shono
Advertisement

পদ্মা সেতুতে বিপ্লব বাংলাদেশে, প্রতিদিন টোল আদায়ে রোজগার ২ কোটি টাকা

ছয় কিলোমিটার চওড়া উত্তাল পদ্মা পেরতে এখন সময় লাগে ১০-১৫ মিনিট।
Posted: 09:11 AM Jan 14, 2023Updated: 09:12 AM Jan 14, 2023

কিংশুক প্রামাণিক: পদ্মা সেতু থেকে একদিনে দু’কোটি টাকার বেশি টোল আদায় হয়। জুনে উদ্বোধন হওয়ার পর গত ছ’মাসে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা টোল আদায় হয়েছে। প্রতিদিন কুড়ি হাজারের বেশি যান চলাচল করে সেতু দিয়ে। বাংলাদেশ সরকারের আশা, ৩০ হাজার ১৯৩.৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই অভিনব সেতুতে আগামী দিনে তিরিশ হাজারের বেশি যান চলাচল করবে। খরচের অনেকাংশ উঠে আসবে টোল থেকে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ নিজের টাকায় এই দৈত‌্যাকার সেতুটি বানিয়েছে উত্তাল পদ্মাকে বাগে এনে। তার সুফল তারা পেতে চলেছে।

Advertisement

টোলের মূল্য আমাদের দেশের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। চার চাকার মোটর গাড়িকে টোল দিতে হয় ৭৫০ টাকা। মাইক্রোবাসের টোল ১৩০০। মাঝারি বাস ২০০০। ট্রাক ২৮০০। ট্রেলার ৬০০০। বাইক নিয়ে গেলে এখানে টোল লাগে ১০০ টাকা। দাম প্রচুর হলেও সময় বাঁচাতে সবাই সেতু ব্যবহার করেন। বাংলাদেশের সেতু সড়ক মন্ত্রকটি সামলান প্রবীণ নেতা ওবায়াদুল কাদের। তিনি আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদকও বটে। তাঁর মন্ত্রকই বাংলাদেশের মেট্রো রেল, যাবতীয় এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করছে। আত্মবিশ্বাসী এই পোড়খাওয়া নেতা মনে করেন, ১৪ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকায় যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী ফ্যাক্টর তঁাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে, তা রুখে দিতে পারে পদ্মা সেতুর সাফল্য। বাংলাদেশের (Bangladesh) মানুষ বিশ্বাস করতে পারত না, উত্তাল পদ্মাকে সেতু দিয়ে বেঁধে ফেলা যায়।

[আরও পড়ুন: হঠাৎ পিছিয়ে গেল রাহুল-আথিয়ার বিয়ে, প্রকাশ্যে আমন্ত্রিতদের তালিকাও]

সত্য়ি কথা বলতে কী, বাংলাদেশের অর্থনীতি বদলে দিয়েছে পদ্মা সেতু। উত্তাল পদ্মা পেরতে ভরসা ছিল ভেসেল। সময় লাগত দেড় থেকে দু’ঘণ্টা। লক্ষ লক্ষ মানুষ এইভাবে যাতায়াত করতে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু একটা সেতু একটা জাতিকে কতটা ‘স্মার্ট’ করে দিয়েছে তা নিজের চোখে দেখে এলাম। এর জন্য বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। তিনি জেদ করে এই বিশাল কাজটা করে দিলেন। তাঁর জন্যই অাজ ছয় কিলোমিটার চওড়া পদ্মা পেরতে এখন সময় লাগে ১০-১৫ মিনিট। বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাছান মামুদ বলছিলেন, “অাগে যখন অামরা ওপারে টুঙ্গিপাড়া যেতাম, তখন এ পারে মাওয়া ঘাট থেকে ইলিশ কিনে উঠতাম। ভেসেলে গরম খিচুড়ি অার ইলিশ ভাজা খেতে খেতে পার হতাম পদ্মা (Padma River)। অাজ নতুন সেতু হয়তো বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, কিন্তু হারিয়ে গিয়েছে সেই সব অনন্য অভিজ্ঞতা।”

পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর মন চাইছিল, কবে যাই। অবশেষে সেই সুযোগ এসে গেল। সেতুতে ওঠার অাগে গেলাম মাওয়া বাজারে। ফঁাকা, কেউ নেই। বোঝা গেল উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছে এই বাজারের জমজমাট পরিবেশটা। এখন অার কেউ নদী পেরতে ভেসেলে ওঠে না। ভেসেল ব্যবসা বন্ধের মুখে।
এই সেতু হওয়ার ফলে ঢাকার সঙ্গে বাংলাদেশের পশ্চিমাংশের জেলাগুলির যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটে গিয়েছে। যশোর থেকে দু’ঘণ্টায় সবাই চলে অাসছে ঢাকা। বরিশাল থেকে জাহাজের মতো ভেসেল ছাড়ত সন্ধ্যাবেলায়। চার-পঁাচ তলায় শয়ে শয়ে যাত্রী। সেটি ঢাকা পেঁৗছত পরদিন সকালে। এখন চার ঘণ্টায় বরিশালের মানুষ ঢাকায় অাসছেন। সেতুর প্রভাব পড়েছে বিমান পরিষেবায়।

[আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহে জাকির হোসেনকে তলব আয়কর দপ্তরের, ‘সব হিসাব দেব’, আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল বিধায়ক]

অামাদের রাজ্যে অভ্যন্তরীণ বিমান চলে কলকাতা ও বাগডোগরার মধ্যে। কিন্তু বাংলাদেশে ঢাকা ছাড়াও দশটি বিমানবন্দর। সিলেট, সৈয়দপুর, রাজশাহী, যশোর, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার থেকে দিনে রাতে প্রচুর ছোট বিমান চলে ঢাকার মধ্যে। সব বিমান থাকে যাত্রী ঠাসা। পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে যশোর ও বরিশালের বিমান পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। যশোর থেকে প্রায় ১৪টি উড়ান ছিল। এখন নেমেছে চারে। বরিশাল থেকে চারটে চলত। এখন এক। এক পদ্মা সেতু সড়ক পথে কাছে এনে দিয়েছে খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, দর্শনাকেও। ডবল ডেকার সেতুতে রয়েছে রেলপথও। ট্রেন লাইনের কাজটি এখনও শেষ হয়নি। এবছরই শেষ হবে। তখন হয়তো চার-পাঁচ ঘণ্টায় কলকাতা থেকে ঢাকায় পৌঁছনো যাবে। হাতের মুঠোয় এসে যাবে পদ্মাপার।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement