জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: শুক্রবার সরকারি কর্মচারীদের ডিএ ধর্মঘটের দিন বন্ধ ছিল বাগদার (Bagda) কোনিয়ারা যাদবচন্দ্র হাইস্কুল৷ ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা ব্যাহত হয়৷ রবিবার কর্তৃপক্ষ স্কুল খোলা রেখে ক্লাসের আয়োজন করেছিলেন৷ ছাত্রছাত্রীরাও আসে। রান্না হয়েছিল মিড ডে মিলও (Mid Day Meal)৷ কিন্তু তাল কাটল দুটি ক্লাস হওয়ার পরেই।
আচমকা স্কুলে এসে চড়াও হন বাগদার তৃণমূল (TMC) পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা রায়, কোনিয়ারা এক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রামেশ্বর বৈরাগী-সহ তৃণমূলের লোকজন। ম্যানেজিং কমিটির অনুমতি ছাড়া কেন রবিবার স্কুল খোলা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে প্রধান শিক্ষককে তাঁরা রীতিমতো ধমক লাগান বলে অভিযোগ৷ টেবিলে থাপ্পড় মারা হয়। উত্তেজিত হয়ে হুমকি দেন গোপা রায়৷ জোর করে এদিনের হাজিরা খাতায় শিক্ষকদের উপস্থিতি প্রধান শিক্ষককে দিয়ে কেটে দিতে বাধ্য করা হয়। এসবের জেরে এদিন টিফিন পর্যন্ত ক্লাস হয়ে বন্ধ হয়ে গেল স্কুলের পঠনপাঠন৷
ডিএ ধর্মঘটের (DA Strike) দিন স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা পড়ুয়ারা কেউ আসেননি৷ ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হওয়ায় প্রধান শিক্ষক অনুপম সর্দার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনুমতি নিয়ে পড়ুয়াদের কাছে জানতে চান, রবিবার ক্লাস করালে তারা আসবে কিনা। বেশিরভাগ পড়ুয়ায় স্কুলে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করায় এদিন ক্লাসের আয়োজন করা হয়েছিল। শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেরা চাঁদা তুলে এদিন ছাত্রছাত্রীদের জন্য মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করেছিলেন৷
[আরও পড়ুন: রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকেও কাটল না DA জট, ‘অনশন প্রত্যাহার নয়’, জানালেন আন্দোলনকারীরা]
এদিন স্কুল চলাকালীন গোপা দেবী ও রামেশ্বরবাবু লোকজন নিয়ে স্কুলের মধ্যে চড়াও হন৷ গোপাদেবী বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ লঙ্ঘন করে শুক্রবার স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছিল৷ রবিবার সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্লাস নেওয়া হয়েছে৷ স্কুল কমিটিকে পর্যন্ত জানানো হয়নি৷ আমরা জানতে এসেছি, কার নির্দেশে প্রধান শিক্ষক এটা করলেন৷ প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়নি সম্মানের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে৷
প্রধান শিক্ষক অনুপম সর্দার বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের অনুমতি নিয়েই আমরা এদিন স্কুল খুলেছিলাম৷ টেকনিক্যালি হয়তো কিছু ভুল হয়ে থাকতে পারে৷ শনিবার-রবিবার শিক্ষাদপ্তর বন্ধ থাকায় লিখিতভাবে অনুমতি নিতে পারিনি৷ তবে আমাদের উদ্দেশ্য তো ছাত্রীদের পঠনপাঠন করানোই ছিল৷ স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতিকে জানানো হয়েছিল। যদিও তাঁর কাছ থেকে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি ব্রজেশ্বর দাস৷
[আরও পড়ুন: সাড়ে তিন বছরের অপেক্ষার অবসান! টেস্ট সেঞ্চুরিতে প্রত্যাবর্তন বিরাটের]
তবে এদিন সকালে স্কুলে এসে খুশি ছাত্রছাত্রীরা৷ অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীদের কথায়, “রবিবার এই প্রথম স্কুল করলাম ৷রবিবার বন্ধু বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হয় না। এদিন দেখা হল একসঙ্গে পড়াশোনা করলাম মজাও করলাম। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে বিজেপি৷ বিজেপি নেতা শিশির হাওলাদার বলেন, “শিক্ষকরা মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন৷ শুক্রবার স্কুল বন্ধ থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের যে ক্ষতি হয়েছিল, তা পূরণ করার চেষ্টা করল রবিবার দিন স্কুল করে৷ তৃণমূলরা স্কুলে ঢুকে পঠনপাঠন বন্ধ করল। ওরা শিক্ষাক্ষেত্রে কী করেছে, এটা রাজ্যের মানুষ দেখছে৷ ওরা চায় না, ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হোক সব কিছু জানুক৷ তাই স্কুলে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়ে পড়াশোনা বন্ধ করে দিল৷”