রাজধানী দিল্লির বাতাসে দূষণ সূচক পৌঁছেছে ১৫০০-এ! পরিবেশবিদদের আগে দেওয়া
অশনি সংকেতের তোয়াক্কা করেনি প্রশাসন।
নয়াদিল্লি সম্প্রতি একটি বিষয়ে আন্তর্জাতিক কুখ্যাতির শিখরে। বিষয়টি বাতাসের দূষণ। দিল্লির বাতাস-দূষণ যে ভয়ংকর বিন্দুতে পৌঁছেছে তাতে বিশেষজ্ঞরা আঁতকে উঠে বলেছেন, এই বাতাসে শ্বাস নিলে তা হবে দিনে ৭৫টি সিগারেটের ধোঁয়া বুক টেনে নেওয়ার মতো আত্মঘাতী ঘটনা। এই অবিশ্বাস্য এবং বিষময় দূষণ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে, এবং এই বেপরোয়া দূষণের উপর ক্রমেই যেন প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। নিয়ন্ত্রণ হারানোর প্রধান কারণ, গয়ংগচ্ছ গড়িমসি।
এবার দিল্লির বাতাস-দূষণের বৈজ্ঞানিক হিসাবটা একটু দেখা যাক, তাহলে বুঝতে পারব আমাদের রাজধানী কী গভীর বিপদের খপ্পরে। যে-বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার দ্বারা বাতাস-দূষণ মাপা হয়, তার নাম ‘এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স’ বা ‘একিউআই’। যদি ‘একিউআই’ পরীক্ষায় কোনও স্থানের বাতাসে দূষণ সূচক অঙ্ক ১০০-র মধ্যে থাকে, তাহলে সেই জায়গার পরিবেশ স্বাস্থ্যকর। ১০০ পেরলেই আমরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ঢুকে পড়লাম, এই বিষয়েও বিজ্ঞানীদের সংশয় নেই। নয়াদিল্লির বাতাস-দূষণ কোন অঙ্কে পৌঁছেছে? বাতাস-দূষণ ‘একিউআই’ অনুসারে গত সোমবার অর্থাৎ ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় ছুঁয়েছে ১৫০০-এর বিপদ-বিন্দু! কলকাতা তার সমস্ত দূষণ-বদনাম সত্ত্বেও ১৫০-২০০-র মধে্য আটকে আছে।
প্রশ্ন, যে-শহরে বায়ুদূষণের মাপ ১৫০০ ছুঁয়েছে, সেখানে দমবন্ধ করা দূষিত বাতাস বুকের মধে্য টেনে কীভাবে মানুষ বেঁচে আছে? এর পরিণতি যে কী মারাত্মক ও শোচনীয়, তা ভাবতে ভয় হচ্ছে! তবে প্রশাসনের দিকে আবহবিদরা যে-প্রশ্নটি না-ছুড়ে দিয়ে পারেননি, আসল ভয়াবহতা নিহিত সেই প্রশ্নটির মধে্যই। দিল্লির বায়ুদূষণ তো আর রাতারাতি ১৫০০-এ পৌঁছয়নি। যখন এই দূষণের মাপ ৩০০ থেকে ৪০০-র মধে্য ছিল, তখনই তো প্রশাসনকে পরিবেশবিদরা বারবার পাঠিয়েছেন বিপদসংকেত। পরামর্শ দিয়েছেন– আর গড়িমসি করবেন না, দূষণ আরও বাড়লে দিল্লির বাতাসে শ্বাস নেওয়া হবে আত্মহত্যার সমান। কিন্তু প্রশাসন পরিবেশবিদদের অশনি সংকেতের তোয়াক্কা করেনি।
এই বছরেও দীপাবলিতে বারুদ-ধোঁয়া-বাজির প্রাবল্যে প্রশাসন নিয়ে আসতে পারেনি কোনও নিয়ন্ত্রণ। বা চায়নি বলা ভাল। মানুষকে খেলতে দিয়েছে আত্মঘাতী দূষণের খেলা। তাদের বরং মাতিয়ে রাখতে চেয়েছে বাতাসকে আরও বিষময় করে তোলার অর্বাচীন আনন্দে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ভারতের শীর্ষ আদালত প্রশাসনকে ২২ নভেম্বরের মধে্য হলফনামা জমা দিয়ে দিল্লিকে দূষণমুক্ত করার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা জানাতে বলেছে। এত কিছুর পরেও আত্মঘাতী এই দূষণলীলার মোহ, নেশা ও রাজনীতি রাজধানী ছাড়তে পারবে কি না, কে বলবে? ‘কৃত্রিম বৃষ্টিপাত’ ঘনিয়ে কি দিল্লির বায়ুদূষণের প্রতিকার সম্ভব? মনে রাখতে হবে, দূষণ স্বতঃই হয় না। মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়া, প্ররোচনা দূষণ ঘটা সচরাচর অবাস্তব। দূষণ নয়, তাই মানুষের কর্মকাণ্ড নিয়েই প্রশ্ন তোলা উচিত।