সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অশান্ত বাংলাদেশে (Bangladesh Unrest) ভারতের তেরঙ্গার অপমান! ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি-র ভাইরাল ছবি ঘিরে তুমুল শোরগোল। প্রতিবাদ জানিয়ে কবিতা লিখেছিলেন শ্রীজাত (Srijato Bandyopadhyay)। এবার জাতীয় পতাকা অবমাননার বিপক্ষে সোশাল মিডিয়ায় দিলেন বিজ্ঞপ্তি।
ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের প্রবেশপথে মাটিতে রাখা হয়েছে ভারতের পতাকা। যার উপর দিয়ে নির্দ্ধিধায় মাড়িয়ে চলে যাচ্ছে সেখানকার পড়ুয়ারা। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এই ছবির প্রেক্ষিতেই ২৯ নভেম্বর শ্রীজাত 'পতাকা' শীর্ষক কবিতায় লেখেন -
'শুশ্রূষা ও জল নিয়ে কী সহজে ভুলে গেলে ঋণ!
যে-পতাকা পিষে যাচ্ছ, তারই অংশ ছিলে একদিন।
ভাষা তো নিশ্চয় প্রিয়। তারও চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি।
আমাকে ‘বাঙালি’ থেকে ‘ভারতীয়’ করে তুললে তুমি।
ভালোবাসা-বিরোধের মাঝখানে সরু একটা সুতো
তাকে যদি তুলে নাও, অন্য ভাবে কথা হবে দ্রুত।
এত যদি দ্বেষ থাকে, যদি এত ঘৃণা হয় জড়ো -
তবে তো সওয়াল ওঠে, ক্ষমা কি দেশের চেয়ে বড়?
নামেই স্বাধীন তুমি। চেতনায় আজও পরাধীন।
যে-পতাকা পিষে যাচ্ছ, তারই নীচে ছিলে একদিন।'
শ্রীজাতর এই পোস্টের সমর্থনে অনেকেই পোস্টের কমেন্টবক্স ভরিয়ে দিয়েছেন। তবে একাংশ আবার মনে করছেন, লেখকের এই প্রতিবাদী কবিতা সমসাময়িক পরিস্থিতিতে আগুনে ঘৃতাহুতির কাজ করেছে। ৩০ নভেম্বর রাতে ফেসবুকে কবীর সুমন লেখেন,
'কতগুলো উজবুক পতাকা মাড়ালো
বিজ্ঞরা তাই ব্লাড প্রেশার বাড়ালো।
পতাকার চেয়ে বড় ফেলানির বুক
সেটা তাক করেছিল কার বন্দুক।
কাঁটাতারে ঝুলছিল মেয়েটা আমার
দেশের বুলেট দেশপ্রেমের খামার।
কার দেশ কার ফ্ল্যাগ কার কাঁটাতার
কোথায় রইল ঝুলে ফেলানি আমার।
পরের জন্মে মেয়ে আমি আর তুমি
ফ্ল্যাগহীন কোনও দেশে খুঁজে পাবো ভূমি।
আমার সঙ্গে গান গাইবে তুমিও
গাইবে অন্য কোনও
জন্মভূমিও।'
সোমবার নিজের নতুন পোস্টে 'একটি বিজ্ঞপ্তি' দেন শ্রীজাত। তাতে কবি লেখেন, 'আমি ফিফা বিশ্বকাপে পাপুয়া নিউ গিনি'র পক্ষে, বন্দনা পিওর ভেজ রেস্টুরেন্টে মাটন বিরিয়ানির পক্ষে, লং ড্রাইভে স্টেপনি'র পক্ষে, সৃজিতের ছবিতে আবিরের পক্ষে, রাগবি ম্যাচে চুম্বনের পক্ষে, ফেলুদার গল্পে প্রেমিকার পক্ষে, চন্দ্রিলের বক্তৃতায় প্রশংসার পক্ষে, উইম্বলডনে ইভান লেন্ডল-এর পক্ষে, ফেসবুকে কমন সেন্সের পক্ষে, জয়েসের গদ্যে সহজবোধ্যতার পক্ষে, উইকেন্ড পার্টিতে আম পান্নার পক্ষে, 'শশীবাবু শশব্যস্ত' বাক্যটিতে পেটকাটা 'ষ'-এর পক্ষে, 'লাবিউ সংঘ' ক্লাবের মাঠে হেলিপ্যাডের পক্ষে, বসে আঁকো-তে হলুদ পান্তুয়ার পক্ষে, সাইবেরিয়ায় বেবুনের পক্ষে, গীতবিতানে খারাপ লিরিকের পক্ষে, পৃথিবীতে সৌজন্যের পক্ষে এবং চাঁদের মাটিতে মাধ্যাকর্ষণের পক্ষে। এটাই আমার ব্যক্তি-রাজনীতি। এবং আমি আমার জাতীয় পতাকার অবমাননার বিপক্ষে। এটাও আমার ব্যক্তি-রাজনীতি।'