সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চরম অরাজক পরিস্থিতি বাংলাদেশে। টাঙ্গাইলে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ম্যুরাল। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই এহেন হামলা অব্যাহত গোটা দেশে। হিংসার হাত থেকে রক্ষা পায়নি মুজিবের স্মৃতি বিজড়িত ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িও। দিকে দিকে ভাঙচুর করা হয়েছে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের মূর্তি, স্মারক। গত কয়েকদিনে 'নতুন' বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে মৌলবাদীদের চারণক্ষেত্রে।
জানা গিয়েছে, টাঙ্গাইলের শহিদ স্মৃতি পৌর উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে ম্যুরালের মাঝে ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। তার দুপাশে জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতি। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ কয়েকজন এক্সক্যাভেটর ব্যবহার করে ম্যুরালটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর গত ৫ অগাস্টও হামলা হয় ওই ম্যুরালে। তাতে দুপাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবার ম্যুরালটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে এই ঘটনার নিয়ে টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি তানভীর আহাম্মেদের বক্তব্য, "আমাদের কাছে এই ঘটনার কোনও তথ্য নেই। তাই এবিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছি না।”
কিন্তু এই ঘটনায় ফের একবার স্পষ্ট হয়ে গেল যে কীভাবে বাংলাদেশে মুজিবের স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। গতকালই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেছিলেন, তাঁরা বঙ্গবন্ধুর আমলের সংবিধানকে কবরস্থ করে দেবেন। এর আগে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরই শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদিন-সহ ৮টি জাতীয় দিবস বাতিল করে দেয়। হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামাঙ্কিত হাসপাতালগুলোর নামও বদলে দেওয়া হয়। বঙ্গভবন অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি ভবন থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয় মুজিবের ছবি। বাংলাদেশের ফিল্ম সিটি থেকেও বাদ দেওয়া হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নাম। আগামী বছর থেকে আর পাঠ্যবইয়েও থাকছে না ভাষা আন্দোলন নিয়ে মুজিবের রচনা ‘বায়ান্নর দিনগুলো’। পাঠ্যক্রমে যুক্ত হবে আরবি ভাষা। এমনকী বঙ্গবন্ধুর বদলে ছাত্র আন্দোলনের ছবি দিয়ে নতুন নোট ছাপা শুরু হয়েছে। ফলে সবদিকে মুজিব ও হাসিনার স্মৃতি মুছে ফেলতে তৎপর ইউনুস সরকার।
এর মাঝেই এভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। এমনকী তাঁদের থামানো বা শাস্তির কোনও ব্যবস্থাই করছে না ইউনুস সরকার। তবে শুধু মুজিব বা হাসিনাই নয়। বিভিন্ন জাতীয় স্মারক, ঐতিহাসিক ভাস্কর্যও নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম গুলশন হামলার স্মৃতিসৌধ। যেখানে ভাঙচুরের পর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরির পোস্টার লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিশ্লেষকদের মতে, সম্প্রতি ইউনুস সরকার আনসারুল্লা বাংলা টিমের প্রধান জসীমউদ্দিন রহমানির মতো জঙ্গিনেতাকে মুক্তি দিয়েছে। মাথাচারা দিয়ে উঠছে বিভিন্ন পাকপন্থী সশস্ত্র সংগঠন। যাদের এক সময়ে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন হাসিনা।