সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে এবার ভারতকে চাপ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের! দ্রুত এই চুক্তির জট কাটাতে দিল্লির সঙ্গে ফের আলোচনায় বসতে চায় ঢাকা। বন্ধুত্বপূর্ণভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তি ভারত সম্পন্ন না করলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইউনুস সরকারের জলসম্পদ উপদেষ্টা সইদা রিজওয়ানা হাসান।
শীতকালে তিস্তার কিছুটা জল বাংলাদেশকে দেওয়ার ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা করছে ভারত। কিন্তু এনিয়ে দুদেশের মধ্যে বহু বৈঠক হলেও উত্তরবঙ্গের অসুবিধার কথা জানিয়ে আপত্তি তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে থমকে রয়েছে এই চুক্তি। গত জুন মাসে ভারত সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তিস্তা নিয়ে একদফা আলোচনা করেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নদী নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল দিল্লির আধিকারিকদেরও। কিন্তু তিস্তার জট না কাটলেও পদ্মা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে গত আগস্ট মাসে। গণ অভ্যুত্থানের মুখে হাসিনার পতনের পর এখন বাংলাদেশের মাথায় মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এবার তারা দ্রুত তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে নিষ্পত্তি চায় মোদি সরকারের কাছে।
অধরা তিস্তা চুক্তি নিয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের জলসম্পদ উপদেষ্টা তথা বিখ্যাত পরিবেশবিদ সইদা রিজওয়ানা হাসান বলেন, "আমি তিস্তার জলবণ্টনের বিষয়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট পদাধিকারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সকলেই তিস্তার চুক্তি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে চাই। আর সেটাই উচিত। আমাদের আশা, এই চুক্তির সমস্যাগুলো দুদেশই বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে বৈঠকের মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে পারবে। আন্তর্জাতিক জলবণ্টন আইন অনুযায়ী নদীর পার সংলগ্ন দুই দেশের মধ্যে জল ভাগ করে নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেটাই মানা হবে তিস্তা চুক্তিতে। জলবণ্টন নিয়ে কিন্তু দুদেশ সম্মত হয়ে চুক্তির একটি খসড়া তৈরি করেছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতায় তা আর চূড়ান্ত হয়নি।"
এর পরই দ্রুত এই চুক্তির নিষ্পত্তি নিয়ে হুঁশিয়ারির সুর শোনা যায় রিজওয়ানার গলায়। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিষয়টি তুলে ধরার কথা উল্লেখ করে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, "আমি যখন বলছি, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে এনিয়ে আলোচনা করব তার মানে কিন্তু বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইনের পথেও হাঁটতে পারে। যদি চুক্তি না হয় তাহলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইনি নথিপত্র এবং নিয়মনীতির শরণাপন্ন হতে পারে।" বাংলাদেশের এই বক্তব্যের পর এবার সাউথ ব্লক কী বার্তা দেয় সেদিকেই নজর সকলের।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরেই তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। চুক্তির প্রস্তাব ছিল, 'ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তিস্তার জলের ৩৭.৫ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ।' কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তিস্তার জল শুকিয়ে গিয়েছে। তাই রাজ্যের ক্ষতি করে বাংলাদেশকে জল দেওয়া যাবে না। কিন্তু তোর্সার জল ভাগ করে নিতে রাজি ছিলেন তিনি। কিন্তু এর সমাধান এখনও হয়নি। চলতি বছরে হাসিনার ভারত সফরেও তিস্তা নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিল ঢাকা। কিন্তু কথাবার্তা হলেও কাজ খুব একটা এগোয়নি। কিন্তু এবার তৎপর হয়েছে বাংলাদেশের নয়া সরকার। যেভাবে দিল্লিকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে এবার তিস্তা কাঁটায় বিদ্ধ হতে পারে দিল্লি-ঢাকা সম্পর্ক। এমনটাই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।