সুকুমার সরকার, ঢাকা: সোমবার চিন সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনদিন সেখানে থাকবেন তিনি। বৈঠক করবেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে। তাঁর এই সফরের উপর নজর রাখছে পশ্চিমা বিশ্ব। বিশেষ নজর রাখছে 'বন্ধু' ভারতও। জানা গিয়েছে, হাসিনার এই সফরে ১৪টি চুক্তি স্বাক্ষর হবে ঢাকা ও বেজিংয়ের মধ্যে।
সোমবার সকালে ঢাকা থেকে বেজিংয়ের উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী। পরদিন তিনি বেজিংয়ে বিজনেস ফোরামে যোগ দিয়ে বক্তব্য দেবেন। আগামী বুধবার চিনের প্রিমিয়ার লি কিয়াংয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবেন মুজিবকন্যা। বৈঠকে আর্থিক সহায়তা এবং নতুন প্রকল্পে অর্থায়নের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। পরে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা আলোচনা করবেন জিনপিংয়ের সঙ্গে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর বই ‘আমার দেখা নয়া চিন’-এর চিনা ভাষায় অনুবাদের মোড়ক উন্মোচন করবেন তিনি।
[আরও পড়ুন: ‘ভারত রাজনৈতিক বন্ধু হলেও উন্নয়নের সঙ্গী চিন’, দুদেশের মন রেখেই বার্তা বাংলাদেশের!]
বলে রাখা ভালো, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) বা এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) মতো চিনের বেশ কিছু বৈশ্বিক রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশীদার হয়েছে বাংলাদেশ। চিন এরই মধ্যে জানান দিয়েছে, আসন্ন সফরে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, রাজনৈতিক-পারস্পরিক বিশ্বাসকে দৃঢ় করা, উন্নয়ন কৌশলগুলো এগিয়ে নিতে আরও গুছিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়াকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে তারা। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ ও চিনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী রাজনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ও দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের মতো পরিকল্পনাগুলো আলোচনা করা হবে হাসিনার সফরে। বিশ্বের অর্থনীতিতে চিনের প্রভাব বৃদ্ধি মোটেই ভালোভাবে নেয় না আমেরিকা-সহ পশ্চিমা বিশ্ব।
[আরও পড়ুন: মায়ানমারে এখনও নেভেনি সংঘর্ষের আগুন, ফের বাংলাদেশে আশ্রয় সেনা-সহ ৩২ রোহিঙ্গার]
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়ে ঢাকায় আনাগোনা বেড়েছে চিনা আধিকারিকদের। ফলে বন্ধুদেশের উপর কতটা প্রভাব বিস্তার করছে ‘ড্রাগন’ সেদিকেই তীক্ষ্ণ নজর রাখছে দিল্লি। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, হাসিনার সফরে ভারতের নজর থাকবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের ওপরেও। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন শেখ হাসিনা। টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন চিনের প্রেসিডেন্ট জিনপিং। বার্তা দিয়েছিলেন ঢাকার সঙ্গে একযোগে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পে কাজ করার। তার পর থেকেই বাংলাদেশকে কাছে টানতে আরও মরিয়া হয়ে উঠেছে বেজিং। চিন যাই বলুক না কেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প আসলে ফাঁদ বলেই মনে করেন অধিকাংশ বিশ্লেষক। পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে ঋণের ফাঁদ পেতেছে কমিউনিস্ট দেশটি।
ভারত বরাবর এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে এসেছে। কারণ, চিনা প্রকল্পের একটি অংশ গিয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে। ফলে হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশে বিতর্কিত এই প্রকল্পের জাল বিস্তার করতে পারে চিন। ফলে ভারতের বন্ধুত্ব বজায় রেখে কোন অবস্থান নেয় ঢাকা সেদিকেই তাকিয়ে ওয়াকিবহাল মহল।