সুকুমার সরকার, ঢাকা: যেমন শিক্ষাপদ্ধতি, তেমনই শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী। পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান, মুখস্তবিদ্যার উপর ভর করেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের (Bangladesh) স্কুলশিক্ষা। চিরাচরিত পদ্ধতিতে পড়ানো, পরীক্ষা নেওয়া, খাতা দেখে নম্বরের মাধ্যমে মূল্যায়ণ করা – এভাবেই চলছিল এতদিন। নতুন কোনও পদ্ধতিতে শেখানো কিংবা শিক্ষার্থীর মেধার বিকাশ ঘটানোয় উৎসাহ দেওয়ার কথা তেমন সক্রিয়ভাবে ভাবা হয়নি। করোনা কালে স্কুল বন্ধের সময়ে পড়ুয়াদের মূল্যায়ণ করতে গিয়ে ঠিক এই জায়গায় ধাক্কা খাচ্ছেন বাংলাদেশের শিক্ষকরা। সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্ট দিতে গিয়ে সৃজনশীল (Innovative) কোনও কাজ দিয়েই উঠতে পারছেন না তাঁরা। কারণ, এই পদ্ধতি একেবারেই অপরিচিত তাঁদের কাছে। ফলে প্রশ্ন তৈরিই এখন বিশ বাঁও জলে।
করোনা (Coronavirus) পরিস্থিতিতে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আপাতত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ প্রশাসন। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণির পড়ুয়াদের পরীক্ষা নেওয়াও সম্ভব নয়। নতুন ক্লাসে ওঠার মাপকাঠি হিসেবে তাই মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা দপ্তর গাইডলাইন ঠিক করে দিয়েছিল অক্টোবরের শেষ দিকে। বলা হয়েছিল, স্কুল থেকে পড়ুয়াদের সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে সপ্তাহের প্রথমে। তাতে সংক্ষিপ্ত, অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন থেকে সৃজনশীল প্রশ্নও থাকবে, যাতে পড়ুয়াদের নিজস্ব ভাবনাচিন্তার প্রতিফলন ঘটে। তাতে তাদের মন বুঝতে সুবিধা হয়। সেই অ্যাসাইনমেন্টের কাজ শেষ করে সপ্তাহের শেষে তা স্কুলে জমা দেবে পড়ুয়ারা। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই নতুন পদ্ধতিতে মূল্যায়ণের কাজ শেষ করতে হবে।
[আরও পড়ুন: স্ত্রীর হাতে নিপীড়িত, বাংলাদেশে জোরাল পুরুষ নির্যাতন বিরোধী আইনের দাবি]
কিন্তু এই সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্টের প্রশ্ন তৈরি করতে গিয়েই কার্যত হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের একটা বড় অংশকে। সৃজনশীল প্রশ্নের জায়গায় তাঁরা কিছু দিতেই পারছেন না। কারণ, এ যাবৎ পাঠ্যসূচির বাইরে এ ধরনের প্রশ্ন করার অভিজ্ঞতা তাঁদের নেই। পড়ুয়াদের সৃজনশীলতা উসকে দেওয়ার বদলে তাঁরা নিজেরাই নতুন করে ভাবতে বাধা পাচ্ছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ৪৫ শতাংশ শিক্ষক সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্টের প্রশ্ন তৈরিতে এই জায়গাতেই আটকে পড়েছেন।
[আরও পড়ুন: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যাচ্ছে বাংলাদেশ]
কারণ হিসেবে দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, শিক্ষকদের মধ্যে অনেকের এখনও বিএড ট্রেনিং হয়নি। এই ট্রেনিংয়ের একটা অংশ সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি। তাই ট্রেনিংপ্রাপ্ত নন যাঁরা, তাঁরাই বাধা পাচ্ছেন। তিনি এও মেনে নেন যে সৃজনশীল শিক্ষার চর্চা যেখানে উন্নতির দিকে যাওয়ার কথা, তাতে ক্রমশ অবনতিই হয়েছে। এতে শিক্ষকদেরও যথেষ্ট দায় আছে বলে মনে করছেন তিনি। কিন্তু সত্যিই কি দায় কেবল শিক্ষকদেরই? নাকি গোটা শিক্ষাপদ্ধতির? এ থেকে শিক্ষা নিয়ে করোনা পরবর্তী সময়ে তাহলে চিরাচরিত ব্যবস্থার বদলে নতুন কোনও শিক্ষাপদ্ধতির কথা ভাবা হবে? এই প্রশ্নগুলো থাকছেই।