সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রথম নারী সদস্য গ্রেপ্তার। তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (CTTC)। রবিবার ঢাকায় (Dhaka) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে গ্রেপ্তারের এই তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান ও উপমহাপরিদর্শক মহম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ”গ্রেপ্তার জঙ্গি সদস্যের নাম জোবায়দা সিদ্দিকা নাবিলা। বয়স মাত্র ১৯ বছর। আনসার আল ইসলামের সঙ্গে সে জড়িয়ে পড়েছিল। আনসার আল ইসলামে সেই প্রথম নারী সদস্য। র্যাডিকালাইজেশনের (Radical) শেষ ধাপে সহিংস অবস্থায় ছিলেন নাবিলা। সিটিটিসির প্রধান বলেন, ”এই জঙ্গি সংগঠনটিতে এর আগে কোনও নারী সদস্য ছিল বলে জানা যায়নি। এই প্রথম এই সংগঠনের কোনও নারী সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হল।”
গত ২৬ আগস্ট ঢাকার বাড্ডা থেকে নাবিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভোলার লালমোহন উপজেলার বাসিন্দা জোবায়দার বাবা একজন শিক্ষক। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পুলিশের হাতে বেশ কিছু তথ্য এসেছে। কলেজছাত্রীর মা-বাবা তার মধ্যে পরিবর্তন ঘটার বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। সে কারণে তাকে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। জোবায়দা পাত্রের সঙ্গে দেখা করে ‘শহিদ’ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে ও বিয়ে ভেঙে দেয়।
[আরও পড়ুন: চলতি সপ্তাহেই চালু হতে চলেছে ভারত-বাংলাদেশ যাত্রীবাহী বিমান পরিষেবা]
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জোবায়দা জানিয়েছে, সে ২০২০ সালের প্রথম দিকে নিজের নাম পরিচয় গোপন করে ছদ্মনামে একটি ভুয়ো ফেসবুক (Facebook) অ্যাকাউন্ট খোলে। একসময় সে ফেসবুকে আনসার আল ইসলামের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ‘তিতুমীর মিডিয়া’র খোঁজ পায়। তখন সে এই পেজে যুক্ত হয়ে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী ভিডিও, অডিও ও লেখা পড়তে শুরু করেন। তার তিতুমীর মিডিয়া পেজের অ্যাডমিনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পরে তিতুমীর মিডিয়া পেজের ওই অ্যাডমিন আনসার আল ইসলামের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের লিংক তাকে দেয়। ওই লিংক থেকে জোবায়দা আনসার আল ইসলামের সেসব অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ঢুকতে শুরু করেন। মূলত এই সময় থেকে তিনি উগ্রবাদী মতাদর্শ নিজে কঠোরভাবে অনুশীলন করতে থাকেন। এই মতাদর্শকে সবার মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে বেছে নেয়। জোবায়দা ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও চার্পওয়্যার নামের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছদ্মনামে একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলে। প্রাথমিক তদন্তে তার দুটি ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, একটি ‘চার্পওয়্যার’ ও চারটি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া যায়।
ফেসবুকে ফেক অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাপকভাবে আনসার আল ইসলামের উগ্রবাদী সহিংস মতাদর্শ প্রচার, বিভিন্ন উগ্রবাদী প্রচারণাকারী আইডির সঙ্গে যোগাযোগ ও বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে আলাচনা করতে। জোবায়দা আনসার আল ইসলামের যোগাযোগের প্রিয় মাধ্যম টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতেন। তার চারটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এগুলো দিয়ে ১৫টির বেশি চ্যানেল পরিচালনা করত সে। আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী সহিংস ভিডিও, অডিও, ছবি ও ফাইল এসব চ্যানেল থেকে প্রচার করা হত। তার অনুগামীর সংখ্যা অনুমানিক ২৫ হাজার।
[আরও পড়ুন: রাতারাতি জ্যাকপট! একবার জাল ফেলেই ৫০ লক্ষ টাকার ইলিশ ধরলেন জেলে]
এছাড়া নাবিলা নিজে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন অফিশিয়াল চ্যানেলে যুক্ত ছিল। সেই চ্যানেলে আইডি, স্মোক বম্ব, আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি তৈরি করা ও বিভিন্ন কৌশলগত ভিডিও ও ফাইল দেওয়া নেওয়া করা হত। পুলিশ বলছে, জোবায়দা আনসার আল ইসলামের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ‘চার্পওয়্যার’–এই অ্যাকাউন্ট খোলার নির্দেশ পেয়ে সেখানেও অ্যাকাউন্ট খুলে উগ্রবাদী প্রচার চালাত। পুলিশ জেনেছে, এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জোবায়দা নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করছিল।