সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত প্রসঙ্গে মন্তব্য করে নিজের দেশেও ব্যাপক বিতর্কের মুখে পড়েছেন মাইনুল আহসান নোবেল। বাংলাদেশবাসীর অধিকাংশের মন্তব্য, নোবেল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অপমান করেছেন। বিতর্ক এবং নোবেল, অবশ্য সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। এর আগেও ওই রিয়ালিটি শোয়ের মঞ্চে সুরকার ও গীতিকারের নাম উল্লেখ না করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশের খ্যাতনামা গায়ক জেমসের ম্যানেজারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ এনে শিরোনামে এসেছিলেন। তবে, এবার তুমুল সমালোচনা এবং সংগীতপ্রেমীদের রোষানলে পড়েছেন গায়ক নোবেল।
সম্প্রতি সারেগামাপা শেষ হয়েছে এবং নোবেলের তৃতীয় হওয়াকে কেন্দ্র করেও বেজায় বিতর্ক হয়েছিল। ক’দিন আগে কলকাতার সংগীত রিয়ালিটি শোতে বাংলাদেশের একটি ব্যান্ডের গান নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তরুণ কণ্ঠশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেল। সম্প্রতি নোবেল এক সাক্ষাৎকারে বলে বসেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘সোনার বাংলা’ গানটির চেয়ে কয়েক হাজারগুণ প্রিন্স মাহমুদের লেখা গান ‘বাংলাদেশ’ আমার দেশকে আরও ভালভাবে ও স্পষ্টভাবে তুল ধরে। এই গানের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের আবেগ। বাংলাদেশের সঙ্গে, বাংলার মানুষের সঙ্গে এই সোনার বাংলার যোগই অনেক বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এই গানটিকে জাতীয় সংগীত করার দাবি জানিয়েছে। আর আমিও তেমনটাই মনে করি।” সারেগামাপা’র গ্র্যান্ড ফিনালেতে প্রিন্স মাহমুদের লেখা ও সুর করা আর জেমসের কণ্ঠে জনপ্রিয় হওয়া ‘বাংলাদেশ’ গানটি গেয়েছিলেন নোবেল।
[আরও পড়ুন: ‘কৃশানু… কৃশানু…’, ওয়েব সিরিজের টিজারেই ফুটছেন ফুটবলপ্রেমীরা]
‘সারেগামাপা ২০১৯’-এ অংশ নিয়ে গোটা সিজনেই আলোচনায় ছিলেন বাংলাদেশের ছেলে নোবেল। তবে এবার সমালোচিত হলেন। সম্প্রতি রবীন্দ্রনাথের গান সম্পর্কে এমন মন্তব্য করে তিনি জাতীয় সংগীতের অবমাননা করেছেন বলেই মত বাংলাদেশের একাংশের। ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় নোবেলকে নিয়ে বয়ে গিয়েছে নিন্দার ঝড়। কোনও গানই জাতীয় সংগীতের সমতুল্য নয়, এমনটাই মত বাংলাদশের জেনওয়াইয়ের। নেটিজেনদের অনেকেই লিখেছেন, “এমন বোকামো নোবেলের থেকে আশা করা যায় না। জাতীয় সংগীত অতুলনীয়। এটি শুধু সংগীতই নয়, বাংলাদেশের প্রাণও। এভাবে তার সঙ্গে অন্য গানের তুলনা টানাই উচিত হয়নি।” এখানেই শেষ নয় নোবেলকে নিয়ে সমালোচনা। বাংলাদেশের অনেকেই আবার এর জন্য নোবেলকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে তার বিচারও দাবি করেছেন কেউ কেউ।
আমেরিকা প্রবাসী লেখক তথা সমাজকর্মী কুলদা রায়, যিনি কিনা নোবেলের বাবার বন্ধু, তাঁর মতে, “রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিকভাবে দেশে উদার, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, বিজ্ঞানবাদী, যুক্তিবাদী, মানবিক ধ্যানধারণা নীতি-নৈতিকতা, শিক্ষা-দীক্ষা এবং আচার-আচরণের ঘাটতি প্রকট হয়ে উঠেছে। এ কারণে আমাদের নতুন প্রজন্ম ভুল শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠছে। তাদের প্রকৃত সাহিত্যবোধই নেই। তারা ঘৃণার মধ্যে জন্ম নিয়ে ঘৃণাবাদী হয়ে উঠছে প্রচ্ছন্নভাবে। তারা সুন্দরভাবে কথা বলতেও শেখেনি। যা বলে তা ভুল বলে। অর্ধসত্য বলে। এটা তাদের দোষ নয়। তাদেরকে এভাবেই গড়ে তোলা হচ্ছে। আমার বন্ধু নান্নুর ছেলে নোবেল এরকম পরিবেশেই বেড়ে উঠেছে। রবীন্দ্র সংগীতের ভাবসম্পদ বোঝার মতো ক্ষমতাই তার নেই। না বুঝেই গান করে। আমার মনে হয়, নোবেল কোনও কিছু না ভেবেই ভুলকথা বলে ফেলেছে। অল্প বয়স হেতু এরকম কথা অনেকেই বলে ফেলে। এর দায় তার নয়। দায় রাষ্ট্র ও ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক শক্তির। তারা যখন রবীন্দ্র সংগীত বদলের কথা বলে, তখন তারা পরিকল্পিত একটা ষড়যন্ত্র থেকেই বলে।”
এপ্রসঙ্গে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সামিনা চৌধুরি বলেন, “ওর চেহারা দেখে মনে হয়েছে ও বুঝতেই পারেনি কী বলতে কী বলে ফেলল। ওর তো বয়স হয়েছে ওর তো জাতীয় সংগীতের মর্মটা বুঝতে হবে। জাতীয় সংগীত শুনলে এখনও আমার কান্না পায়। আমি তো গাইতেই পারি না গানটা। গাইতে গেলেই আমার কান্না পায়। আসলে জাতীয় সংগীত নিয়ে কথা বলাই ঠিক নয়। সবার আগে আমাদের দেশকে, জাতীয় সংগীতকে ভালবাসতে হবে।”
[আরও পড়ুন: ‘তোমায় পড়েছে মনে…’, কিশোর কুমারের ৯০তম জন্মদিবসে শ্রদ্ধার্ঘ]
রিয়ালিটি শোয়ের দৌলতে ভারতেও বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় বাংলাদেশের এই গায়ক। টলিউডের খ্যাতনামা পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘ভিঞ্চিদা’ ছবিতেও গান গেয়ে বড়সড় ব্রেক পেয়েছেন নোবেল৷ ওপার বাংলার পাশাপাশি তাঁর গানে মুগ্ধ হয়েছেন এপার বাংলার অসংখ্য মানুষও৷ সেই নোবেলই কি না এবার ‘ফাউল’ করে বসলেন! এমন আফশোস কিন্তু অনেকেরই মুখে শোনা গিয়েছে। নোবেলের এমন কাণ্ডে তার ভক্তরাও বেশ বিভ্রান্তে! শুধু তাই নয়, তার কাণ্ডজ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। একটি গানকে বিশেষ মূল্য দিতে গিয়ে দেশের জাতীয় সংগীতকে কেন ছোট করলেন নোবেল? এমন প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।
The post ‘জাতীয় সংগীতকে অপমান করার জন্য ক্ষমা চান’, বাংলাদেশেও তোপের মুখে নোবেল appeared first on Sangbad Pratidin.