল সুন্দরবন। তৎকালীন রাজ্যের সেচ মন্ত্রী সুভাষ নস্করের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে দাবি করেছিলেন আয়লা প্রকল্পের বাঁধ নির্মাণের জন্য। সেইমতো কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথভাবে কমিটি তৈরি করে ঠিক করে কীভাবে সুন্দরবনের নদী বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব। পুরো বাঁধ মেরামতির রূপরেখা তৈরি করা হয়। খরচ ধরা হয় ছ’হাজার কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয় ৫০৩২ কোটি টাকা দেবে কেন্দ্র। রাজ্যকে দিতে হবে এই প্রকল্পের ২৫ শতাংশ টাকা। সেই মতো শুরু হয় সুন্দরবন এ আইলার বাঁধ নির্মাণের কাজ। করা হয় জমি অধিগ্রহণ। আয়লা বাঁধের জন্য জমি অধিগ্রহণে যথেষ্ট দাম দেওয়া হয় স্থানীয় চাষীদের। ঠিক হয় প্রতিবিঘা পিছু ৫ লক্ষ টাকা করে জমির দাম পাবেন মালিকরা। সঙ্গে পাকা বাড়ি, কাঁচা বাড়ি ও অন্যান্য যা কিছু অধিগ্রহণের মধ্যেই পড়বে তার আলাদা টাকা পাবেন ক্ষতিগ্রস্তরা। জমি অধিগ্রহণ হওয়ার পরে সেই প্রকল্প আপাতত বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। এ বিষয়ে গোসাবা ব্লকের বিডিও সৌরভ মিত্র বলেন, “জমি অধিগ্রহণের পর পুনরায় ভাঙনে বেশ কিছু জমি অধিগৃহীত জমি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। ফলে নদী বাঁধ দিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বেশ কিছু জায়গায়। আয়লা প্রকল্পের বাঁধ নির্মাণের কাজ এখন আপাতত বন্ধ আছে।”

[ আর ওপড়ুন: এলাকায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খোলায় আপত্তি, পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ স্থানীয়দের ]

সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপে দ্বীপে ঘুরে দেখা যাচ্ছে বিশেষ করে বালি, ঝড়খালি যে সমস্ত এলাকাতে এই আয়লা বাঁধের কাজ হয়েছে সেই সমস্ত এলাকায় আমফানের তাণ্ডব খুব একটা থাবা বসাতে পারেনি। প্রবল ঝড়েও ভাঙতে পারেনি সেই নদী বাঁধ। জলস্ফিতির পরও অক্ষুণ্ণ থেকেছে নদী বাঁধের সমস্ত অংশ। সেচ দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী আয়লার সময় শুধুমাত্র গোসোবা ব্লকে বাঁধ ভেঙে ছিল প্রায় ৫০০ কিলোমিটার। কিন্তু আমফানের তাণ্ডবে মাত্র ৮০ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙেছে। এ বিষয়ে রাজ্যের প্রাক্তন সেচ মন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, “আয়লার বাঁধের জন্য জমি অধিগ্রহণ বাম আমলে শুরু হলেও তার বাঁধের কাজ এখনও শেষ করা যায়নি। সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার সুন্দরবনের নদীবাঁধকে আয়লার বাঁধ বানানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। যার মধ্যে ১৪০০ কিলোমিটার প্রাথমিকভাবে তৈরি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় যেটি আয়লাতে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পুরো কাজ ৩ বছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল কিন্তু সেই কাজ আজও শেষ হয়নি। উলটে পুরো প্রকল্পটি বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।” রাজ্যের সেচ দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ২০০ কিলোমিটার নদী বাঁধ প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে আয়লা প্রকল্পের বাঁধের মধ্যে। ৫০৩২ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা খরচ করা সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে এই কাজের মেয়াদ ছিল ৩ বছর। ফলে এখন আয়লা প্রকল্পের কাজ আর নতুন করে করা সম্ভব নয়। আয়লা প্রকল্পের বাঁধের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন বাঁধ মেরামতির কাজ করবে সেচ দপ্তর।

এই বাঁধের বৈশিষ্ট্য ছিল সুউচ্চ এবং বিশেষ ঢাল বিশিষ্ট। যা চওড়া হওয়ার কথা ছিল ১৫ ফুট। উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুট।  বাঁধের বাইরে নদীর দিকে লাগানো হতো ম্যানগ্রোভের জঙ্গল। যে জঙ্গল নদীর ঢেউকে প্রতিহত করবে প্রতিনিয়ত। সুন্দরবনের পশ্চিমবঙ্গের অংশে ১৯ টি ব্লক নিয়ে গঠিত। যার মধ্যে ১০২ দুটি দ্বীপ রয়েছেন। ৫৪ টি দ্বীপে প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষের বসবাস। আর দ্বীপে ঘিরে থাকা এই সমস্ত নদীবাঁধ গুলির বয়স প্রায় দেড়শো বছরের বেশি। এই মান্ধাতার বাঁধ আর সইতে পারছে না প্রবল সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কা। এ বিষয়ে রাজ্যের সেচ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী মন্টু রাম পাখিরা বলেন “কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের টাকা না দেওয়ার কারণে  কাজ বন্ধ আছে । রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তরকে দিয়ে বাঁধের কাজ করাচ্ছে।”

[ আরও পড়ুন: করোনার কোপ, ৬২৪ বছরে প্রথমবার মাহেশের রথের রশিতে পড়বে না টান ]

The post আয়লার বাঁধই ঠেকিয়েছে আমফানের তাণ্ডব, তবুও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ঢিলেমি প্রশাসনের appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup ছাঁদনাতলা toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার