সুকুমার সরকার, ঢাকা: শেখ হাসিনা গদিচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশে এখন ক্ষমতায় অন্তর্বর্তী সরকার। নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মহম্মদ ইউনুস। কিন্তু সরকার গঠনের প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও সাধারণ নির্বাচন নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিএনপি-সহ একাধিক রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলছে। এই পরিস্থিতিতে ভোট নিয়ে কথা বললেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। জানালেন আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করবে অন্তবর্তী সরকার। তাদের এই কাজে সমর্থন করবে সেনা।
ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। আপাতত তিনি রয়েছেন ভারতে। ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু কবে হবে নির্বাচন? কী পরিকল্পনা করছে ইউনুস সরকার? এইসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে রয়টার্সের মুখোমুখী হন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। সোমবার রাজধানী ঢাকায় নিজ কার্যালয় থেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "নোবেলজয়ী ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আমি তাঁর পাশে থাকব। যাই হোক না কেন। যাতে তিনি তাঁর কাজ সম্পন্ন করতে পারেন।" এছাড়া সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার একটি রূপরেখা দেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস ১৭ কোটির বাংলাদেশে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করতে বিচার বিভাগ, পুলিশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে ওয়াকার জানান, "সংস্কারের ধারাবাহিকতায় এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটা উচিত। তার জন্য ধৈর্য ধরার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে আমি বলব যে এই সময়সীমার মধ্যেই আমাদের একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত। ইউনুসের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে সাক্ষাৎ হয়। আমাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। অস্থির সময়ের পর দেশকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে সেনাবাহিনী।"
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ওয়াকার। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে বদ্ধপরিকর তিনি। তাঁর কথায় ,"আমার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করবে না। আমি এমন কিছু করব না, যা আমার বাহিনীর জন্য ক্ষতিকর। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাকে পেশাদার রাখতে চাই। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সরকারের সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে সংগতি রেখে সেনাবাহিনীও তার সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। ইতিমধ্যে কিছু সেনাসদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। যদি কোনও কর্মরত সেনাসদস্য দোষী সাব্যস্ত হন, আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। সামরিক বাহিনীকে কখনই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। তেমনই একজন সৈনিকের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত নয়।"
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যা বয়কট করে বিএনপি, জামাতের মতো সমমনা দলগুলো। কিন্তু বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন শেখ হাসিনা। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়েছিল আওয়ামি লিগ। কিন্তু ৭ মাসের মধ্যেই ছন্দপতন ঘটে। ব্যাপক জনরোষের মুখে গদি হারান মুজিবকন্যা। এখন হাসিনার অবর্তমানে ক্ষমতায় ফেরার লড়াইয়ে শামিল বিএনপি। ময়দানে রয়েছে জামাত, হেফাজতে ইসলামির মতো দলও। ফলে আগামী এক-দেড় বছরে কী হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ? তার উত্তর রয়েছে সময়ের গর্ভেই।