সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলের সংবিধান বাতিল দ্রুত বাতিল করতে হবে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারকে। এমনই দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। যার বিরোধিতায় সরব বিএনপি। খালেদা জিয়ার দলের সাফ বক্তব্য, সংবিধান বাতিল করলে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হবে। সংশোধন বা সংযোজন করা যেতে পারে। দেশের সংবিধান বাতিল করা হলে ৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধকে অস্বীকার করা হবে।
গতকাল সোমবার এক জনসভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, "অনেক তরুণ শিক্ষার্থী সংবিধান বাতিল করতে বলছেন। কটি জাতির আত্মজীবনী হচ্ছে সংবিধান। সেটির সংযোজন হতে পারে, সংশোধন হতে পারে। সেখানে আওয়ামি লিগের ফ্যাসিজমের যে বৈশিষ্ট্য, সেটা বাদ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বাতিল করা যেতে পারে না। আমেরিকার সংবিধানের ধারাবাহিকতা রয়েছে, সংশোধন রয়েছে। কিন্তু বাতিল করা হয়নি।"
বৈষম্যবিরোধী নেতাদের দাবি উল্লেখ করে এদিন রিজভী বলেন, "জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর প্রত্যেকেই সমর্থন করেছেন অধ্যাপক মহম্মদ ইউনুসকে। কিন্তু আমাদের বক্তব্য, জনপ্রত্যাশা, জন-আকাঙ্ক্ষার বাইরে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার অন্য এজেন্ডা নিয়ে কাজ করলে দেশের মানুষ মেনে নেবেন না। এখনও চালের দাম কমেনি, চিনি, আলুর দাম কমেনি। শেখ হাসিনার কারণে গত বছর থেকে ভারত থেকে আলু আমদানি করতে হয়। এবারও যদি আলু আমদানি করতে হয়, তাহলে মানুষ বলবেন, মহম্মদ ইউনুসের সরকারকে আমরা সমর্থন করেছি, তাহলে কী লাভ হল? বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেন বাড়ছে?"
বলে রাখা ভালো, গতকাল জুলাই-আগস্ট গণঅভুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার কথা জানান ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এই খসড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলের সংবিধান বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, হাসিনা জমানায় নিয়োগ হওয়া রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনেরও অপসারণ চেয়েছেন ছাত্রনেতারা। ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা চাই বাহাত্তরের সংবিধান, মুজিববাদী চেতনা ও আওয়ামি লিগের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মানুষের দাঁড়ানোকে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। আমরা চাই মুজিববাদী সংবিধানকে কবরস্থ ঘোষণা করুক সরকার। যে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে এক দফার শেখ হাসিনার পতন ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘোষণা করা হয়েছিল, ঠিক সেই জায়গা থেকেই বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে।”
তবে ছাত্র আন্দোলনের এই ঘোষণাপত্রের সিদ্ধান্ত জানার পর নড়েচড়ে বসেছে ইউনুস সরকার। সূত্রের খবর, এখন কোনওরকম বিতর্ক জড়াতে চাইছে না তারা। তাই তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাফ জানিয়ে দেন, “বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। এটা ওদের ব্যক্তিগত উদ্যোগ। এর সঙ্গে সরকারের বিন্দুমাত্র কোনও সম্পর্ক নেই। যাঁরা ছাত্রদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন, তাঁরা একটি ব্যক্তিগত উদ্যোগকে সমর্থন করছেন।”
উল্লেখ্য, ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদিন-সহ ৮টি জাতীয় দিবস বাতিল করে দেয় ইউনুস সরকার। হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামাঙ্কিত হাসপাতালগুলোর নামও বদলে দেওয়া হয়েছে। বঙ্গভবন অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি ভবন থেকেও সরানো হয়েছে মুজিবের ছবি। বাংলাদেশের ফিল্ম সিটি থেকেও বাদ দেওয়া হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নাম। আগামী বছর থেকে আর পাঠ্যবইয়েও থাকছে না ভাষা আন্দোলন নিয়ে মুজিবের রচনা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’। পাঠ্যক্রমে যুক্ত হবে আরবি ভাষা। এমনকী বঙ্গবন্ধুর বদলে ছাত্র আন্দোলনের ছবি দিয়ে নতুন নোট ছাপা শুরু হয়েছে। ফলে সবদিকে মুজিব ও হাসিনার স্মৃতি মুছে ফেলতে তৎপর ইউনুস সরকার। এবার মুজিবের সংবিধান বাতিলের দাবি ছাত্রনেতাদের। কিন্তু এর বিরোধিতা করছে বিএনপি।