সুকুমার সরকার, ঢাকা: বিশাল অরাজনৈতিক সংগঠন করায়ত্ত করতে তাঁর নিজ হাতে গড়া মাদ্রাসার মধ্যেই ধর্মগুরুকে হত্যার অভিযোগ উঠল বাংলাদেশে (Bangladesh)। হত্যাকাণ্ডের দু’মাস পর এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ জামাতের বিরুদ্ধে। শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ধর্মগুরু আল্লামা শাহ আহমেদ শফির শ্যালক সাংবাদিক বৈঠকের এই অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি, শফি স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন, তাই জামাতের হাতে খুন হতে হয়েছে তাঁকে। এই হত্যার বিচার চেয়েছেন তাঁর পরিবার।
২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি কওমি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে অরাজনৈতিক সংগঠন ‘হেফাজতে ইসলাম’ গড়ে তুলেছিলেন হাটহাজারি মাদ্রাসার তৎকালীন মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমেদ শফি। আর মহাসচিব করা হয় হাটহাজারি মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরীকে। ১৩ দফা দাবি দিয়ে ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লং মার্চ এবং পরবর্তীতে রাজধানী ঢাকার শাপলা চত্বরে বিশাল সমাবেশ করে দেশে-বিদেশে আলোচিত হয়ে ওঠে সংগঠনটি। এরপর হেফাজতে ইসলাম সংগঠনটি নানাভাবে চিড় ধরছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গুঞ্জন চলছিলই।
[আরও পড়ুন: ‘সাইবার বুলিং’-এর বিরুদ্ধে লড়াইকে কুর্ণিশ, আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পেল বাংলাদেশের কিশোর]
তারই মধ্যে গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাটহাজারি মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্রকে উসকে দিয়ে জামাত (Jamat-E-Islami) শিবির মাদ্রাসাটিকে প্রথমে অবরুদ্ধ করে রাখে। শফির শ্যালকের অভিযোগ, জোর করে ধর্মগুরুর ঘরে ঢুকে তাঁকে মাদ্রাসার পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথম অক্সিজেন মাস্ক দেওয়া হয়। তবে পরে জামাতের লোকজনই সেই মাস্ক খুলে শফিকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশে নিকেশ রোহিঙ্গা ইয়াবা পাচারকারী, উদ্ধার ২ লক্ষ ট্যাবলেট]
এদিকে, শফির শ্যালকের এই সাংবাদিক সম্মেলনকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়েছে আল্লামা শফি সমর্থকদের একাংশ, অর্থাৎ হেফাজতে ইসলামেরই অপর একটি পক্ষ। শনিবারের সম্মেলনের পালটায় তাই রবিবারও এক প্রতিনিধি সম্মেলনের আয়োজন করেছেন হাটহাজারির দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম। এই সম্মেলনে থাকবেন ‘হেফাজতে ইসলাম’ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। এখানে সংগঠনের নতুন মহাসচিব ও অন্যান্য পদে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পার। কিন্তু অপরপক্ষের মতে, তাঁদের বাদ দিয়ে চোরাপথে নতুন কমিটি গঠন করা হলে, তা মেনে নেওয়া হবে না। শনি ও রবিবারের পরপর দুই সম্মেলনের পর হেফাজতে ইসলাম চূড়ান্তভাবে ভাঙনের মুখে পড়ল বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ধর্মগুরু শফি হত্যাকাণ্ডে জামাত যোগের মতো বিস্ফোরক অভিযোগ উঠে আসায় তা নিয়েই আপাতত চলছে আলোচনা।