সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে ঘরে-বাইরে ক্রমশ চাপ বাড়ছে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারের উপর। ক্ষমতায় আশায় পাঁচ মাস হয়ে গেলেও এখনও ভোট নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছুই জানাতে পারেনি তারা। কখনও ২০২৫, কখনও আবার ২০২৬-এ ভোট হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। যা নিয়ে বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষোভ বাড়ছে। এবার ইউনুস জানালেন, ঐক্যবিহীন সংস্কার কিংবা সংস্কারবিহীন নির্বাচন সম্ভব নয়। সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একইসঙ্গে চলবে। প্রশ্ন উঠছে, সংস্কারের গোঁ ছেড়ে চাপের মুখে পিছু হঠলেন ইউনুস?
গত ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণের পরই রাষ্ট্র সংস্কারের উপর জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস। নির্বাচন নিয়ে বহুবার প্রশ্ন করা হলেও তিনি জানিয়েছেন, সংস্কার সম্পন্ন হলেই ভোট হবে। কিন্তু সেই সংস্কার কবে শেষ হবে তার কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা জানাতে পারেননি তিনি। এরপর ভোটের দায়িত্ব ঠেলে দেন নব গঠিত নির্বাচন কমিশনের উপর। আজ শুক্রবার ঢাকার এক অনুষ্ঠানে ফের নির্বাচন নিয়েই প্রশ্ন করা হয় ইউনুসকে। জবাবে ইউনুস বলেন, "নির্বাচনের দায়িত্ব কমিশনের, তারিখ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত নাগরিকদের সেখানে কিছু করার নেই। তাঁরা সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধশক্তির অব্যাহত চক্রান্ত আমাদের ঐক্য আরও মজবুত করেছে।"
এদিন, সংস্কারের মহাযজ্ঞে সবাইকে আনন্দের সঙ্গে যুক্ত থাকার আহ্বান জানান ইউনুস। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ রূপান্তরে পেছনে ফেরার সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশকে সব রকমের আদর্শ থেকে বিচ্যুত করে গভীর অন্ধকারে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা আবারও সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করব। এই সংস্কারের ঐক্যমত প্রয়োজন।" জানা গিয়েছে, 'ঐক্য, সংস্কার, নির্বাচন’ নিয়ে এক জাতীয় কর্মসূচি চলবে শনিবার পর্যন্ত। অন্তর্বর্তী সরকারের সাতজন উপদেষ্টা, ২০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজন এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা এখানে অংশ নিয়েছেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রকাশ হবে ঘোষণাপত্রও। তবে এই অনুষ্ঠানে আওয়ামি লিগের কোনও প্রতিনিধিদের আহ্বান জানানো হয়নি।
প্রসঙ্গত, দিন চারেক আগেই ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আটটি প্রকল্পে দুর্নীতির তথ্য চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে দুদক। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এটাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। হাসিনা একটা চোরতন্ত্র এখানে জারি করেছিলেন। এই চোরতন্ত্রে কারা কারা তাঁর সঙ্গে মহাচুরিতে জড়িত ছিলেন, এটা বাংলাদেশের মানুষ জানতে চান। এটা জানানো সরকারের একটা নৈতিক দায়িত্ব। উনি কী পরিমাণ চুরি করেছেন, সেটা অবশ্যই জানানো হবে। সরকারও এটার তদন্ত করছে।” ফলে প্রশ্ন উঠছে, নির্বাচন নয়, মুজিবকন্যাকে ‘শাস্তি’ দেওয়াই কি সব থেকে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ইউনুস সরকারের কাছে?
উল্লেখ্য, দ্রুত সাধারণ নির্বাচনের দাবি তুলছে বিএনপি, জাতীয় পার্টির মতো একাধিক দল। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য ভোটপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার গঠনের দাবি সরব হয় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামি লিগও। কিন্তু নির্বাচনের থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের উপরেই বেশি জোর দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস। তাঁর শাসনকালে অশান্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। চরমে হিন্দু নির্যাতন। হামলা হচ্ছে মন্দিরেও। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র নির্বাচিত সরকারই শান্তি ফেরাতে পারে বলে মনে করছে সবমহল। কিন্তু গদির লোভে সংস্কারের দোহাই দিয়ে ইউনুস ভোট প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে চাইছেন বলেও অভিযোগ উঠছে।