অর্ণব আইচ: টানা বারো দিন নিউ মার্কেটের একটি হোটেলে গা ঢাকা দিয়ে বাংলাদেশের সাংসদকে খুনের ছক কষে খুনিরা। নিউ টাউনে বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনোয়ার খুনের তদন্তে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত ১৩ মে সাংসদকে খুনের পর সন্ধ্যায় ওই হোটেলে ফিরে আসে খুনিরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে চেক আউট করে সাংসদের দেহাংশ ভর্তি ট্রলি নিয়ে তারা চলে যায় বনগাঁ সীমান্তে। ১৭ মে ফের শহরে ফিরে নিউ মার্কেটেরই একটি শপিং মল থেকে নতুন ট্রলি কেনে দুই খুনি। ১৯ মে তারা ফিরে যায় বাংলাদেশে।
এমনকী, চিকিৎসা করানোর নাম করে কলকাতায় আসার কারণে রীতিমতো একটি হুইলচেয়ারও কেনে তারা। পুলিশের ধারণা, প্রথমে খুনের পর দেহটি হুইলচেয়ারে বসিয়ে পাচার করার ছক করেছিল তারা। পরে ছক পালটে সাংসদের দেহ টুকরো টুকরো করে পাচার করে। দুই খুনির সিসিটিভি ফুটেজ সিআইডি সংগ্রহ করেছে। এর আগে নিউ মার্কেটের অন্তত চারটি হোটেলে গা ঢাকা দিয়েছিল দুই আইএস জঙ্গি।
গত ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে খুনিরা এই দেশে আসে। ২ মে দুই খুনের অভিযুক্ত ফকির মহম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ও শাজি ফয়জল আলি মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেটের সদর স্ট্রিটের একটি হোটেলের ১২এ রুমে ওঠে। হোটেলের ম্যানেজার বিক্রম শর্মা জানান, দোতলায় দেড় হাজার টাকার ঘর ভাড়া নেয় তারা। বাংলাদেশের পাসপোর্ট অনুযায়ী, খুলনার ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা ওই ৩৩ ও ৩৮ বছরের দুই যুবক। সাধারণত তারা সকালে বের হত। হোটেলে ফিরত সন্ধ্যার পর। খাওয়াদাওয়া করত বাইরে। দিন কয়েক পরই তারা হুইলচেয়ারটি কিনে নিয়ে আসে। বলে, তাদের এক অসুস্থ আত্মীয়ের জন্য কিনেছে। গত ৯ মে মোস্তাফিজুর হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে যায়। ফয়জল একাই হোটেলে ছিল। সিআইডির মতে, গত ৩০ এপ্রিল এই খুনের ঘটনার মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহিন কলকাতায় আসে। সঙ্গে সুন্দরী বান্ধবী শিলাস্তি রহমান। তারা ছিল ভিআইপি রোডের কাছে একটি হোটেলে।
[আরও পড়ুন: এবার বিদ্যাসাগরের চরিত্রে দেব! পরিচালনায় কে?]
গত ১৩ মে খুনের দিন সকালে হোটেলের এক কর্মীকে বলে গাড়ি বুক করতে। সিআইডি জেনেছে, ওই গাড়ি নিয়ে ফয়জল বরানগরে গোপাল বিশ্বাসের বাড়ির কাছে যায়। গোপালবাবুর বাড়ি থেকে দুপুর ১টা ৪০ নাগাদ সাংসদ আজিম বের হন। তাঁকে নিয়ে ফয়জল নিউ টাউনে একটি মলের সামনে যায়। সেখানে বাংলাদেশের সুপারি কিলার আমানুল্লা একটি গাড়ি নিয়ে আসে। সেই গাড়ি করেই আমানুল্লা, ফয়জল ও খুনের মাস্টারমাইন্ড শাহিনের সুন্দরী বান্ধবী শিলাস্তি সাংসদ আজিমকে নিয়ে নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে যায়। আগেই ফ্ল্যাটে ছিল মোস্তাফিজুররা। খুনের পর সন্ধ্যায় ফয়জল ফের সদর স্ট্রিটের হোটেলে ফিরে আসে।
ম্যানেজারকে জানায়, আধ ঘণ্টার মধ্যে তাকে বের হতে হবে। দুপুর বারোটা পেরিয়ে যাওয়ার কারণে পুরো একদিনের ভাড়া মিটিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়। সদর স্ট্রিট থেকেই একটি গাড়িতে করে চলে যায়। গত ১৭ মে ওই হোটেলেরই কয়েকজন কর্মী নিউ মার্কেটেরই একটি শপিং মলে মোস্তাফিজুর ও ফয়জলকে একটি ট্রলি ব্যাগ কিনতে দেখেন। তারা জানায়, ১৪ মে তারা বনগাঁয় গিয়েছিল। সেখান থেকে দু’দিন পরে তারা ফিরে আসে। ১৯ মে তারা কলকাতা ছেড়ে বাংলাদেশে চলে যায়। পুলিশের মতে, গত ১৪ মে এই খুনিরা বনগাঁয় গিয়ে সাংসদের দেহের অংশ ট্রলি করে লোপাট করে, এমন সম্ভাবনা রয়েছে। দেহ লোপাটের পর বাংলাদেশে না পালিয়ে তারা ফের কলকাতায় ফিরে আসে বলে জানিয়েছে পুলিশ।