কৃষ্ণকুমার দাস: সাত বছর আগে খেলার মাঠে হাঁটুতে চোট পেয়েছিলেন তিনি। আর পাঁচ বছর আগে রাজনীতির ময়দানে নেমে বিপুল ভোটে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন বাংলাদেশ (Bangladesh) ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তাজা (Mashrafi Bin Mortaza)। আর এবার সেই ‘সাংসদের মুকুট’ ধরে রাখতে নেমে উদয়াস্ত খাটুনির ধাক্কায় চোট পাওয়া হাঁটুর ব্যথ্যা আরও বেড়ে গিয়েছে। বসে গিয়েছে গলার স্বর, গায়ে জ্বর নিয়েও সংসদীয় কেন্দ্র নড়াইলের এমাথা থেকে ওমাথা চষে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina)স্নেহের এই প্রার্থী। সবার কাছেই মূলত আবেদন করছেন, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সবাইকে ভোট দেওয়ার।
গত ১০ দিনে মাশরফি কেন্দ্রের নানা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম, বাজার ও মোড়ে মোড়ে গিয়ে দৈনিক ২০ থেকে ২২টি করে পথসভা করেছেন। উলটোদিকে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি (BNP) সবাইকেই ভোট বয়কটের আহ্বান জানাচ্ছে। সেই আবেদনে তেমন একটা সাড়া না মিললেও প্রার্থী হিসাবে কিছুটা আতঙ্কিত মাশরফি পথসভায় বলছেন, ‘‘আগামী প্রজন্ম ভবিষ্যতের জন্য ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আপনাদের মূল্যবান ভোটটি দেবেন।’’ এখানেই থামছেন না মাশরাফি বিন মোর্তাজা। আবেদনের পাশাপাশি নাম না করে বিএনপি’র ভোট বয়কটকে তীব্র কটাক্ষ করে বলছেন, ‘‘আপনারা যদি ভোটকেন্দ্রে না যান, ভুল করবেন। আমার মতো মাশরাফিরা আপনাদের পাশে আসবে না। আমি নড়াইলের সন্তান। আমার একা ভালো থাকা নয়, সবাইকে ভালো রাখা আমার দায়িত্ব। যে কাজ করে তাঁর ভুল হয়। যে কাজ করে না, সে সমালোচনা করে।’’ এদিনও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ভোট বয়কটের প্রচার করেছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। অভিনব প্রচারে নামেন খুলনার টুটপাড়া কবরস্থানে একদল খালেদা জিয়ার সমর্থক। কবরে শায়িতদের উদ্দেশ্যে আবেদন করে বলেন, ‘‘দয়া করে আপনারা কেউ এসে ভোট দিয়ে যাবেন না।’’ বিএনপির অভিযোগ, কারচুপি এতটাই মারাত্মক, যে মৃত ভোটাররা এসে আওয়ামি লিগের হয়ে ভোট দেন।
[আরও পড়ুন: শীঘ্রই গ্রেপ্তার কেজরিওয়াল? আশঙ্কায় AAP, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে বাড়ছে নিরাপত্তা]
২০১৭ সালে খেলার মাঠে ক্যাচ লুফতে গিয়ে হাঁটুতে গুরুতর চোট পান ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ মাশরফি। বেশ কিছুদিন মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। পরে সেই ব্যথা কমলেও পুরোপুরি সারেনি। আগে থেকেই ডান হাঁটুতে পাওয়া আঘাতের ব্যথা গত কয়েকদিনে ছোটাছুটির দাপটে অনেকটাই বেড়েছে। পেনকিলার খেয়েও ছুটছেন। মাশরফির আপ্তসহায়ক জামিল আহমেদ এদিন টেলিফোনে নড়াইল থেকে জানান, ‘‘হাঁটুর ব্যাথা অনেকটাই বেড়েছে। অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু নির্বাচনী ব্যস্ততার কারণে অস্ত্রোপচার করতে পারছেন না স্যর।’’
খেলতে খেলতেই গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে আওয়ামি লিগ প্রার্থী হয়ে রেকর্ড ভোটে জেতেন নিজের জন্মভিটের কেন্দ্র নড়াইল থেকে। সেই ভোটের প্রচার দেখতে পদ্মা পেরিয়ে নড়াইল এসে দেখেছিলাম, চারদিকে শুধুই মাশরফির ছবিতে দেওয়া ফ্লেক্স। অধিকাংশ ফ্লেক্সেই ছিল তাঁর খেলার নানা মুহূর্তের অ্যাকশন ছবি। হ্যাঁ, শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকা বেশ কিছু ছবিও ছিল সেই প্রচারে। কিন্তু এবার প্রচারের স্টাইল বদলে দিয়েছেন স্বয়ং তারকা-সাংসদ। গত পাঁচবছরে কী কী কাজ করেছেন সেটাই বিভিন্ন এলাকায় হোর্ডিং করে সেটে দিয়েছেন তিনি। ‘কাজের মানুষ’ হিসাবে নিজেকে তুলে ধরার তাগিদ দেখা গিয়েছে মাশরফির প্রচারে। মোটর বাইকে চেপে সারাদিনে ২৫/৩০ কিমি ঘুরছেন। এক একটি পথসভায় ৫ থেকে ৭ মিনিট বলছেন। পথসভার মাশরফি সরাসরি ভোটারদের উদ্দেশে বলছেন, ‘‘আপনাদের সন্তান ও নাতিপুতিদের ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। তাদের জন্য কাজ করছি। আগামী ৭ তারিখ পর্যন্ত আপনারা আমার দায়িত্ব নেন। ৮ তারিখ থেকে আপনার সন্তানদের ও আপনাদের দায়িত্ব আমার। আমি আপনাদের জন্য কাজ করেছি, তাই আমি নিশ্চিত, ভোট আমাকেই আপনারা দেবেন।’’
[আরও পড়ুন: শীঘ্রই গ্রেপ্তার কেজরিওয়াল? আশঙ্কায় AAP, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে বাড়ছে নিরাপত্তা]
গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে নড়াইলে নিজের কেন্দ্রে পৌঁছেই প্রচারে নেমে পড়েন। কিন্তু দিন পাঁচেক পর থেকে তাঁর গলার স্বর বসে যায়, জ্বর হলেও ওষুধ খেয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। দু’দিন আগে নিউজিল্যান্ড সিরিজ শেষ করে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সেই দলের সদস্য সৌম্য সরকারকে এদিন দুপুরে দেখা গেল মাগুরা শহরে নৌকা প্রতীকের প্রচারপত্র বিলি করতে। মাগুরা-১ আসনের আওয়ামি লিগের (Awami League) প্রার্থী নিজের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের পক্ষে প্রচার চালাতে সৌম্য ছাড়াও অংশ নেন সাব্বির রহমান ও নাজমুল ইসলামের মতো জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।
প্রচারে নেমে সৌম্যর আবেদন, ‘‘সাকিব আল হাসান আমাদের ক্রিকেটের গৌরব। তিনি এখন নৌকার মাঝি। ভোটারদের অনুরোধ করছি তাঁরা যেন ৭ জানুয়ারি তাঁরা বিপুল ভোটে সাকিবকে বিজয়ী করে তোলে।’’ এর আগে প্রচারে ছিলেন সাকিবের দুই ক্রিকেট কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। মাশরফির মতোই জনসভায় প্রচারে নেমে সাকিবরাও সবাই ভোট বয়কটের বিপক্ষে প্রচার করছেন।