সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাড়ি থেকে পালিয়ে সিরিয়ায় আইএস জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের মেয়ে শামিমা৷ সেখানেই বিয়ে, সন্তান৷ জঙ্গিদলে বেশ কয়েকবছর কাটানোর পর হিংসায় বিধ্বস্ত মেয়েটি ফিরতে চেয়েছিল নিজের দেশে৷ কিন্তু ততদিনে পরিচয়ে জঙ্গি তকমা লেগে যাওয়ায় হাসিনা প্রশাসন তাঁকে দেশে ফেরাতে রাজি হয়নি৷ এখনও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন শামিমা৷
[ আরও পড়ুন : রোহিঙ্গা ত্রাণ তহবিল নয়ছয়ের অভিযোগ ওড়াল রাষ্ট্রসংঘ ]
শামিমার মতো বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আইএস জঙ্গিগোষ্ঠীতে নাম লেখানো অনেকেই এখন ফিরতে চাইছে৷ আর তাতেই বাড়ছে আশঙ্কা৷ এনিয়ে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইসলামিক স্টেটের সর্বশেষ ঘাঁটির পতন সত্ত্বেও দিন দুই আগে আইএস-এ যোগ দিতে সিরিয়ায় পাড়ি দেওয়ার পথে পাটনায় দুই বাংলাদেশি গ্রেপ্তারের খবরও মিলেছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের মতে, সিরিয়ায় গত শনিবার আইএস-এর সর্বশেষ ঘাঁটির পতন হয়। সেখানে মার্কিন সমর্থিত বাহিনী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের হাতে আটক আটশ বিদেশি জঙ্গির খবর পাওয়া গিয়েছে। ওই বন্দিরা যে যে দেশের নাগরিক, তাদের সেইসব দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচারের আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর এখানেই আপত্তি ঢাকার৷ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ‘আইএসে যোগ দেওয়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে বিচারের বিষয়ে কোনও সায় নেই সরকারের৷’ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যারা সিরিয়ায় গিয়েছে, তাদের কেউ কেউ দেশে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। বিমানবন্দরগুলিতে আগেই তাদের ছবি-সহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য দেওয়া হয়েছে। তারা যেন কোনওভাবেই গ্রেপ্তারি এড়াতে না পারেন, সে বিষয়টি বিমানবন্দরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।’
[ আরও পড়ুন : কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে কী করছেন ফেলুদা?]
বাংলাদেশে ফিরতে হলে এই জঙ্গিদের পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্টস লাগবে। ধারণা করা হচ্ছে, আইএস-এ যুক্ত হওয়ার পর তারা পাসপোর্ট হারিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে তারা এখন তুরস্কের দূতাবাসে যোগাযোগ করতে পারে। তাই দূতাবাসকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে কারা কারা ফেরার চেষ্টা করছে, তাদের নাম উল্লেখ করেনি কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম৷ তবে সূত্রের খবর, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী দুই ভাই ইব্রাহিম হাসান খান ও জুনায়েদ হাসান খান নামে দু’জন ফিরতে চায়৷ এই দুই ভাই ঢাকা হয়ে সিরিয়ায় গেছে৷ জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ ছাড়ার আগে তারা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। একইভাবে সপরিবার সিরিয়ায় চলে যাওয়া চিকিৎসক রোকনউদ্দিনের ফেরার চেষ্টার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক রোকনউদ্দিন, তার স্ত্রী নাইমা আক্তার, মেয়ে রমিতা রোকন ও রেজওয়ানা রোকন ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে দেশ ছেড়েছিল।
[ আরও পড়ুন : সংবর্ধনা সভায় তরুণীকে জাপটে ধরলেন বাংলাদেশের নেতা, ভাইরাল ছবি]
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী অন্তত ৪০ জন আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীতে যোগদান করতে গিয়ে দেশ ছেড়েছে। তাদের অনেকেই প্রাণ হারিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত শনিবার সিরিয়ার বাঘউজে আইএস-এর সর্বশেষ যে ঘাঁটির পতন হল, সেখানে বাংলাদেশের ৪,৫ জন জঙ্গি থাকার সম্ভাবনা৷ তবে এবিষয়ে এখনও সঠিক কোনও তথ্য নেই কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের কাছে৷ নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইশফাক এলাহি চৌধুরির কথায়, ‘বাংলাদেশ থেকে যারা সিরিয়ায় গেছে, তারা রাষ্ট্রীয় পরিচয় অস্বীকার করে আইএসের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছিল। তাদের ফিরিয়ে আনা কোনওভাবেই উচিত হবে না। তারা দেশের পক্ষে বিপজ্জনক৷’ সিরিয়ায় আইএস-এর পতন ঘটলেও, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় আইএস ভাবধারায় এখনও ছড়িয়ে পড়ছে৷ আর তাতেই নিরাপত্তার কড়াকড়ি হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে৷
The post দেশত্যাগী আইএস জঙ্গিদের ফেরা আটকাতে নিরাপত্তার কড়াকড়ি বাংলাদেশ জুড়ে appeared first on Sangbad Pratidin.