shono
Advertisement

সাইবার প্রতারণা রুখতে গিয়ে উলটো বিপদ! গ্রাহকের অজান্তেই ফ্রিজ হচ্ছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট

ব্যাপারটা কী?
Posted: 04:43 PM Mar 06, 2024Updated: 04:43 PM Mar 06, 2024

সৌরভ মাজি, বর্ধমান: অনলাইন ও সাইবার প্রতারণা রুখতে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট পোর্টাল রয়েছে। এই পোর্টালের অভিযোগ জানিয়ে বহু প্রতারিত সুবিধা পেয়েছেন। তবে ‘সাইড এফেক্টে’ সঙ্কটে পড়েছেন অনেকে। গ্রাহকের অজান্তেই ফ্রিজ হয়ে যাচ্ছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। প্রবল সমস্যায় পড়ছেন গ্রাহকরা।

Advertisement

এই ফ্রিজ হয়ে যাওয়া অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের তালিকায় স্কুল শিক্ষক থেকে ব্যবসায়ী, ফুটপাথে সবজি বা ফল বিক্রেতা থেকে পুলিশকর্মীর পরিবারের সদস্যও রয়েছেন। কারও ১০ মাস, কারও এক বছরেরও বেশি সময় অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়ে রয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলারই বহু মানুষ অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়ে যাওয়ায় সঙ্কটে পড়েছেন। কাটোয়ার নারায়ণপুর গ্রামের দেবকুমার মণ্ডল। কাটোয়ারই সুদপুর হাইস্কুলের শিক্ষক তিনি। গত বছর ১০ জুলাই থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে থাকা তাঁর স্যালারি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়ে গিয়েছে। সেই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছে। কিন্তু কোনও টাকা তিনি সেখান থেকে তুলতে পারছেন না।

এক গ্রাহকের কথায়, “আমার অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে স্যালারি ঢুকছে। কিন্তু আমি কোনও টাকা তুলতে পারছি না। ফলে দৈনন্দিন খরচ, চিকিৎসা খরচ চালাতে গিয়ে মহাসঙ্কটে পড়তে হয়েছে।” একইরকম সমস্যায় পড়েছেন কাটোয়ার দাঁইহাটের ব্যবসায়ী অভিরাম মোদক ও তাঁর স্ত্রী অনু সরকার। প্রায় একবছর ধরে বেসরকারি ব্যাঙ্কে থাকা বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টটি বন্ধ হয়ে রয়েছে। অভিরাম বলেন, “আচমকা ব্যাঙ্ক থেকে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হওয়ার কথা জানানো হয়। গুজরাটের সাইবার সেলে অনলাইন প্রতারণার একটা অভিযোগ হয়েছে। তার জন্য না কি এমনটা করা হয়েছে।”

অনু সরকার বলেন, “আমাদের অ্যাকাউন্টে না কি কেউ ১৫২ টাকা পাঠিয়েছে। আমরা জানিও না কে পাঠিয়েছে। এখন আমরা টাকা তুলতে পারছি না। প্রায় ১ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা আছে ওই অ্যাকাউন্টে। ব্যবসা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ব্যাঙ্ক কোনও সহযোগিতা করছে না অ্যাকাউন্ট স্বাভাবিক করতে।” আর গুজরাটের কোন থানায় কী অভিযোগ হয়েছে তা নিয়ে আইনি লড়াই বা করব কীভাবে? প্রশ্ন তুলেছেন অনু। তাঁদের পরিচিত আরও অন্তত ৫ জনের অ্যাকাউন্টও একইভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে খবর। উদাহরন রয়েছে আরও প্রচুর।

[আরও পড়ুন: ‘তোলাবাজকে একটি ভোটও নয়’, মোদির সভার আগেই শান্তনুর বিরুদ্ধে পোস্টারে ছয়লাপ বনগাঁ]

রাজ্যের সাইবার ক্রাইম পুলিশের এক আধিকারিক জানান, সাইবার বা অনলাইন প্রতারণার অভিযোগ হলে কেন্দ্রীয় ওই পোর্টালে নথিভু্ক্ত হয়। আবার কেউ সরাসরি সেখানে অভিযোগ জানাতেও পারেন। ওই পোর্টাল চিহ্নিত করে কোনও ইউপিআই বা ওয়ালেটে সেই টাকা ট্রান্সফার হয়েছে। সেগুলি বন্ধ করা‌ হয়। ওই টাকা যত ধাপ পর্যন্ত লেনদেন হয় সব অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। সহজভাবে বললে, রাম প্রতারক। সে শ্যামের অ্যাকাউন্টে লেনদেন করেছে (কিছু কিনতে)। শ্যামের অ্যাকাউন্ট থেকে আবার হয়তো যদুর অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে। এইভাবে যতদূর পর্যন্ত প্রতারণার অর্থ লেনদেন হয় সব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এইসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক বা জেলা পুলিশেরও হাত-পা বাঁধা। তারা কিছু করতে পারবে না। যেখানে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সেই থানার মাধ্যমে আদালত থেকে ক্লিনচিট না পেলে সমস্যা মেটার নয়।

জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং বলেন, “আমাদের এখান থেকে কিছু হয়েছে বলে জানা নেই। তবে বাইরের কোনও রাজ্যের সাইবার শাখা থেকে হয়ে থাকলে সেখানে আমাদের কিছু করার থাকে না।” জেলা পুলিশের এক আধিকারক অবশ্য জানান, জেলায় অনেকেরই এই ধরণের সমস্যা হয়েছে। সঠিকভাবে না জানার জন্যই এটা হয়েছে। তাঁর কথায়, “যাদের এই ধরণের সমস্যা হয়েছে, তারা আমাদের সাইবার শাখায় যোগাযোগ করলে আমরা নির্দিষ্ট সাইবার থানার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারি। সমস্যা মেটালে সংশ্লিষ্ট সেই থানাই মেটাতে পারবে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement