সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অসমের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলফার (ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ অসম) কমান্ডার পরেশ বড়ুয়ার মৃত্যুদণ্ড খারিজ বাংলাদেশে! চট্টগ্রাম অস্ত্র চোরাচালান মামলায় কুখ্যাত এই জঙ্গিনেতার ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশের হাই কোর্ট। শুধু তাই নয়, বহুল আলোচিত এই মামলায় সেদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর-সহ ছয়জন আসামিকেও বেকসুর খালাস করেছে আদালত। এই নির্দেশে সিঁদুরে মেঘ দেখছে ভারত। ফের কি নাশকতার আগুনে জ্বলে উঠবে অসম-সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো?
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় অস্ত্র বোঝাই ১০টি ট্রাক। যা নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের হয়। সেবছর অসমের জঙ্গিনেতা পরেশ বড়ুয়া বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। অভিযোগ ছিল, আলফার নাশকতামূলক কার্যকলাপের জন্যই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র পাচার করা হচ্ছিল। ওই মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় ঘোষণা করে। প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী ও জামাতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, আলফার কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুই গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-সহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলাতে এই সকল অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও দেওয়া হয়।
আদালতের এই রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মামলার সমস্ত নথিপত্র হাই কোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছয়। এবং ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে, ২০১৪ সালে সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করে কারাগারে থাকা আসামিরা। জানা গিয়েছে, গত ৬ নভেম্বর ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের উপর শুনানি শুরু হয়। সেই দিন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর-সহ কয়েকজন আসামির হয়ে আদালতে লড়েন আইনজীবী এস এম শাহজাহান। আজ বুধবার ওই মামলার শুনানি শেষে হাই কোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের বেঞ্চ রায় ঘোষণা করে। লুৎফুজ্জামান বাবর-সহ ছয়জন খালাস পান ও পরেশ বড়ুয়ার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড থেকে কমে যাবজ্জীবন হয়। এছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর ছয় আসামির সাজা কমিয়ে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
প্রসঙ্গত, আটের দশকের গোড়া থেকেই সার্বভৌম অসমের দাবিতে উত্তপ্ত হয়েছিল ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্য। পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বে আগুন জ্বলেছিল অসমে। শেষ পর্যন্ত ১৯৯০-এ আলফাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। তার পরেও হামলা চালিয়ে গিয়েছে বিচ্ছিন্নবাদীরা। বছর চারেক আগে শোনা যায়, পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন আলফা জঙ্গিরা চিনের ইউনান প্রদেশে ঘাঁটি গেড়েছে। সেখান থেকেই ভারতে নাশকতার চক্রান্ত চলছে। তবে এখন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন নামমাত্র রয়েই গিয়েছে অসমে। সেই আন্দোলনকারীদের মূল স্রোতে ফেরাতে গত বছর বড় পদক্ষেপ করেছিল কেন্দ্র ও অসম সরকার। আলফার আলোচনাপন্থীদের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল অসম সরকার ও কেন্দ্র। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনে অপর একটি শাখা আলফা (স্বাধীন) এই চুক্তির অংশ হয়নি। ফলে পরেশ বড়ুয়ার মৃত্যুদণ্ড খারিজ হয়ে যাওয়ায় ফের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে নাশকতা বাড়বে বলে আশঙ্কা দিল্লির।