সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশে পুরোদমে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে আদানি গ্রুপ। কিন্তু পড়শি দেশের কাছে তাদের প্রায় ৮০ কোটি ডলার বকেয়া রয়েছে। এবার সেই টাকা মেটাতে হস্তক্ষেপ চেয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মহম্মদ ইউনুসকে চিঠি লিখেছেন আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি(Gautam Adani)। এবার কী তাহলে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ বিক্রি বন্ধ করবে আদানিরা?
সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে জানানো হয়েছিল যে, গত আট থেকে নয় মাস ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ আদানির ৮০ কোটি ডলার পাওনা রয়েছে বাংলাদেশের কাছে। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে গত জুন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। সেই সময় বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু গত আগস্ট মাসে বড় রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছে পদ্মাপারে। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় এখন সেদেশে দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু এর মাঝে এবার ঋণদাতারা চাপ বাড়াচ্ছে আদানি গ্রুপের উপর।
প্রথম আলো সূত্রে খবর, মঙ্গলবার ঋণ মেটাতে ইউনুসের হস্তক্ষেপ চেয়ে গৌতম আদানি চিঠিতে লেখেন, 'আমরা বাংলাদেশকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বজায় রাখছি। কিন্তু এবার ঋণদাতারা আমাদের প্রতি কঠোর হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে আমরা ৮০ কোটি ডলার পাই। সেই অর্থ দ্রুত পরিশোধ করার জন্য হস্তক্ষেপ করতে আপনাকে অনুরোধ করছি। আপনার দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতি আমি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনরায় ব্যক্ত করছি।’ ফলে এখনই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করছে না আদানিরা। অপেক্ষা থাকবে ইউনুসের জবাবের।
[আরও পড়ুন: ঘুম উড়বে পাকিস্তানের, আওতায় চিনও, এবার ৯০০০ কিমি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বানাচ্ছে ভারত]
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে আদানি পাওয়ার। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পড়শি দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর হয়ে। বিদ্যুৎ কিনতে ২০১৭ সালে তৎকালীন হাসিনা সরকারের অধীনে আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। চুক্তি অনুযায়ী আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে পিডিবি। গত বছরের এপ্রিল থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে তারা। চুক্তি অনুযায়ী পিডিবির চাহিদা অনুসারে ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে আদানি। যা দিতে না পারলে আদানিকে জরিমানা দিতে হবে। আবার বিদ্যুৎ না নিলেও আদানিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া (ক্যাপাসিটি পেমেন্ট) পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে।
এদিকে শুধু আদানি গ্রুপই নয়। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী পাঁচ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশের কাছে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি বকেয়া পাওনা রয়েছে। কয়েকদিন আগেই এক রিপোর্টে এই তথ্য জানায় ইকোনমিক টাইমস। সেখানে বলা হয়েছে, দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে এত টাকা বকেয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়নি। তবে এখন তারা বলছে, এমনভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে না। কেন না তাদের কোম্পানিকে অন্য অংশীদারদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, হাসিনার আমলে দিল্লির সঙ্গে বন্ধুত্ব মজবুত হয়েছিল ঢাকার। কিন্তু রাজনৈতিক পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সেই বন্ধুত্ব কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে। নতুন করে ভাবনাচিন্তা বাংলাদেশে লগ্নিকারী ভারতীয় সংস্থাগুলো। প্রশ্ন উঠছে হাসিনার প্রস্থানে ধাক্কা খাবে তাদের ব্যবসা? ওয়াকিবহাল মহলের নজর থাকবে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের দিকে।
[আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে বিপাকে ফারুক আবদুল্লা! দুর্নীতি মামলায় নয়া অভিযোগে আদালতে ইডি]