সুকুমার সরকার, ঢাকা: করোনা আবহে বাংলাদেশে (Bangladesh) মহা উৎসাহে পালিত হচ্ছে বিজয় দিবস। আজ অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির গৌরবের দিন। রাজধানী ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এদিন শহিদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকাল ৬টা ৩৬ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শহিদদের স্মরণে বিগুলে বেজে ওঠে করুণ সুর। শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সরষে খেতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এঁকে তাক লাগালেন কৃষক!]
১৯৭১ সালের এদিন পাকিস্তানের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ৩০ লক্ষ শহিদ ও ১০ লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে শক্তিশালী পাকবাহিনী ভারতীয় ফৌজ ও বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে ঢাকার তদানীন্ত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সুরাওয়ার্দি উদ্যানে) আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭২ সালের প্রথমার্ধে ঢাকায় এসে পাকিস্তানের পরাজয় স্থানে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাশে রেখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভাষণ দিয়েছিলেন। এ এক অনন্য ইতিহাস। এ যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর পরাজয় অনিবার্য ছিল, কারণ তারা একটি মুক্তির স্বপ্নে বিভোর ঐক্যবদ্ধ জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। মুক্তি ও বিজয়ের আনন্দ মানুষকে সব দুঃখ-কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। তাই আজ শহিদদের মর্যাদায় সারাদেশে বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।
এদিকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে বিজয় দিবসের শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। এখানেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। বুধবার সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের বেদীতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কেন্দ্রীয় আওয়ামি লিগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন ও আবদুল আওয়াল শামীম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে পবিত্র ফাতেহাপাঠ, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহিদ, জাতীয় ৪ নেতা ও ৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহিদদের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সাফল্য কামনা করা হয়। এরপর জেলা আওয়ামি লিগ-সহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে মহান বিজয় দিবসের শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
বিজয় দিবস উদযাপন করার জন্য ঢাকার অদূরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে মোতায়েন করা হয় কয়েকশো সামরিক ও বেসামরিক নিরাপত্তাকর্মী। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে সুইপিং করা হয়। বিজয়ের ৪৯ বছর পেরিয়ে এবার ৫০তম বিজয় দিবস। করোনা মহামারির কারণে এবারের বিজয় দিবস এসেছে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। আজ বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরব ও অহংকারের দিন। লক্ষ লক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধার রক্তস্রোত, স্বামী-সন্তানহারা নারীর অশ্রুধারা, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা আর বীরাঙ্গনাদের সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে অর্জিত হয়েছিল মহান এই বিজয়। ৪৯ বছর আগে এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় বাঙালি জাতিকে এনে দিয়েছিল আত্মপরিচয়ের ঠিকানা। আজ কৃতজ্ঞ জাতি সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করছে দেশের বীর সন্তানদের।