কৃষ্ণকুমার দাস, ঢাকা: দেশজুড়ে সেনা নামলেও সোমবার রাত পর্যন্ত বাংলাদেশে দেখা নেই দেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধান, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেন মহম্মদ এরশাদের। গত ১০ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েও এখনও ফেরেননি এরশাদ। ভোটের আগে ফিরে কোনও কর্মসূচিতে অংশ নেবেন কি না তাও বলতে পারেননি তাঁর দল জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারাও। শেষ পাওয়া খবরের মতে, বুধবার অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর রাতে বাংলাদেশে ফিরতে পারেন এরশাদ। আর নির্বাচনী প্রচার শেষ হবে ২৮ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটায়। সেই হিসাবে দেখলে মাত্র একদিন প্রচারের জন্য সময় পেতে পারেন তিনি।
উল্টোদিকে বিভিন্ন জনসভায় জোট শরিক আওয়ামি লিগের নেত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, “জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের লাঙল প্রতীকে জিতিয়ে দিন। পরে আমি নৌকায় তুলে নেব।” আসলে মহাজোট হলেও এরশাদের অন্তর্ধান নিয়ে কার্যত দিশাহারা জাতীয় পার্টির প্রার্থী-কর্মীরা এখন আওয়ামি লিগ মুখী হয়েছেন। ভোটের পরে যে দলত্যাগ করে আওয়ামি লিগে যোগ দেওয়ার ঘটনা বাড়বে তা এখনও থেকে আঁচ করা যাচ্ছে।
[হাসিনাকে উৎখাত করার ছক আইএসআইয়ের, ফাঁস গোপন ফোনালাপ]
অথচ এরশাদের রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৩৪ জন সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার দল বিএনপি সেই ভোটে অংশ না নেওয়ায় প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়েছিল এরশাদের জাতীয় পার্টি। অথচ এবার জোরকদমে ভোটের প্রচার শুরু হতেই স্বাস্থ্যপরীক্ষার উদ্দেশ্যে সপরিবার সিঙ্গাপুর চলে গিয়েছেন ৮৮ বছরের প্রবীণ নেতা। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছেন তিনি। নেতা দেশে না থাকায় এখনও পর্যন্ত বড় কোনও সভা করতে পারেননি জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা, এমনকী ইস্তাহারেও প্রকাশ হয়নি। এরশাদের এই রহস্যজনক আচরণ-অন্তর্ধান ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে শাসক ও বিরোধী দল উভয় পক্ষেই। কারণ বিরোধীদের অভিযোগ, শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগের সঙ্গে এবার মহাজোট করলেও আদতে শাসক দলকেই সুবিধা পাইয়ে দিতে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে গিয়ে ‘বিশ্রাম’ নিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধান।
বাংলাদেশের নির্বাচনী সমীকরণে ৩০০টি কেন্দ্রেই জাতীয় পার্টির কম বেশি ভোটব্যাংক রয়েছে তা স্বীকার করছেন আওয়ামি ও বিএনপি উভয় দলের নেতারাই। প্রায় ৩৫ বছর ধরে পদ্মাপাড়ের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছেন বর্ণময় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এরশাদ। জন্মসূত্রে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের বাসিন্দা এরশাদ কখনও বিয়ে, কখনও দ্বিতীয় স্ত্রী বিদিশার সঙ্গে প্রকাশ্যে দাম্পত্য কলহ, আবার প্রথম স্ত্রী রওশানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার মধ্য দিয়ে সংবাদ শিরোনামে থেকেছেন। বর্ণময় জীবনের জন্য চিরকালই বিখ্যাত ছিলেন এরশাদ। একাধিক সুন্দরী মহিলার সঙ্গে তাঁর রঙিন সম্পর্ক, ঘনিষ্ঠতার ব্যাপারেও বিশেষ ঢাকঢাক গুড়গুড় ছিল না। আবার দলের মনোনয়ন মোটা টাকায় বিক্রি করার অভিযোগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে দিয়েও এবছরের ভোটে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছিলেন এরশাদ। অন্যদিকে আবার রুহুল আমিনের অনুগামীরা পালটা তোপ দেগে বলেছিলেন, স্বয়ং এরশাদই মোটা টাকা নিয়ে পুরনোদের বাদ দিয়ে নতুনদের কাছে প্রার্থীর টিকিট বিক্রি করেছেন।
সেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি গত সাত-আট বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কখনও নির্লিপ্ত, কখনও রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গিয়েছেন। এবারও আওয়ামি লিগের সঙ্গে জোট করে দলের ভাগে্য মাত্র ২৫টি আসন জোটার পরেই কার্যত অন্তরালে চলে গিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। চুপচাপ গত পাঁচ বছর বাংলাদেশ সংসদে বিরোধী নেত্রীর ভূমিকা পালন করা এরশাদের প্রথম স্ত্রী রওশানও। এরশাদ নিজে প্রার্থী হয়েছেন কোচবিহার লাগোয়া রঙপুর-৩ ও ঢাকা-১৭ আসনে। কিন্তু প্রার্থীর অবর্তমানে সেই দুই কেন্দ্রেও প্রচারে সেভাবে নামেননি জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। পল্টন এলাকায় জাতীয় পার্টির অফিসে সোমবার বেলায় গিয়ে দেখা মিলল দলের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। দলের চেয়ারম্যান কবে ফিরবেন প্রশ্ন করতেই মুচকি হেসে বললেন, “অপেক্ষা করেন, ভোটের আগে ঠিক ফিরে আসবেন।”
নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাস্তায় নামা সেনাদের নিয়েও এখন বাংলাদেশিদের আগ্রহ তুঙ্গে। ভোটে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সেনারা যথেষ্ট অ্যাকশন নেবে বলে আশা সাধারণ মানুষের। তাদের উপর এই ভরসার পাশাপাশি প্রাক্তন সেনাপ্রধান এরশাদ দেশে কবে ফিরবেন তা নিয়ে ও তারপর ভোটে দলের ভূমিকা নিয়ে তিনি কী সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তার দিকে তাকিয়ে গোটা বাংলাদেশ।
[একটি ফোনের জেরেই পদত্যাগ করেন ‘ম্যাড ডগ’ ম্যাটিস!]
The post সেনা নামিয়েও হদিশ মিলল না এরশাদের, তুঙ্গে জল্পনা appeared first on Sangbad Pratidin.