সুকুমার সরকার, ঢাকা: এবার বাংলাদেশে নির্ভয়া কাণ্ডের ছায়া। নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে চলন্ত বাস থেকে ঝাঁপ দিলেন তরুণী। গত ১৫ মে এই ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি জানা যায় বেশ কয়েকদিন পরে। কারণ, বাস থেকে লাফিয়ে পড়ায় গুরুতর আহত হয়ে এতদিন অজ্ঞান ছিলেন নির্যাতিতা। জ্ঞান ফিরে পেতেই ভয়াবহ ঘটনার কথা জানান তিনি।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ১৪ বছরের ছাত্রকে ধর্ষণ মাদ্রাসা শিক্ষকের, অভিযুক্তকে গণপিটুনি]
জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে বন্দর শহর চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায়। নির্যাতিতা তরুণী পেশায় একজন পোশাককর্মী। তিনি জানান, বাসের চালক-হেল্পার তাঁকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হয়েছিল। শেষে নিজেকে বাঁচাতে চলন্ত বাস থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। অভিযোগ মেলার পর, বাসটির চালক ও হেল্পারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযুক্ত বাসচালক আনোয়ার হোসেন টিপু (২২) চন্দনাইশ জেলার দোহাজারী দেওয়ানহাটে বাড়ি। হেল্পার জনি দাশের (২০) বাড়ি পটিয়া থানাধীন ডেংগাপাড়া কেলিশহর এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানায়, নির্যাতিতা চান্দগাঁও থানাধীন সিঅ্যান্ডবি এলাকার সানমুন গ্রুপের গোল্ডেন হাইস নামের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। ১৫ মে রাত ৯টায় কারখানা ছুটির পর কোম্পানির বাসে তিনি বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। বাসে তারা ১০-১২ জন কর্মী ছিলেন। অন্যরা বহদ্দারহাট আসতেই নিজ নিজ গন্তব্যে নেমে যান। তারপর নির্যাতিতা একই ছিলেন। তাঁকে একা পেয়ে বাসের চালক ও হেলপার ধর্ষণের চেষ্টা করে। তাদের কবল থেকে রক্ষা পেতে ওই তরুণী চলন্ত বাস থেকে রাস্তায় লাফ দেন। এতে তিনি গুরুতর জখম হন। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ তাঁকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করে। এক সপ্তাহ পর জ্ঞান ফিরলে তাকে বাড়িতে আনা হয়। বুধবার পুলিশকে ঘটনার বিস্তারিত খুলে বলেন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল হক জানান, তারা তদন্তে নেমে ধর্ষণ চেষ্টায় জড়িত বাসচালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর নৃশংস ঘটনার সাক্ষী হয় ভারত। রাজধানী দিল্লির বুকে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ‘নির্ভয়া’ (Nirbhaya)। অভিযোগ, ধর্ষণের পর ২৩ বছরের ওই তরুণীর যৌনাঙ্গে রড ঢুকিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। এরপর তেরো দিন বাঁচার জন্য আপ্রাণ লড়াই করে শেষে মৃত্যুর কাছে হার মেনেছিলেন নির্যাতিতা। তাঁর মৃত্যুর পরই অবশ্য গোটা দেশ গর্জে উঠেছিল। রাজধানী সাক্ষী হয়েছিল ঐতিহাসিক বিক্ষোভের। বাংলাদেশের ঘটনাটিও সেই ভয়ংকর কাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।