সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাত্রাছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তলানিতে, সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ, অতি সম্প্রতি ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় প্রভুর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা, পালটা সনাতনীদের প্রতিরোধ, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা। হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের এমন অরাজক পরিস্থিতি নিয়ে সরব হলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর কথায়, "তিন মাস হয়নি এখনই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। এ কোন বাংলাদেশ!" ঘুরিয়ে হাসিনার মতোই ইউনুস সরকারকেও 'ফ্যাসিস্ট' আখ্যা দিলেন আলমগীর।
বুধবার শহিদ ডা. মিলন দিবস উপলক্ষে ঢাকার প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব। সেখানে তিনি বলেন, "এত যে প্রাণ গেল, তার ফলশ্রুতি কি এই বাংলাদেশ? তিন মাস হয়নি এখনই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। তিন মাস এখনও যায়নি একজন আরেকজনের রক্ত ঝরাচ্ছে। তিন মাসও যায়নি এখনই পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।" একদিকে যখন গোটা বাংলাদেশে ইসলামী কট্টরপন্থীদের আক্রমণের মুখে হিন্দুরা, অন্যদিকে প্রগতিশীল গণমাধ্যমও মৌলবাদীদের রোষানলে। নারায়ণগঞ্জের সম্প্রতির উৎসব লালনমেলা যেমন বন্ধ হয়েছে, তেমনই সংবাদমাধ্যম 'প্রথম আলো' দপ্তরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। মনে করিয়ে দেন আলমগীর।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনুসকে বাংলাদেশের "ভয়াবহ অস্থিরতা' নিয়ে রীতিমতো সতর্ক করেন আলমগীর। বলেন, "আমরা কি ৫ আগস্টের আগে এমন বাংলাদেশকে চিনতাম? আজ কেন এই ভয়াবহ হিংসা? আজ কেন এই ভয়াবহ অস্থিরতা? সমস্যাগুলো কোথায়? এই প্রশ্নগুলো আপনাদের কাছে আমি করছি।" দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কার্যত অন্তর্বর্তী সরকারকে কটাক্ষ করেছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, "৫ আগস্টের পর সুযোগ এসেছিল সবাই মিলে একসঙ্গে দেশের জন্য একটি পরিবর্তন নিয়ে আসার। তিন মাস হয়নি...আমাদের আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে!" সরসরি বিভেদ, বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আগলমগীর। বলেন, "এরকম চেহারা নিয়ে কোনোদিনই সাফল্য অর্জন করা যায় না। যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি, বিশ্বকে এক করার চেষ্টা করি, হয় না। নিজের ঘরেই যদি বিভেদ থেকে যায়, বিভাজন থেকে যায়, তাহলে হয় না।"
ধর্মীয় হিংসা, প্রেসকে আক্রমণ তথা সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কার্যত ইউনুস সরকার সতর্ক করে বিএনপি মহাসচিব বুধবার বলেন, "আপনারা চিন্তা করতে পারেন ধর্মকে কেন্দ্র করে কি উন্মাদনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে? আপনি চিন্তা করতে পারেন মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য প্রেসের জন্য আমরা এতদিন লড়াই করলাম, তার অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে।" নাম না করে আলমগীরের অভিযোগ, কিছু মানুষ সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলছেন। "আজ গোটা জাতিকে তাঁরা বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়ে, উসকে দিয়ে একটা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।' এর পর সরাসরি বলেন, "যারা দায়িত্বে আছেন সরকারের, এমন কোনও কথা বলবেন না দয়া করে, যা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।"
ঘুরিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ইউনুস সরকারকেই দায়ী করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, "আপনি এক ফ্যাসিস্টকে উৎখাত করেছেন, আবার এখন আরেকটা... এভাবে একটা সমাজ এগোতে পারে?" কার্যত হাসিনা সরকারের মতোই ইউনুসকে সরকারকেও ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিলেন আলমগীর। বুধবার সন্ধ্যায় বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জানিয়ে দেন, সত্যি বলার জন্য জেলে যেত আপত্তি নেই তাঁর। বলেন, "আমি বিশ্বাস করি লিবারেল ডেমোক্রেসিতে। আমি বিশ্বাস করি মানুষের স্বাধীনতায়, বাকস্বাধীনতায়, ভোটের স্বাধীনতায়।"