সুকুমার সরকার, ঢাকা: মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা (Rohingya) শরণার্থী। তাঁদের বাসস্থান ও খরচ জোগাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ (Bangladesh)। এহেন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মঞ্চেরচাপ উপেক্ষা করে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করল হাসিনা প্রশাসন।
[আরও পড়ুন: রসনার তাড়নায় কাবু, মাঝপথে ট্রেন থামিয়ে ঝালমুড়ি কিনলেন চালক!]
বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ আজ কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প থেকে ১০টি বাসে করে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে মায়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বিশাল বহর। প্রাথমিকভাবে একলক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভাসানচরে পাঠানো হচ্ছে। এদিকে, মায়ানমার সরকারের সদিচ্ছার অভাবে নিজেদের দেশে এখনও ফিরতে না পারা রোহিঙ্গারাও শিবিরের জনাকীর্ণ পরিবেশের থেকে নতুন চরে গিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে আগ্রহী বলে দাবি। প্রথমে রাজি না হলে শেষ পর্যন্ত তারা জায়গা বদল করতে সম্মতি দিচ্ছেন বলেই জন গিয়েছে। এদিন সকালেই রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নোয়াখালীর ভাসানচরের দিকে রওনা হয়েছেন। ভাসানচরে স্থানান্তরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশের অত্যাধুনিক বাহিনী Rapid Action Battalion।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে মায়ানমারে (Myanmar) সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের মুখে দেশটি থেকে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এদিকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চ। বৃহস্পতিবার এই মানবাধিকার সংস্থাটির পক্ষ থেকে ফের এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ৪ হাজার রোহিঙ্গাকে চট্টগ্রাম বন্দর নগরী থেকে ভাসানচর পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ হবে, শিগগিরই রোহিঙ্গাদের প্রত্যন্ত ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ করা।’ এর আগে ২ ডিসেম্বর ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্থানান্তরকরণ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রসংঘ এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কক্সবাজার থেকে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ভাসানচরে প্রারম্ভিক স্থানান্তরের কাজ আগামী কিছুদিনের মধ্যে শুরু করার সম্ভাবনা বিষয়ক কিছু প্রতিবেদন সম্পর্কে রাষ্ট্রসংঘ অবগত রয়েছে। ওই স্থানান্তরের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমে, অথবা শরণার্থীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রসংঘকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। স্থানান্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে রাষ্ট্রসংঘের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। ওই বছরের নভেম্বর মাসে কক্সবাজার থেকে এক লক্ষ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। আশ্রয়ণ-৩ নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে।কিন্তু ২০১৮ সালে যখন প্রথম তাদের স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়, তখন থেকেই রোহিঙ্গারা সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের একটি দলকে ভাসানচর পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারা সেখানকার পরিস্থিতি দেখে যাবার ব্যাপারে সম্মতি জানায় বলে খবর।