সুকুমার সরকার, ঢাকা: শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর গদি হারানোর পর থেকেই বিপর্যস্ত আওয়ামি লিগ। কয়েকদিন আগেই তাদের শাখা সংগঠন ছাত্র লিগকে নিষিদ্ধ করেছে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। তার পরই সোমবার হাই কোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। দাবি, নিষিদ্ধ করতে হবে আওয়ামি-সহ ১১টি দলকে। শুরু হয় শোরগোল। অবশেষে, আজ মঙ্গলবার সেই রিট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, হাই কোর্টে আওয়ামি লিগ নিয়ে রিট দাখিল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম-সহ ৩ জন। হাসিনার দল ছাড়াও জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, তরিকত ফেডারেশন, কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ, এলডিপি-সহ ১১টি দলকে কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অনুমতি না দিতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ চেয়ে রিট করা হয়। এনিয়ে আইনসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছেও আর্জিও জানানো হয়। কিন্তু এখন খবর একদিনের মধ্যেই সেই রিট প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সারজিস-সহ অন্যান্য নেতারা। বিশ্লেষকদের মতে, ১১টি রাজনৈতিক দলের উপর নিষেধাজ্ঞার দাবি স্বৈরাচারের লক্ষণ। হাসিনাকে যে দোষে দোষী করা হয়েছে আনদলনের নামে সেই একই কাজ চলছে। ফলে সমন্বয়কদের প্রবল সমালোচনার মুখেও পড়তে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট গণবিক্ষোভে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তাঁর দেশ ছাড়ার পর থেকে আওয়ামি লিগের নেত-কর্মীরা হামলা ও অত্যাচারের শিকার হন। শুধুমাত্র হাসিনাপন্থী হওয়ার কারণে বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে। ফলে বাংলাদেশে কার্যত কোণঠাসা হয়ে গিয়েছে হাসিনার দল। এর মাঝেই গত ২৩ অক্টোবর ছাত্র লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংস্কারের দাবি ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল হয় বাংলাদেশ। গত জুলাই মাসে এই আন্দোলন হিংসাত্মক আকার ধারণ করে। ঝরে বহু রক্ত। বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলাকালে ছাত্র লিগের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ তুলেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা। তাই আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে ইউনুস সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি। সেই মতোই ছাত্র লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি বাংলাদেশের এই নয়া সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কোনও নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মীরা সরকারি চাকরি পাবেন না। এর ফলে ছাত্র লিগের সদস্যরাও এবার থেকে আর সরকারি চাকরিতে আবেদন করার সুযোগ পাবেন না।