একে নোট সংকটে রক্ষে নেই, তায় বনধ দোসর৷ তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে বনধ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া৷ বলা ভাল, অধিকাংশ রাজ্যবাসীই সোমবারের বাংলা বনধকে সমর্থন করছেন না৷ আবার অনেকে বলছে, বনধ হলে সরকারের টনক নড়বে৷ এদিকে মধ্যবিত্তের হাতে নগদ বাড়ন্ত৷ বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক আওড়ানো পুঁজিবাদ বিরোধী মানুষই ডিজিটাল দুনিয়ায় ঝুঁকছেন৷ পক্ষে না বিপক্ষে, আজব গেরোয় পড়ে দুই কমরেডের কাল্পনিক বাগ-বিতণ্ডা৷ কান পাতলেন শুভময় মণ্ডল
শুধু কি ওরাই পারে! আমরা কি বানের জলে ভেসে এসেছি?
আমাদেরও সংগঠন আছে, যে যাই বলুক আমরা এখনও আছি৷ কারা নাকি রটিয়েছে, আমরা অচল, পুরনো পাঁচশ-হাজারের নোটও আমাদের দেখলে লজ্জা পায়৷ ছ্যা, অসভ্য কোথাকার৷ মান-ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করে কী মজা পায় সবাই? শীত ভাল মতো পড়লই না অথচ বলে বেড়াচ্ছে, আমাদের নাকি শীতঘুম ভেঙেছে৷ যত্তোসব৷ নোংরা, ম্লেচ্ছ৷ পুঁজিবাদীর দল৷ সাম্রাজ্যবাদের পা চাটা কু..!
এই, এই, এসব বলে না৷ আড়ালে-আবডালে বলো৷ কেউ শুনতে পেলে দেশদ্রোহী বলে উত্তমমধ্যম দেবে৷ একটা মারও মাটিতে পড়বে না৷ যে যা পারে বলুক, সবেতে কান দিতে নাই৷
কেন বাপু, শুধু শুধু আমাদের পিছনেই কেন লাগতে হবে? ওদিকে দিল্লিতে বসে একজন বড় বড় ভাষণ দেবে, পুরনো নোট বাতিল করে দেবে, সবাইকে ডিজিটাল হতে বলবে, সে বেলায়? আমরা কিছু বললেই খিল্লি করবে!
দেখতে পাচ্ছ না, নোট বাতিল নিয়ে যন্তরমন্তরে, সংসদে সব একজোট হল৷ হিল্লি-দিল্লি নাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিল৷ প্রতিবাদ, কালা দিবস সবই তো কর্মসূচি নেওয়া হল৷
তাহলে আমরা বনধ ডাকলেই দোষ? এরা জানে না, হরতাল-ধর্মঘট আমাদের পৈতৃক অধিকার৷ আমরা তো অধিকার রক্ষা করবই৷ চোখে দেখতে পায় না ওরা? ওইসব ডিজিটাল কোম্পানিগুলো বুর্জোয়া নয়? দেশটাকে তো পুঁজিবাদীদের হাতে বিকিয়ে দেবে এই লোকটা!
ওইসব ছাড়ো, এই মরা বাজারে সব হাওয়া তো তাঁরই পালে৷ জমায়েতে তো লোকই হচ্ছে না৷ বনধ তো ডেকে দিলাম, এবার সেটা সাকসেসফুল করব কীভাবে? সরকার তো বনধ ব্যর্থ করতে কোমর বেঁধে নামবে, তখন কী?
ধ্যাত, আগেই ভয় পেয়ে সুটিয়ে যাচ্ছ কেন? শরিকরা তো রয়েছে৷ কিছু একটা হবে৷ হতেই হবে৷ নাহলে সত্যি এবার অচল হয়ে যাব৷ হাত ধরাধরি করতে গিয়ে কম খিল্লি হয়নি৷ ভোটারদের সপাটে চড়ে এখনও গাল জ্বালা রয়েছে৷ উহুঁ, এত ভাবছ কেন বলতো, ঘটকবাবু হয়ে গেলে নাকি?
শোনো, বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক, হবেও৷ কিন্তু আমাদের কী? লোকে তো এখনই পাত্তা দেয় না আমাদের৷ কমরেড ফিদেল কাস্ত্রো মারা গিয়েছেন বলে শহরের কত চোখের জল পড়ল, তাই বলে কী সাধারণ মানুষকে সিরিয়াসলি নিয়ে নিলে নাকি? মানুষকে বিশ্বাস নেই৷ আমাদের এখন কেউ পোছে না৷
ধুত্তোর, বড্ড বেশি বোঝো তুমি৷ দেখছ না, লোকজন এর একটা বিহিত চাইছে৷ এটিএম-ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ ক্লান্ত, কাগজে লিখছে, চ্যানেলে বলছে৷ মাসপয়লায় ট্যাঁকে টান পড়লেই বুঝবে সবাই ঠ্যালা৷ তখন ১০০ ইঞ্চি ছাতি চুপসে যাবে, দেখে নিও৷
তুমি মাথার ডাক্তার দেখাও৷ যাও না, বাজারে দাঁড়িয়ে বল গিয়ে লোকটার নামে, পুরো ক্যালানে কার্তিক করে ছেড়ে দেবে পাবলিক৷
নেশা-টেশা করেছ না কি হে? আগে তো এত মানুষ-মানুষ শুনিনি তোমার মুখে৷ খুব দরদ না! দরদ থাকলে চাড্ডি পরে গেরুয়া রং মেখে ঘুরে বেড়াও৷ বিপ্লব-টিপ্লব কপচিও না৷ এটাই সময়, মোক্ষম আঘাত হানার৷ বনধ হবে, সরকারের টনক নড়বে৷ মধ্য মেধার রাজনীতিবিদরা প্রতিবাদ মিছিলে হেঁটে ধরি মাছ না ছুঁই পানি গোছের ইমেজ তৈরি করবে৷ এইভাবে বিপ্লব হয় নাকি৷
আর যদি বনধ ব্যর্থ হয়? তখন তো পার্টির শীর্ষনেতারা নিচুতলার কর্মীদের উপর দোষ চাপিয়ে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবে৷ তখন তো হাট-বাজারে মশকরার পাত্র হব আমরা৷ সেটা একবার ভেবে দেখেছ?
তুমি তো ভায়া মুর্খের স্বর্গে বাস করো দেখছি৷ বনধ স্বতস্ফুর্ত হলেও বা আমাদের লাভ কী? তার চেয়ে বনধ-হরতাল করে ভেসে তো থাকা যাবে৷ নাহলে লোকে তো সর্বহারার দল বলে ছবিতে মালা টাঙিয়ে সামনে ধূপকাঠি জ্বালিয়ে দেবে৷ পাবলিকের নজরে আসাটাই মেন উদ্দেশ্য৷ লোকের একটু ভোগান্তি হয় হোক গে, বনধই শেষ হাতিয়ার৷
একবার বনধ ব্যর্থ হলে মুখে চুনকালি পড়বে আলাদা, ক’দিন কোনও কথাই বলতে পারব না৷ পক্ষে-বিপক্ষে কিছুতেই না৷ লোকে দুচ্ছাই করবে৷
যাই বলো, এই তুঘলকিপনা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না৷ মানুষের স্বার্থে এই আন্দোলন৷ একে সফল করতেই হবে৷
আবারও বলছি, একটু ভেবে দেখলে হত না৷ উপনির্বাচনেও ওদের ভোট বেড়েছে৷ হাওয়া ওদের পালেই৷ আমরা না খড়কুটোর মতো ভেসে যাই৷
আচ্ছা মুশকিলে পড়া গেল তো! ভাবখানা এমন দেখাচ্ছ যেন বনধ করলে লোকে ত্যাজ্য করবে৷ আমরা তো সর্বহারা, হারাবার কিছুই নেই৷
কাম-কাজ নেই আর উই শ্যাল ওভারকাম! ছাড়, ছাড়! বাদ দাও ওইসব কথা, বলছিলাম কি, তিনশো টাকা ধার দিতে পার? মানে, পাড়ার এটিএমগুলো সব লুঠপাট হয়ে পড়ে আছে৷ কাল সকালে লাইনে দাঁড়িয়ে যদি পাওয়া যায় তখন না হয় ফেরত দিয়ে দেব৷
এই যা! আগে বলবে তো, যত্তোসব ফালতু কথা বলে সময় নষ্ট করলে৷ চালের দোকান থেকে চাল কিনলাম কিছুক্ষণ আগে৷ আমি তো পেটিএম দিয়ে টাকা দিয়ে দিলাম৷ এখন তো অ্যাকাউন্টে কিছু নেই৷
তার মানে তুমিও তো সেই ডিজিটাল কোম্পানিগুলোকে ফায়দা করে দিচ্ছ৷ সেইবেলা কিছু না!
কয়েকমাস আগে হাতও তো ধরে ধরেছিলাম, আপনি বাঁচলে বাপের নাম৷ চলি তাহলে৷
আর কী বলবো, এসো তাহলে৷ দেখি কাল বনধে কী হয়…
The post মধ্যেখানে রই, পরান জলাঞ্জলি দিয়া! appeared first on Sangbad Pratidin.