সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সিরিয়া থেকে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার করেছেন গদিচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ (Bashar al-Assad)! ভারতীয় মুদ্রায় অঙ্কটা প্রায় ২ হাজার ৮২ কোটি টাকা। এমনই তথ্য প্রকাশ করেছে ফিনান্সিয়াল টাইমস। কয়েকদিন আগেই সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের কাছে ক্ষমতা হারিয়েছেন আসাদ। এই মুহূর্তে 'বন্ধু' রাশিয়ার আশ্রয়েই রয়েছেন তিনি। এর মাঝেই প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা গিয়েছে, এই বিপুল অর্থ রাশিয়াতেই উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন আসাদ। ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দুবার সিরিয়া থেকে রাশিয়ায় টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দুই টন ১০০ মার্কিন ডলারের বিল ও ৫০০ ইউরোর নোট রয়েছে। এই নোটগুলো মস্কোর ভনুকোভো বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে এই অর্থ বিভিন্ন রুশ ব্যাঙ্কে জমা করা হয়েছিল। জানা গিয়েছে, এই দুবছরে আসাদের আত্মীয়রা গোপনে রাশিয়ায় নানা সম্পদ কিনেছিলেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে দেশের অর্থ বাইরে পাচার করেছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট।
প্রসঙ্গত, ২০০০ সালে বাবা হাফেজ আল-আসাদের মৃত্যু হলে সিরিয়ার মসনদে বসেন বাশার আল আসাদ। কিন্তু জলঘোলা হতে শুরু করে ২০১১ সালে। আরব বসন্তের হাওয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠে মরুপ্রদেশটি। আকাশ বাতাস কেঁপে ওঠে একনায়ক হঠাও, গণতন্ত্র ফেরাও স্লোগানে। শুরু হয়ে যায় গৃহযুদ্ধ। আসাদকে গদিচ্যুত করতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিদ্রোহীদের যৌথমঞ্চ ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস’ (এসডিএফ)। সেই থেকেই আসাদের বিরুদ্ধে দেশের সম্পদ লুট করার অভিযোগ উঠছে। অনেক বিরোধীই তাঁর দিকে আঙুল তুলে বলেছিলেন যে, যুদ্ধে অর্থায়নের জন্য আসাদ সরকার নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
ফিনান্সিয়াল টাইমসের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই আসাদকে তোপ দেগে মার্কিন নিয়ার ইস্টার্ন অ্যাফেয়ার্সের প্রাক্তন সহকারী বিদেশসচিব ডেভিড শেঙ্কার বলেন, "টাকার এই লেনদেনে আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছু নেই। ভবিষ্যতে আসাদ ও তাঁর সহযোগীদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য এই অর্থ বিদেশে সুরক্ষিতভাবে রাখা হচ্ছিল।" এছাড়া বিভিন্ন একাধিক মার্কিন আধিকারিকদের দাবি, আন্তর্জাতিক মাদক পাচার এবং জ্বালানী চোরাচালানের মাধ্যমে বিপুল টাকা রোজগার করেছেন আসাদ ও তাঁর সঙ্গীরা।
বলে রাখা ভালো, এই গৃহযুদ্ধে আসাদ সরকারের ঢাল হয়েছিল রাশিয়া। কিন্তু গত ২৭ নভেম্বর এই লড়াই তীব্র আকার ধারণ করে। এবারে বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেয় আল কায়দার শাখা সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। আসাদ বাহিনীকে হঠিয়ে আলেপ্পো, হোমস, দারার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে ৮ ডিসেম্বর রাজধানী দামাস্কাসে পৌঁছয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী। পালটা মার দিলেও সেখানে আসাদের সেনা নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যান আসাদ।