সুকুমার সরকার, ঢাকা: শুল্ক নিয়ে বিবাদের জেরে এবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় দরবার করতে চলেছে বাংলাদেশ (Bangladesh)। এদেশ থেকে পাকিস্তানে রপ্তানি হওয়া হাইড্রোজেন পেরোক্সাইডের ওপর ‘অ্যান্টি ডাম্পিং’ শুল্কা আরোপ করেছে ইসলামাবাদ। এই পদক্ষেপ অন্যায্য বলে মনে করছে হাসিনা সরকার। এখন বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (WTO) নালিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রক।
[আরও পড়ুন: পূর্ব আফ্রিকার মোজাম্বিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ৫০ জনের শিরচ্ছেদ করল ISIS জঙ্গিরা]
এদিকে, পাকিস্তানের অভিযোগ, বাংলাদেশের সংস্থাগুলি উৎপাদন মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য রপ্তানি করছে। ফলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাকিস্তানের হাইড্রোজেন পেরোক্সাইড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের আবেদনে পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির ন্যাশনাল ট্যারিফ কমিশন ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যটির ওপর এই শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত নেয়। তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। এ ধরনের অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কারোপের বিষয়টি যে অন্যায্য সেটি উল্লেখ করে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য পাকিস্তান সরকারকে চিঠিও দেওয়া হয়। চিঠি চালাচালি ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি রিভিউর সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান (Pakistan) সরকার। তারা বাংলাদেশ থেকে হাইড্রোজেন পেরোক্সাইড রপ্তানি করে এমন ৩টি প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে তাদের কাছে কিছু প্রশ্নের উত্তর চায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের দু’টি প্রতিষ্ঠান সেই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর জমা দেয়। এরপরও দেশটির সরকার গত ২৬ আগস্ট রিভিউ তদন্তের চূড়ান্ত নোটিস জারি করে বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত হাইড্রোজেন পেরোক্সাইডের ওপর অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কারোপ করে।
পাকিস্তানের শুল্কারোপের বিষয়টি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর একটি সভা করে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রক। ওই সভায় বাংলাদেশ থেকে হাইড্রোজেন পেরোক্সাইড রপ্তানি করে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ডিজিএম জানান, পাকিস্তানের আপিল ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে রিভিউ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। বিক্রয়মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন সময় বেছে নিয়েছে যখন বাংলাদেশে পণ্যটির বিক্রয়মূল্য কম ছিল। আবার এমন একটি সময়ে উৎপাদন মূল্য নিয়েছে যখন বাংলাদেশে পণ্যটির উৎপাদন খরচ বেশি। ফলে তারা দেখাতে পেরেছে যে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা উৎপাদন মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে হাইড্রোজেন পেরোক্সাইড রপ্তানি করছে। এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রকের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান জানান, “পাকিস্তানের অ্যান্টি ডাম্পিং আরোপের সিদ্ধান্তটি আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়নি। এখন আমাদের রপ্তানিকারকরা আবেদন করলে বিষয়টি ডব্লিউটিও-এর ডিসপুট সেটেলম্যান্ট বডিতে উপস্থাপন করা হবে। আমরা যদি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে বোঝাতে পারি যে তাদের সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক নয়, তবে ডব্লিউটিও এটি বাতিল করে দিতে পারে।”