সুকুমার সরকার, ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদিন-সহ ৮টি জাতীয় দিবস আগেই বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। এবার শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের নামাঙ্কিত ১৪টি হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করে দিল মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের এই পদক্ষেপের পরই বিশ্লেষকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ থেকে মুজিব-হাসিনার স্মৃতি মুছে ফেলতেই কি এই সিদ্ধান্ত?
বেশ কয়েকদিন ধরেই শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট-সহ ১৪ মেডিক্যাল, ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করা নিয়ে আলোচনা করছিল ইউনুস সরকার। গত ৩১ অক্টোবর ৬ মেডিক্যাল কলেজের নতুন নামকরণ করে বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়। এর পর স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেন, জাতীয় ও জেলা পর্যায়ের ১৪টি হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট নাম বদলের পর হয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি। ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হয়েছে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। গোপালগঞ্জের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট হয়েছে গোপালগঞ্জ চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের নামকরণ করা হয়েছে টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ নামে। ঢাকার শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট হয়েছে ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট। গোপালগঞ্জ শেখ লুৎফর রহমান ডেন্টাল কলেজ হয়েছে গোপালগঞ্জ ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল। গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে পরিবর্তন করা হয়েছে গোপালগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। এখানকার ট্রমা সেন্টার থেকেও সরে গিয়েছে শেখ সায়েরা খাতুনের নাম।
এছাড়াও নাম বদলের তালিকায় রয়েছে সিরাজগঞ্জের ২৫০ শয্যার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল, জামালপুরের শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। খুলনা শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদির বঙ্গবন্ধু (দলদিয়া) ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, কটিয়াদি, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও দিনাজপুরের এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ আগস্ট ব্যাপক গণ আন্দোলনের জেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। বাধ্য হন দেশ ছাড়তে। এর পর ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তার কয়েকদিনের মধ্যেই আসে ১৫ আগস্ট। এতদিন এই শোক দিবস পালনের জন্য সরকারি ছুটি থাকত বাংলাদেশে। কিন্তু হাসিনা গদিচ্যুত হতেই এবছর সেই ছুটি বাতিল করে দেয় ইউনুস সরকার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হাসিনা-সহ বঙ্গবন্ধু মুজিবের স্মৃতি মুছতে তৎপর বিএনপি, জামাত-সহ একাধিক রাজনৈতিক দল। আর সেই মতোই পদক্ষেপ করছে ইউনুস সরকার। ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের নানা প্রান্তে হাসিনা ও মুজিবের মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় মুজিবের ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি। এই বাড়িতে স্বপরিবারে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল। হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সেই বাড়ি জাদুঘর হিসাবে সংরক্ষণ করেছিলেন। সেই চিত্র দেখে অনেকেই মনে করেছিলেন, হাসিনার পরিবারের স্মৃতি মুছে ফেলতেই এই কাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। এবার অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্তে সেই বিতর্কই আরও একবার উসকে গেল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।