সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করতে মরিয়া পাকিস্তান। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়াচ্ছে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারও। জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে চলেছে পণ্যবাহী জাহাজ। আগামী শুক্রবার ‘এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং’নামে জাহাজটির পৌঁছনোর কথা রয়েছে। এই ঘটনাপ্রবাহে চিন্তিত ভারত।
সূত্রের খবর, পাকিস্তানের জাহাজটিতে প্রায় ৮২৫টি কন্টেনার রয়েছে। যেগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে নামিয়ে অন্তত ১ হাজার ২০০টি কন্টেনার নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে শিপিং কোম্পানি ‘ফিডার লাইনস ডিএমসিসি’র। বলে রাখা ভালো, পাকিস্তানের করাচি বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রামের সরাসরি কন্টেনার জাহাজের পরিষেবা চালু হয় গত নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। কিন্তু এবার এই কন্টেনারগুলোতে কী রয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। তবে শিপিং কোম্পানিটি জানিয়েছে, মূলত পোশাকশিল্পের কাঁচামাল ও রাসায়নিক, খনিজ পদার্থ ও অন্য কিছু পণ্যই পাকিস্তান থেকে আনা হচ্ছে কন্টেনারগুলোতে।
উল্লেখ্য, হাসিনা গদি হারানোর পর থেকেই বাংলাদেশে মাথাচারা দিয়ে উঠেছে জামাত, হেফাজতে ইসলামের মতো মৌলবাদী দলগুলো। তাদের বাড়বাড়ন্তে বিপন্ন হিন্দুরা। বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার জামাত-হেফাজতে। চুপ নেই বিএনপিও। যে হারে অত্যাচার বেড়ে গিয়েছে তাতে বহু হিন্দু বাংলাদেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন। ভারতীয় হিন্দু জানলে সেই অত্যাচারের পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়ছে। এদিকে জামাতের মতো দলের কাছে হাত-পা বাঁধা ইউনুস সরকারের। এই পরিস্থিতিকেই কাজে লাগাতে চাইছে পাকিস্তান।
৩ ডিসেম্বর ঢাকার গুলশনে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ আহমেদ মারুফ। হাসিনার পতনের নেপথ্যে ইসলামাবাদের কলকাঠি নাড়ার নানা তত্ত্ব উঠে এসেছিল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে। আওয়ামি লিগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হতেই বিএনপির সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়াতে শুরু করে পাকিস্তান। হাসিনা গদি হারানোর কয়েকদিন মধ্যেই খালেদা জিয়ার দলের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন পাক প্রতিনিধিরা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ফের একবার যখন উত্তাল বাংলাদেশ, ঠিক তখনই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে পাকিস্তান।
এই সাক্ষাতের পরই পাকিস্তানিদের সুবিধার্তে নির্দেশিকা জারি করে ইউনুস সরকার। গত ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সিকিউরিটি সার্ভিস ডিভিশন থেকে বিদেশমন্ত্রকে কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। তাতে সাফ বলা হয়, পাকিস্তানিদের জন্য যেন বাংলাদেশের ভিসা পাওয়া সহজতর করা হয়। এই নির্দেশিকা সমস্ত বাংলাদেশি দূতাবাস এবং ডেপুটি হাই কমিশনগুলোর জন্য জারি করা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের ভিসা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতদের জন্যও ঝঞ্ঝাটমুক্ত করতে বলা হয়েছে। যাতে যেকোনও জায়গা থেকেই তাঁরা সহজে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারেন। এরপর এখন বাংলাদেশে ভিড়ছে পাকিস্তানের জাহাজ। যা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ভারতের কপালে। কারণ পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে আগামী দিনে বাংলাদেশে বাড়তে পারে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। যার আঁচ এসে লাগবে দিল্লিতেও। পদ্মাপার থেকেই নাশকতার ছক কষা হবে। ফলে ঢাকা-ইসলামাবাদের এই ‘বন্ধুত্বে’র উপর কড়া নজর রাখছে ভারত।