অভিরূপ দাস: “তোর মা-বাবাও এভাবেই মরবে।” এমনই ‘অভিশাপ’-এর সুর মৃত রোগীর বাড়ির আত্মীয়দের। তাঁদের মুখে এহেন কুৎসিত ভাষা শুনে বিস্মিত বর্ধমান (Burdwan) মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কঙ্কন দাস। তাঁর খেদোক্তি, “ডাক্তারি পড়ে মস্ত ভুল করেছি।” জনসেবার কাজে ব্রতী হয়ে এমনই অভিশাপ কুড়োতে হলে এছাড়া আর কী-ই বা প্রতিক্রিয়া হতে পারে?
করোনা (Coronavirus) আবহে জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন চিকিৎসকরা (Doctors)। অন্যের প্রাণ বাঁচিয়ে নিজেদের মৃত্যুকে ডেকে নিয়েছেন তাঁদের অনেকেই। তবু চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় ঘটেই চলেছে। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের শক্তিপুরের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে রোগীর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের চিকিৎসককে অশ্রাব্য গালিগালাজের অভিযোগ রোগীর পরিবারের বিরুদ্ধে। এবার ঘটনাস্থল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ। অপমানিত চিকিৎসক কঙ্কন দাসের খেদোক্তি, ”আজ বুঝতে পারছি, ডাক্তাররা কত অসহায়! কত করুণ তাঁদের অবস্থা!”
[আরও পড়ুন: অশালীন ছবি ফাঁস কাণ্ডে ধৃত ফটোগ্রাফারের সঙ্গে এক ফ্রেমে! কী সাফাই দিলেন Agnimitra Paul?]
এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখে পড়ে সকলের কাছে তাঁর আবেদন, ”দয়া করে আপনজন কাউকে ডাক্তারি পড়াবেন না, চিকিৎসকও বানাবেন না। ডাক্তারিটা আর যাই হোক, আমাদের মত দেশে একটা সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের পেশা হতে পারে না।” কোন ঘটনায় এমন উপলব্ধি হল চিকিৎসকের? সোমবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সারি এবং কোভিড (COVID-19) পজিটিভ ওয়ার্ডে কাজ করছিলেন চিকিৎসক কঙ্কন দাস। খবর আসে, এক রোগীর অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্ডে তাঁকে দেখতে যান চিকিৎসক। বিপি, সিবিজি, হৃদস্পন্দন মাপেন। চিকিৎসকের কথায়, ”রোগীর বাড়ির লোককে বুঝিয়ে বলি যে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ছাড়া রোগীকে বাঁচানো যাবে না। নিয়মমাফিক একটা রিস্ক কনসেন্টও রোগীর পরিবারকে দিয়ে সই করানো হয়।”
[আরও পড়ুন: ‘দাবাং’ মেজাজে ইনসাস রাইফেল হাতে নিয়ে ছবি, তুমুল সমালোচিত বর্ধমান স্কুলের শিক্ষক]
COVID CCU রেফার লিখে ওয়ার্ডের বয়কে চিকিৎসক নির্দেশ দেন, তাড়াতাড়ি ক্রিটিক্যাল কেয়ারে রোগীকে ভরতি করার জন্য। ওয়ার্ড বয় রেফার কাগজটা নিয়ে ফিরতে না ফিরতেই রোগী মারা যান। এরপর আচমকাই চিকিৎসকের উপর চড়াও হয় রোগীর আত্মীয়রা। শুরু হয় অকথ্য ভাষায় গালাগালি। ওয়ার্ডের বাইরের কিছু লোক ওয়ার্ডের দরজা লাথি মেরে ভাঙার চেষ্টা করতে থাকে। কোনওরকমে পুলিশ তাদের প্রতিহত করে। খবর শুনেই ঘটনাস্থলে আসেন সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত। রোগীর বাড়ির লোককে বুঝিয়ে শান্ত করেন তিনি। চিকিৎসকের কথায়, ”রোগীর বাড়ির লোকগুলো গালাগাল করে ডেডবডি নিয়ে বাড়ি চলে গেলো, কিন্তু আমার?” গত প্রায় ১ বছর ২ মাস ধরে এই করোনা ওয়ার্ডে কর্মরত চিকিৎসক কংকন দাস। রোগী দেখতে গিয়ে করোনা পজিটিভও হয়েছিলেন। সোমবারের ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। পেশার প্রতি তিক্ততা তৈরি হচ্ছে তাঁর।