সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সেনা-ছাত্র সংঘাতে উত্তপ্ত বাংলাদেশ। 'জুজু'র নাম আওয়ামি লিগ। ফের কী পদ্মাপাড়ের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, শেখ হাসিনার দল? নাকি সেনাশাসনই ভবিতব্য? শনিবার একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট। ‘রিফাইন্ড (সংশোধিত) আওয়ামি লিগ’ গঠনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লা সম্প্রতি ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় সেনার সদর দপ্তর জানিয়েছে, হাসনাত আবদুল্লার পোস্ট ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি ছাড়া অন্য কিছু নয়’। কেন এই 'স্টান্টবাজির' প্রয়োজন পড়ছে?

যেহেতু আন্দোলনকারী ছাত্রদের সমর্থনে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সংখ্যালঘু অত্যাচারের পাশাপাশি ভেঙে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা, ভঙ্গুর অর্থনীতির জেরে মূল্যবৃদ্ধি মাত্রা ছাড়িয়েছে। এইসঙ্গে সাধারণ মানুষের উপর কট্টরপন্থীদের অত্যাচার। মাথা চারা দিয়েছে জঙ্গিবাদ। এর ফলে গরিব থেকে মধ্যবিত্ত, বাংলাদেশের আমজনতা বিরক্ত। এই পরিস্থিতিতে গত মাসের শেষে বিডিআর বিদ্রোহের শহিদ দিবসে প্রাক্তন সেনাদের ক্লাবের অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার সকলকে সতর্ক করে বলেন, "আমাদের অন্য কিছু ভাবতে বাধ্য করবেন না। এমন পরিস্থতি সৃষ্টি করবেন, যাতে আমাদের অন্য কিছুর কথা ভাবতে হয়।" একইসঙ্গে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করার মতো কোনও মন্তব্য না কার পরামর্শও দেন সেনাপ্রধান।
সেনার এই হুঁশিয়ারিতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে ইউনুস ও তাঁর দলবল। মনে করা হচ্ছে সেই কারণেই তড়িঘড়ি সেনার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে হাসনাত আবদুল্লার আগ্রাসী ফেসবুক পোস্ট। যেখানে তিনি দাবি করেন, দিন দশেক আগে দুই সঙ্গী-সহ তাঁকে সেনা বাহিনীর দপ্তরে ডাকা হয়। সেখানে তাঁদের বলা হয়, আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামি লিগকে অংশগ্রহণ করতে দিতে হবে। আওয়ামির ‘পরিষ্কার’ ভাবমূর্তির নেতানেত্রীরা তাঁদের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। শেখ হাসিনাকে উপেক্ষা করে ‘বঙ্গবন্ধুর আওয়ামি লিগ’ করবেন এই নেতারা। এই নতুন আওয়ামি লিগকে মেনে নিতে হবে। হাসনাত আরও দাবি করেন, উপস্থিত সেনা কর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, আওয়ামিকে বাদ দিয়ে ‘ইনক্লুসিভ’ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এমনকী হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, আওয়ামি লিগের বিরোধিতা করার পরিণাম তাঁদের ভোগ করতে হবে।
হাসনাতের এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ সেনাবাহিনী। সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিষয়টি (হাসানত আবদুল্লার অভিযোগ) নিয়ে নেত্র নিউজ যোগাযোগ করলে একজন মুখপাত্রের মাধ্যমে বক্তব্য দেয় সেনাসদর। হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্টকে “সম্পূর্ণ রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি বৈ অন্য কিছু নয়” বলেও মন্তব্য করা হয়েছে সেনাসদরের বিবৃতিতে। এ ছাড়া ২৭ বছর বয়সি এই ছাত্রনেতার বক্তব্যকে “অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার” হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে সেনাবাহিনী।’
এদিকে সেনাকে জড়িয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত সম্প্রতি ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছেন, তার সঙ্গে ‘দ্বিমত’ প্রকাশ করেছেন এনসিপির আরেক সংগঠক সারজিস আলম। সারজিস আজ রোববার এক পোস্ট লেখেন, ‘সেদিন (১১ মার্চ) সেনানিবাসে আমাদের ডেকে নেওয়া হয়নি।’ সেনার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি যেভাবে হাসানত সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, তা সমর্থন করেন না বলেও জানিয়েছেন সারজিস।
দুই ছাত্রের এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে, সংশোধিত আওয়ামি লিগ নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের দিক থেকে কোনও আপত্তি নেই। পাশাপাশি দেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা পরিবর্তনের সুপারিশের বিরোধিতা করেছে বিএনপি। রোববার দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিতভাবে দলীয় মতামত জমা দেয় বিএনপি। সেখানে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের ছাত্র বিপ্লবকে এক কাতারে আনা সমুচিত বলে মনে করে না তারা। রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তন করার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করে না দলটি। স্বভাবতই বিএনপির এই মত পছন্দ হচ্ছে না জামাতের মতো কট্টরপন্থীদের। সব মিলিয়ে পদ্মাপাড়ের রাজনীতিতে জটিলতা বেড়েই চলেছে। প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি গৃহযুদ্ধ?