সুকুমার সরকার, ঢাকা: রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটের তিন যাত্রীর জরিমানার ঘটনায় জোর শোরগোল। ওই তিনজন তাঁর আত্মীয় নন বলেই দাবি রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের। এদিকে, এই ঘটনায় বরখাস্ত টিটিই শফিকুল ইসলামকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী (পাবনা) বিভাগীয় কার্যালয়ে তলব করা হয়েছে। টিটিই শফিকুল ইসলাম দাবি করেন, “আমি কারও সঙ্গে অশোভন আচরণ করিনি। আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আমাকে ব্যাখ্যার জন্য ডাকা হয়েছে। আমি ব্যাখ্যা দিতে প্রস্তুত। সেদিন যা যা ঘটেছে, আমি সেটাই বলব। যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবেন।”
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, “বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা আমার আত্মীয় নন। ওদের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ঘটনার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।” রেলমন্ত্রী আরও বলেন, “ঘটনাটি শনিবার সকালেই শুনেছি। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। ওই টিটিই বিনা টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন। সে কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রেল দপ্তরের কার্যক্রমের সঙ্গে আমার কোনও সংযোগ নেই। রেল আধিকারিকরা ওই টিটিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না।” মন্ত্রীর কথায়, “বিনা টিকিটের যাত্রী যদি মন্ত্রীর আত্মীয়ও হয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। একইভাবে কোনও রেল আধিকারিক যদি যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, তাকেও শাস্তি পেতে হবে।” যদিও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন টিটিই।
[আরও পড়ুন: সমকামী সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে ‘খুন’? বারাকপুরে বান্ধবীর বাড়িতেই উদ্ধার তরুণীর দগ্ধ দেহ]
গত বুধবার রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ওই জরিমানার কাণ্ড ঘটে। পরের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে ঈশ্বরদীর পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক আধিকারিক (ডিসিও) নাসিরউদ্দিনের নির্দেশে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক আধিকারিক (ডিসিও) নাসিরউদ্দিন টিটিইকে বরখাস্তর কারণ হিসেবে এক যাত্রীর হাতে লেখা একটি অভিযোগপত্রের কথা জানিয়েছেন। ৫ মে ঘটনার দিন ইমরুল কায়েস নামের এক যাত্রী অভিযোগ করেন।
ওই যাত্রী দাবি করেছেন, তিনি ৫ মে কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে ট্রেনে ওঠেন। এরপর টিটিই এসে তাদের কাছে টিকিট চান। তিনি টিকিট পাননি বলে জানান। পরে টিকিট দিতে বললে টিটিই তিনজনের ভাড়া বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করেন। ৩০০ টাকার টিকিট ৫০০ কেন জানতে চাইলে তিনি ৩ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে টিকিট নিতে হবে বলে জানান। এত টাকা দেওয়া সম্ভব না বলাতে টিটিই রেগে যান। তিনি চিৎকার চেঁচামেচি করতে শুরু করেন। এ প্রসঙ্গে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ডিসিও নাসিরউদ্দিন বলেন, “টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে এর আগেও যাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করার অভিযোগ উঠেছে। ফলে যাত্রীর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”